সমস্যার শেষ নেই। এক জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত নেই। তবু যে ক’জন চিকিৎক ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন তাঁরা হাল ছাড়েননি। তাই দলগত ইচ্ছাশক্তির জোরে ফের জলপাইগুড়িতে স্বাভাবিক প্রসবে নজির সৃষ্টি করল ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল। গত বছরও স্বাভাবিক প্রসবে সাফল্যের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবন থেকে চিঠি পাঠিয়ে এ বছরের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দুই লক্ষ টাকা আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বছরে ১ হাজার শিশুর জন্ম হলেই ধরে নেওয়া হয়, ওই গ্রামীণ হাসপাতাল যথেষ্ট ভাল কাজ করছে। সেখানে ২০১১-র এপ্রিল থেকে ২০১২-র মার্চ পর্যন্ত ময়নাগুড়িতে ২৯৬৬ জন প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব হয়। গত আর্থিক বছরে প্রায় একই সংখ্যক প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব হয়েছিল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল দৃষ্টান্ত। হেল্থ অ্যাকশন প্ল্যনে হাসপাতালের উন্নতির প্রস্তাব রাখা হয়েছে।”
কিন্তু সাফল্য মিললেও অভাব মিটছে কোথায়? হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ৭ জন। আছেন ৫ জন। তাঁদের মধ্যে ৩ জন মেডিক্যাল অফিসার। বাকি ২ জন অতিরিক্ত মেডিক্যাল অফিসার। নেই স্ত্রী রোগ ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ। অপারেশন থিয়েটার তৈরির পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে পড়ে। শয্যা রয়েছে ৬৪টি। মেঝেতে প্রসূতিদের রাখা হচ্ছে। ব্লক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩ প্রসূতিকে সিজারের জন্য জেলা হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক গ্রামীণ হাসপাতালে এক জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, এক জন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, একজন অ্যানাসথেটিস্ট-এর থাকার কথা। কিন্তু রাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বীকার করেছেন পরিবার কল্যাণ অফিসার জ্যোতির্ময় চাকী। ময়নাগুড়িও এমন একটা গ্রামীণ হাসপাতাল যেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেওয়া যায়নি। জ্যোতির্ময়বাবু জানালেন, “রাজ্যে মোট ৪৭টি গ্রামীণ হাসপাতালকে ‘সিমক সেন্টার’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকার কথা এবং সিজার হওয়ার কথা। কিন্তু ডাক্তারের অভাবে এর ২২টিতে সিজার শুরু করা যায়নি।”
সিজার শুরু করা না-গেলেও স্বাভাবিক প্রসব যাতে যথেষ্ট হয় তাতে কসুর করছেন না ময়নাগুড়ির চিকিৎসকেরা। গত বছর স্বাভাবিক প্রসবে সাফল্যের জন্য কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সংবর্ধনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ভবন থেকে চিঠি পাঠিয়ে এ বছরের জন্য ফের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দুই লক্ষ টাকা আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। |