পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ। মোমবাতির মিছিল। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বিস্ফোরণ।
সবিতা হালাপ্পানাভার মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে আয়ার্ল্যান্ড, সঙ্গে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। ধর্মের জিগির তুলে কেন সবিতার গর্ভপাত করানো হল না, উত্তর চাইছে জনতা।
জন্মসূত্রে কর্নাটকের মেয়ে সবিতা নিজে পেশায় ছিলেন এক জন দন্ত চিকিৎসক। স্বামী প্রবীণ ইঞ্জিনিয়ার। ১৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা সবিতা গত ২১ অক্টোবর পিঠে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ডাক্তাররা জানান, তাঁর গর্ভস্থ শিশুর বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। প্রবীণ জানিয়েছেন, কথাটা শুনে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন সবিতা। কিন্তু বাস্তবটা মেনেও নিয়েছিলেন। সেই মোতাবেক নিজেই ডাক্তারদের বলেছিলেন, গর্ভপাত করাতে। কিন্তু করা যায়নি। কেন? |
কারণ ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, যত ক্ষণ ভ্রূণের হৃদ্স্পন্দন রয়েছে, কিছু করা যাবে না। আয়ার্ল্যান্ডে ভ্রূণহত্যা নিষিদ্ধ। এর পরেই ৩১ বছরের সবিতার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত সেপ্টিসেমিয়া বা রক্তে বিষক্রিয়া হয়ে মারা যান।
আয়ার্ল্যান্ডে ভ্রূণহত্যার প্রশ্নে দীর্ঘদিনের বিতর্ক রয়েছে। ১৯৮২ সালের গণভোটে মানা হয়েছিল, গর্ভস্থ শিশুর যেমন জীবনের অধিকার আছে, তেমনই অধিকার আছে মায়েরও। ১৯৯২ সালে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার বলেছিল, মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনে গর্ভপাত করাতে হতে পারে। কিন্তু ক্যাথলিক দেশটির আইনসভা এখনও পর্যন্ত সেই মর্মে কোনও আইন করেনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেমস রেইলি অবশ্য কিছু দিন আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আইন পাস হবে। বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন বলে তাঁর দাবি। এর মধ্যে সবিতার মৃত্যু নাগরিক সমাজের তরফে প্রতিকারের দাবি অনেকটাই বাড়িয়ে দিল। এ দিন ডাবলিনে পার্লামেন্টের সামনে বহু মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলিও।
আয়ার্ল্যান্ডের সরকারি সূত্রে খবর, ঘটনাটি নিয়ে দু’টি তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী এন্ডা কেনি। বুধবার পার্লামেন্টে সবিতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তিনি। ভারতও তদন্ত রিপোর্টের জন্যই অপেক্ষা করছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবারুদ্দিন এ দিন জানিয়েছেন, তদন্ত শেষ হলেই পদক্ষেপ করার কথা ভাববেন তাঁরা।
আয়ার্ল্যান্ডের সাধারণ মানুষ কিন্তু চুপ করে নেই। তাঁদের একটাই প্রশ্ন গর্ভস্থ ভ্রূণের মতো সবিতারও তো হৃদ্স্পন্দন ছিল। সেই স্পন্দন বাঁচানোর দায় তবে কার ছিল? |