|
|
|
|
কেদারে পিছিয়ে গেল পুজো |
ওরা ফিরবে, অপেক্ষায় স্বজনরা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আনুষ্ঠানিক পুজো শুরু হওয়ার কথা ছিল আরও দিন পনেরো আগে।
কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য কেদারনাথ মন্দির চত্বরের আশপাশ পরিষ্কার করার কাজ ক্রমাগত ব্যাহত হয়েছে। দুর্যোগের কারণে কেদারনাথ মন্দির কমিটির ১৫ সদস্যের দলটিও এখনও সেখানে পৌঁছতে পারেনি। তাই শুরু করা যায়নি শুদ্ধকরণের কাজ। আজও সকাল থেকে সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে।
মন্দির কমিটির তরফে অনিল শর্মা জানিয়েছেন, খারাপ আবহাওয়ায় কেদারনাথে পৌঁছতে পারেননি তাঁরা। কুয়াশার জন্য চপারও ওড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। মন্দির কমিটির কেউ সেখানে না পৌঁছনোয় পুজো শুরু হতে আরও দেরি হবে বলে জানান তিনি। এই মুহূর্তে পূর্ত দফতর এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর লোকজন সেখানে কাজ করছেন। মন্দির কমিটির দলটি অপেক্ষা করছে গুপ্তকাশীতে।
৩০ কিলোমিটার লম্বা চৌমসি-কালীমঠের পথ দিয়ে কোনও উপায়ে পায়ে হেঁটে কেদারনাথে পৌঁছনো যায় কি না, তার চেষ্টা করছেন রাজ্য সরকারি অফিসাররা। গৌরীকুণ্ড থেকে রামওয়ারা হয়ে কেদারনাথের পথটি বন্যায় ধুয়ে মুছে গিয়েছে। |
|
বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ে বায়ুসেনার চপারে
করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বুলডোজার। ছবি: পিটিআই |
অনিল বলছেন, “যদি নতুন পথ খুঁজে পাওয়া যায়, আমরা পায়ে হেঁটেও যেতে প্রস্তুত। পুজো যত দ্রুত সম্ভব শুরু করতে চাই আমরা।” কেদারনাথের পুজো ভক্তপুরের ডোলেশ্বর মহাদেব মন্দিরে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে গুজব ছড়িয়েছিল। এই খবর ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন উখীমঠে ওঙ্কারেশ্বর মন্দিরের পুরোহিত গঙ্গাধর আচার্য্য। কেদারনাথে শুদ্ধকরণের পরেই পুজো হবে। তবে কেদারনাথে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের আত্মার শান্তি কামনায় নেপাল মন্দিরে একটি পুজো হয়েছে বলে জানান গঙ্গাধর।
বন্যাবিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডে এখনও নিখোঁজ প্রিয়জনদের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। সেই ১৭ জুন থেকে স্বজনদের সঙ্গে দেখা নেই ওঁদের। কিন্তু আশা ছাড়েননি তাঁরা। হাতে আত্মীয় বা বন্ধুর ছবি নিয়ে কেদারঘাটি উপত্যকায় দোরে দোরে ঘুরছেন বহু মানুষ। দুর্যোগে যাঁরা হারিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের মৃত
বলে ধরে নেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণার এই ঘোষণাও দমাতে পারেনি স্বজনহারাদের। কেদারঘাটির ফাটাবাজারে খুঁজে পাওয়া গেল এমন কিছু মুখ।
মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের অনন্ত কুলকার্নির দলের ৩৫ জন হারিয়ে গিয়েছে প্রকৃতির তাণ্ডবে। পুণের বাসিন্দা হেমন্ত কুলকার্নি হারিয়েছেন ২৪ জন বন্ধুকে। নেপালের কপিলাবস্তুর কাছে একটি গ্রাম থেকে এসেছিলেন দু’ভাই, অলোক আর আশিস পাণ্ডে। গত শুক্রবার থেকে রুদ্রপ্রয়াগে ক্যাম্প করে রয়েছেন তাঁরা। ১৭ জুন ওঁদের বাবা-মা ছিলেন কেদারনাথে। বিপর্যয়ের সময়ে বয়স্ক ওই দম্পতি পরস্পরের হাত ধরে ছিলেন। কিন্তু দুর্যোগের সময়ে হুড়োহুড়িতে তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তার পর থেকেই অলোক-আশিসের বাবা নিখোঁজ। দেহরাদূন, হৃষীকেশ, হরিদ্বার এবং শ্রীনগরের সব হাসপাতাল, ধর্মশালা, আশ্রম তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন দু’ভাই। কিন্তু বাবাকে এখনও পাওয়া যায়নি। বাবা ফিরে আসবেন, ভেবে অপেক্ষায় দু’ভাই।
শুধু অন্য রাজ্য থেকে আসা মানুষ নয়, কেদারের স্থানীয় এমন অনেকে এখনও অপেক্ষা করছেন পরিজনদের জন্য। কেদারঘাটির ভিরি গ্রামে আশারু লালের পরিবারে মহিলারা দিন গুনছেন তাদের ছেলেদের ফিরে আসার জন্য। খচ্চরের পিঠে পর্যটকদের নিয়ে যাতায়াত করতেন ওই পরিবারের তিন ভাই। ওই কাজই রুটিরুজি ওঁদের। বিপর্যয়ের রাত থেকে খোঁজ নেই তিন ভাইয়ের। সব চেয়ে ছোট ভাইটির বিয়ে হয়েছিল মাত্র ছ’মাস আগে। এখন কী ভাবে দিন গুজরান হবে, জানেন না পরিবারের মহিলারা।
কেদারঘাটির পথ জুড়ে এ দিক ও দিক এখনও পড়ে রয়েছে লাশ। উদ্ধারকারী পুলিশ দলের রাজেন্দ্র ভাণ্ডারী জানালেন, মৃতদেহগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে শেষ মুহূর্তেও প্রত্যেকে বাঁচার কী মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন। মন্দাকিনীর তীরে পাওয়া গিয়েছে বছর তিরিশের এক দম্পতির মৃতদেহ। পুলিশের ধারণা, জঙ্গলচটি থেকে ওঁরা পালিয়ে এসেছিলেন প্রাণ বাঁচাতে। কিন্তু জলের তোড়ে ভেসে যান। গাছের ভাঙা ডাল জড়ো করে জলে ভেসে থাকার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু সেটা আর ব্যবহার করতে পারেননি। তার আগেই বন্যার জল ভাসিয়ে নিয়ে যায় ওদের। এমন
গল্প ছড়িয়ে আছে কেদারঘাটির বিভিন্ন অংশে। |
পুরনো খবর: লাগামছাড়া বৃষ্টি, বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড-হিমাচল
|
|
|
|
|
|