জেল থেকে ভোটে লড়া বন্ধের নির্দেশ
মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধান। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে ফের একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। আজ এক মামলায় রায় দিতে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিল, জেল থেকে আর ভোটে লড়া যাবে না।
এ ব্যাপারে ২০০৪ সালে পটনা হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা আজ জনপ্রতিনিধি আইনের ৪, ৫ ও ৬২(৫) ধারার উল্লেখ করে বলেন, “কোনও ব্যক্তির ভোটাধিকার হল বিধিবদ্ধ অধিকার। আইন সেই অধিকার দেয়, আবার তা কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতাও আইনেরই রয়েছে। এ সংক্রান্ত সংবিধানের ধারা ও তার আওতায় আইন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আদালতের তাই বিন্দুমাত্র দ্বিধা হচ্ছে না যে, জেলে বন্দি অপরাধী বা পুলিশ হেফাজতে থাকা কোনও বন্দির যে হেতু ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, তাই তাঁর ভোটে লড়ার অধিকারও থাকতে পারে না।”
গত কালই একটি জনস্বার্থ মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, উচ্চ আদালতে মামলা চলছে, এই যুক্তিতে নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত কোনও জনপ্রতিনিধি আর সংসদ বা বিধানসভায় সদস্য পদ টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। দোষী সাব্যস্ত হলেই সাংসদ বা বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে যাবে। আদালতের সেই রায় নিয়ে এমনিতেই সাত-পাঁচ আশঙ্কার অঙ্ক কষা চলছিল। সর্বোচ্চ আদালতের আজকের রায়ে রীতিমতো কেঁপে উঠল রাজনীতির অলিন্দ। তবে এখানেই শেষ নয়। আজ ইলাহাবাদ হাইকোর্টও একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট
ভোটাধিকার হল বিধিবদ্ধ অধিকার। আইন সেই অধিকার দেয়, আবার তা কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা আইনেরই রয়েছে।...জেলে বন্দি অপরাধী বা পুলিশ হেফাজতে থাকা কোনও বন্দির যে হেতু ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, সে হেতু তাঁর ভোটে লড়ার অধিকারও থাকতে পারে না।
এখন যাঁরা জেলে
জগন্মোহন রেড্ডি মধু কোড়া মোক্তার আনসারি

সাংসদ,
ওয়াইএসআর কংগ্রেস।

নির্দল সাংসদ।

উত্তরপ্রদেশের বিধায়ক,
কউমি একতা দল।
জেল থেকে লড়েছেন
কল্পনাথ রাই জর্জ ফার্নান্ডেজ
কংগ্রেস। ’৯৬ সালে তিহাড় জেলে বন্দি
থাকাকালীন ভোটে জয়।
জনতা পার্টি। ’৭৬ সালে জেলে যান।
পরের বছর জিতে কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী।
মহম্মদ সাহবুদ্দিন আতিক আহমেদ
আরজেডি। ২০০৩ সালে জেলে।
পরের বছর লোকসভা ভোটে জয়।
সপা। ২০০৯-এ জেল থেকে লড়ে হার।
সপা-ও তাঁকে বহিষ্কার করে।

লোকসভা ভোটের আগে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, কোনও জাতিভিত্তিক নির্বাচনী সভা করতে পারবে না কোনও রাজনৈতিক দল। জাতপাত দীর্ণ উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে এই রায় রাজনৈতিক দলগুলির কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।
কংগ্রেস, বিজেপি বা সিপিএমের মতো জাতীয় স্তরের দলগুলি সর্বোচ্চ আদালতের আজকের রায় নিয়েও সংযত। তবে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও এই রায় নিয়ে সকলেই উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে দলগুলির সুনির্দিষ্ট যুক্তিও রয়েছে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতা বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এখন এমন স্তরে পৌঁছেছে যে, বিরোধী কোনও নেতাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে বা পুলিশি হেফাজতে ঠেলে দেওয়া শাসক দলের পক্ষে কোনও ব্যাপারই নয়। বিশেষ করে আঞ্চলিক দলগুলির প্রাধান্য যেখানে বেশি, সেখানে তো হামেশাই ঘটছে। তাই আদালতের আজকের রায়ের অপব্যবহারের বিপুল আশঙ্কা থাকছে।”
বিজেপি মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখির আবার বক্তব্য, মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পার হয়ে যাওয়ার পর কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে যদি মিথ্যা মামলায় বন্দি করা হয়, তা হলে তো সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলটি সে যাত্রায় ওই কেন্দ্রে আর প্রার্থীই দিতে পারবে না। সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ের খোলাখুলি বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায়। বক্তব্য, এটা ঠিকই অতীতে সাহবুদ্দিন বা মোক্তার আনসারির মতো দুষ্কৃতীরা জেল থেকে ভোটে লড়েছেন এবং জিতেওছেন। কিন্তু সবাই তো আর অপরাধী নন। রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে বহু রাজনৈতিক মামলাও থাকে। তাছাড়া মিথ্যা মামলার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই বন্দিদের ভোটে লড়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার অর্থ তাঁর মৌলিক অধিকারই কেড়ে নেওয়া।
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায়টি খতিয়ে দেখছে মন্ত্রক। মামলার রায়টি খুঁটিয়ে পড়ে সরকার প্রয়োজন মতো পদক্ষেপ করবে। তবে রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য ইউপিএ-র সমর্থক আঞ্চলিক দল সপা, বসপা, ও আরজেডি-র তরফে চাপ রয়েছে কংগ্রেসের ওপর। একই ভাবে চাপ দিচ্ছেন ডিএমকে নেতৃত্বও। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের রায় বলবৎ হলে এই আঞ্চলিক দলগুলি সর্বাগ্রে বিপদে পড়তে পারে। কেন না লালুপ্রসাদ যাদব, মুলায়ম সিংহ যাদব, অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, করুণানিধি ও তাঁর পুত্র-কন্যা সকলের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে। এই সব নেতা-নেত্রীর আইনসভার সদস্যপদ সঙ্কটে পড়লে সামগ্রিক ভাবে তাঁদের দলও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে আজ সকালেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করেন মুলায়ম সিংহ। ভোটের আগে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে দু’জনেরই দু’জনকে দরকার বলে মনে করা হচ্ছে। মুলায়মও বিজেপি বাদে বাকি সব দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মনমোহনের সঙ্গে তাঁর কথার পরেই বিকেলে আইন মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের গত কাল ও আজকের রায়ের পুনর্বিবেচনার দাবি করে সাংবিধানিক বেঞ্চে আবেদন জানাতে পারে সরকার। মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, পরপর দু’দিনের রায়কে কেন্দ্র করে বেশ কিছু আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেগুলির স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
আইন মন্ত্রকের এক অফিসারের কথায়, “কোনও সাংসদ বা বিধায়ক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনসভায় তাঁর সদস্যপদ খারিজ হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন করাতে হবে। কিন্তু উপ-নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলাকালীন ওই ব্যক্তি যদি উচ্চ আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হন, তা হলে জটিলতা তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত, সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাওয়ার চার বা পাঁচ বছর পর যদি ওই ব্যক্তি আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হন, তা হলে ওই সময়ের জন্য তাঁর প্রতি এক প্রকার বঞ্চনাই করা হবে। এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রকের বক্তব্যের সঙ্গে এক মত মিজোরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব-এর মতো অনেক আইনজ্ঞই।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকার পুনর্বিবেচনার আবেদন জানালে সুপ্রিম কোর্ট কতটা শুনবে, তা পরের প্রশ্ন। এই মুহূর্তে ঘোরতর বাস্তব, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য আদালত এখন ভীষণ সক্রিয়। গত কাল ও আজ দেওয়া দুই রায়ের আগে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে। শীর্ষ আদালতের রায় অনুযায়ী, নির্বাচনী ইস্তাহারের মাধ্যমে ভোটারকে কোনও উপহারের লোভ দেখানো যাবে না। ফলে সব মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সমস্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.