ডলারে টাকার দামকে টেনে তুলতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাওয়াইয়ে ফল মিলল হাতে হাতে।
মঙ্গলবার টাকার দাম এক ধাক্কায় বেড়ে গেল ৫৮ পয়সা, গত কালের তুলনায় যা ১% বেশি। ১৫ দিনেরও বেশি সময়ে এত বেশি বাড়েনি টাকা। ফলে দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়াল ৫৯.৩১ টাকা।
তবে টাকার পতন ঠেকাতে তার জোগানে রাশ টানার যে-রণকৌশল শীর্ষ ব্যাঙ্ক নিয়েছে, তার পরিণতি কী দাঁড়াবে, সে ব্যাপারে সন্দিহান শেয়ার বাজার। সুদ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছে তারা। যার জেরে সেনসেক্স আজ পড়ে যায় ১৮৩ পয়েন্ট। সোমবার ২০ হাজার পেরোলেও আজ বাজার বন্ধের সময়ে তা নেমে আসে ১৯,৮৫১.২৩ পয়েন্টে। অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম অবশ্য আতঙ্ক কাটাতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, টাকার দামে ‘স্থিতি’ খোঁজাই সরকারের লক্ষ্য। তিনি মনে করেন না, এর জেরে ব্যাঙ্কগুলি ঋণে সুদের হার বাড়াবে। আগামী ৩০ জুলাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। দেশের বৃহত্তম স্টেট ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই জানিয়েও দিয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপের জেরে তারা ঋণে সুদ বাড়াচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চিদম্বরম এবং তার পর চিদম্বরমের সঙ্গে আরবিআই গভর্নর সুব্বারাওয়ের বৈঠকের পরে ডলারে টাকার দরে রাশ টানতে তিন দাওয়াই ঘোষণা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যেগুলি হল:
• শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের দীর্ঘ মেয়াদি ঋণে সুদ (ব্যাঙ্ক রেট) বাড়িয়ে ১০.২৫% করা।
• জরুরি ঋণ বা মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফেসিলিটি-র আওতায় নেওয়া ঋণেও সুদ বাড়িয়ে ১০.২৫% করা।
• ১৮ জুলাই সরকারি ঋণপত্র বিক্রি করে বাজার থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা।
ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে ব্যাঙ্কের নগদ সংগ্রহের খরচ বাড়বে। টাকার জোগান কমবে বাজারে। ফলে অর্থনীতির নিয়ম মেনে দাম বাড়বে তার। চিদম্বরম বলেন, “টাকার দামে যে ভারসাম্য ফিরবে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।” তাঁর আরও দাবি, টাকা থিতু হলে মুল্যবৃদ্ধিও কমবে এবং চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতিতেও (বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ফারাক) রাশ টানা যাবে। সোনা আমদানি বন্ধ নয়। সোনা আমদানি নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন চিদম্বরম। চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি লাগামছাড়া হওয়ার অন্যতম কারণ যদিও সোনা আমদানি, তবুও তা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, “সোনার প্রতি এ দেশের মানুষের আকর্ষণ দীর্ঘ দিনের। আমার অনুরোধ, অন্তত কিছু দিনের জন্য সেই চাহিদা কমান।” উল্লেখ্য, চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতির মধ্যে ৫ হাজার কোটি ডলারই সোনা আমদানির খরচ।
|