পরিবর্তনের আশা নিয়ে গত কাল গভীর রাত পর্যন্ত ডাবলিনে পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। উল্টো দিকে তখন বিরোধীদের ঢল। দু’পক্ষেরই রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা গর্ভপাত নিয়ে নতুন বিলের ঠিক কী পরিণতি হতে চলেছে? রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ আয়ার্ল্যান্ড পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ সিলমোহর দিল নতুন বিলে। নয়া নিয়ম পেতে চলেছে আয়ার্ল্যান্ড মায়ের অবস্থা অতি সঙ্কটজনক
হলে গর্ভপাত করানো যাবে। পুরোদস্তুর আইন হতে দরকার অবশ্য উচ্চকক্ষের অনুমোদনও। তবে নিঃশব্দ পরিবর্তনের ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই পেয়েছে রক্ষণশীল আয়ার্ল্যান্ড।
পুরোটাই অবশ্য বহু অকালমৃত্যুর বিনিময়ে। যাঁর মধ্যে অন্যতম
ভারতীয় দন্ত চিকিৎসক সবিতা হালাপ্পনাভার। গত অক্টোবরে গলওয়ের হাসপাতালে মৃত্যু হয় সন্তানসম্ভবা সবিতার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময় থাকতে গর্ভপাত না করানোয় রক্তে সংক্রমণ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। সবিতার স্বামী প্রবীণ জানান, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা গর্ভপাত করাতে রাজি হননি। ক্যাথলিক দেশ হিসেবে আয়ার্ল্যান্ডে প্রাণের হত্যা নিষিদ্ধ। সেই নিয়মের গেরোয় পড়েই প্রাণ হারান সবিতা।
সবিতা হালাপ্পনাভা |
তার পরে নড়েচড়ে বসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। দেশের চৌহদ্দির ভিতর ও বাইরে সর্বত্রই এই নিয়মের কড়া সমালোচনা শুরু হয়। আয়ার্ল্যান্ড সরকারের দেওয়া তথ্য বলছে, শুধুমাত্র গর্ভপাত করাতে ফি বছর অন্তত ৪০০০ আইরিশ মহিলা পাড়ি দেন ব্রিটেন। অন্য আর একটি সূত্র বলছে, প্রতি দিন ১১ জন মহিলা এই উদ্দেশ্যে ব্রিটেনে আসেন। এবং সব কিছুর পিছনেই রয়েছে ওই নিয়মের গেরো।
১৯৯২ সালে অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট একটি বিশেষ মামলায় ব্যতিক্রমী রায় দেয়। ১৪ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছিল তার প্রতিবেশী। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে সে। যার জেরে আত্মহত্যার চেষ্টাও করে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, মা যদি কোনও ভাবে আত্মহত্যাপ্রবণ হন, সে ক্ষেত্রে গর্ভপাত করানো যাবে। বিতর্কের শুরু তখন থেকেই।
এ দিকে দেশের আইন সুপ্রিম কোর্টের রায় সমর্থন করে না। সব মিলিয়ে পরিবর্তনের একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছিলই। সবিতার মৃত্যুর পর সেই পরিবর্তন গতি পেল।
তবে ইতিমধ্যেই হুমকি মেলপেয়েছেন সবিতার স্বামী। এর আগে একাধিক বার নানা রকম আপত্তিজনক মন্তব্যও করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
বিল পাশ করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী এন্ডা কেনি। তাঁর নিজের দলের অন্তত পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্য ওই বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেন। নিয়ম মেনে তাই তাঁদের পার্লামেন্ট থেকে বরখাস্তও করা হয়েছে। তার আগে অন্তত দু’দিন ধরে উত্তপ্ত বিতর্ক চলেছে নিম্নকক্ষে। অবশেষে ১২৭-৩১ ভোটে পাশ হয়েছে বিলটি।
কিন্তু দেশবাসীর যে অংশের জন্য এই পরিবর্তন আনছেন কেনি, তাঁরাও সন্তুষ্ট নন। কারণ, এই বিল খুব সীমিত কিছু ক্ষেত্রে গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়। ধর্ষণ কিংবা যে সব ক্ষেত্রে গর্ভস্থ ভ্রূণের অস্বাভাবিকতা রয়েছে বা বাইরের পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না এমন ভ্রূণের ক্ষেত্রে গর্ভপাত করানো যাবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। কোনও অন্তঃসত্ত্বা আত্মহত্যাপ্রবণ কি না, তা যাচাই করতে নিতে হবে অন্তত দু’জন মনোচিকিৎসকের পরামর্শ। কিন্তু বহু সময়ই সময়সাপেক্ষ এই সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়াতে পারে, আশঙ্কা সমর্থকদের।
অন্য দিকে, বিরোধীরাও কট্টর সমালোচনা করেছেন বিলের। তাঁদের মতে, এর ফলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খুনের অধিকার বৈধতা পাবে। প্রতিবাদ জানাতে আগেই মৃত ভ্রূণ প্লাস্টিকে মুড়ে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন তাঁরা।
গত রাতেও পার্লামেন্টের সামনে তাঁরা জমায়েত হয়েছিলেন বিরোধিতা করতে। উল্টো দিকে ছিল বিলের হাতে গোনা ক’জন সমর্থক।
|