জেলে বন্দি নেতাদের ভোটে দাঁড়াতে না দেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গত কাল যে রায় দিয়েছে, দেশের প্রায় সব ক’টি রাজনৈতিক দলই তার বিরুদ্ধে। তা সে সিপিএম হোক বা সমাজবাদী পার্টি কিংবা বহুজন সমাজ পার্টি। বিজেপি বা কংগ্রেসের মতো জাতীয় স্তরের দুই প্রধান দল অবশ্য এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনও মত দেয়নি। তবে ঘরোয়া আলোচনায় এই দু’দলের নেতারাও বলছেন, আদালতের এই নির্দেশের অপব্যবহারের বিস্তর সুযোগ থাকছে। গণতন্ত্রের পক্ষে যা বিপজ্জনক। এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে আবেদন জানাতে পারে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক।
তবে কংগ্রেস বা তার সরকার একার কাঁধে রায়-বিরোধিতার দায় নিতে নারাজ। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল আজ বলেছেন, “পর-পর দু’দিন শীর্ষ আদালত যে দু’টি রায় দিয়েছে সরকার তা বিবেচনা করে দেখছে। এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে
সরকার।” আইন মন্ত্রক সূত্রেও বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে শীঘ্রই একটি সর্বদল বৈঠক ডাকা হতে পারে। ওই বৈঠকে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ করিয়ে তার পরই সর্বোচ্চ আদালতের সংবিধানিক বেঞ্চের দ্বারস্থ হবে সরকার।
সরকার কেন নিজেই সরাসরি আদালতে যাচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা জানান, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে এই দুই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কংগ্রেস একা তার বিরোধিতা করলে মানুষ বিষয়টির গভীরে না গিয়ে কংগ্রেসের ওপর অসন্তুষ্ট হতে পারে। তা ছাড়া, আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে তাতে সব দলই বিপদে পড়তে পারে। সেই কারণেই কংগ্রেস সর্বসম্মতির মাধ্যমে পদক্ষেপ করতে চাইছে।
একটি জনস্বার্থ মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট পরশু জানিয়েছে, নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আবেদন জানানোর মাধ্যমে কোনও সংসদ বা বিধায়ক তাঁর আইনসভার সদস্যপদ বাঁচাতে পারবেন না। বরং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার দিনই আইনসভার সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। এর পর গত কাল অন্য একটি মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, জেল থেকে ভোটে লড়া যাবে না। যেহেতু জেলে বন্দি বা পুলিশি হেফাজতে থাকা ব্যক্তি ভোট দিতে পারেন না, তাই তাঁর ভোটে লড়ার অধিকারও নেই।
এই দু’টি রায় নিয়েই অসন্তোষ রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। তুলনায় দ্বিতীয়টি নিয়ে ক্ষোভ বেশি রাজনীতিকদের। গত কালই তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশের বিরোধিতা করেছিলেন। আজ সিপিএম সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের এই রায় কার্যকর হলে সাধারণ মানুষ তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার হারাবেন। কারণ, কোনও ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার ঘটনা আকছার ঘটছে। মায়াবতী, মুলায়ম সিংহের দল তো বটেই, এ ব্যাপারে কারাটের সঙ্গে একমত কংগ্রেস-বিজেপি-ও।
|