একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই নিয়ে অচলাবস্থা কাটতে চলেছে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চালু থাকা অবস্থাতেই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এবং অভিযোগকারী প্রকাশনা সংস্থা আদালতের বাইরে একটা সমঝোতায় পৌঁছেছে। আর সেই সূত্রেই বই নিয়ে জট কাটার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, সংসদের প্রস্তাব মেনে শুক্রবার দুপুরে অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, সংসদের আইনজীবী এক্রামুল বারি, অভিযোগকারী প্রকাশনা সংস্থার আইনজীবী, পাঠ্যবইয়ের প্রকাশক সংস্থা এবং অন্য একটি প্রকাশনা সংস্থা (যাদের মামলায় যোগ দিতে বলা হয়েছে)-র প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন। সমঝোতার প্রস্তাব আসে সেখানেই। যে-প্রকাশনা সংস্থাকে পাঠ্যবই ছাপার বরাত দেওয়া হয়েছে, তারা অবশ্য কোনও প্রস্তাবে রাজি হয়নি বলে ওই সূত্রে জানানো হয়েছে। ওই প্রকাশক সংস্থার প্রতিনিধি বৈঠকে জানান, সব বই ছেপে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাই এখন তাঁদের পক্ষে নতুন করে কোনও সমাধানসূত্রে পৌঁছনো সম্ভব নয়। তার পরে তিনি আর বৈঠকে থাকেনি।
এর পরে অভিযোগকারী সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং সংসদের আইনজীবী। হাইকোর্টের সূত্রের খবর, বৈঠকে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, কে অন্যায় করেছে, এখন সেটা বিচার করার সময় নয়। আদালতের বাইরে যাতে কোনও একটা সমাধানসূত্রে পৌঁছনো যায়, সেই জন্যই এই বৈঠক।
শেষ পর্যন্ত বৈঠকের ফল কী?
হাইকোর্ট সূত্রে জানানো হয়, সংসদের বই ছাপার বরাত দেওয়া হয় তিন বছরের জন্য। কিন্তু চুক্তি হয় এক বছরের জন্য। যে-সংস্থাটি এ বার বই ছাপিয়েছে, তাদের সঙ্গেও সংসদের চুক্তি আছে এক বছরের। মামলাকারী প্রকাশনা সংস্থাটি পরবর্তী দু’বছরের জন্য বই ছাপার বরাত চেয়েছে। সংসদও তাতে রাজি হয়েছে। এই বৈঠকের সমঝোতা প্রস্তাবের কথা এ বার রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। সরকার রাজি হলে তা সোমবার পেশ করা হবে হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে। আদালত কী রায় দেয়, তার উপরেই নির্ভর করছে একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই-বিতর্কের ভবিষ্যৎ।
একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই প্রকাশ নিয়ে বিবাদ মেটাতে হাইকোর্ট শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। আদালতের বাইরে সমাধানের জন্য এ দিন হাইকোর্টের কাছে অতিরিক্ত সময় চেয়ে নেন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জটিলতা কাটাতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এ দিন সব তরফের সঙ্গে আলোচনা করে সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার মধ্যে আদালতে সমাধানসূত্র জানানো হবে। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রস্তাবে সম্মতি দেন।
একাদশের বাংলা, ইংরেজি-সহ আটটি পাঠ্যবই এ বার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রকাশ করার কথা ছিল। বইগুলি ছাপার বরাত দেওয়ার জন্য এপ্রিলে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার কাছে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু সর্বোচ্চ দর দেওয়া সত্ত্বেও পাঠ্যবই ছাপার বরাত না-পেয়ে হাইকোর্টে মামলা করে একটি প্রকাশনা
সংস্থা। মঙ্গলবার মামলাটি হাইকোর্টে ওঠে। সে-দিনই ওই আটটি বইয়ের প্রকাশ ও বিক্রির উপরে স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সূত্র ধরে রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনাও করেন বিচারপতি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সংসদ যখন বেআইনি কাজ
করছিল, তখন রাজ্য সরকারের হুঁশ কোথায় ছিল?
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় বই না-পেলে সব থেকে বেশি অসুবিধায় পড়বেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের সমস্যার কথা তুলে জনস্বার্থে এক বছরের জন্য স্থগিতাদেশ শিথিল করার আবেদন জানান জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই তোপ দাগে আদালত। শেষ পর্যন্ত আদালতের বাইরে সমঝোতা কার্যকর হলে পড়ুয়াদের সমস্যা মিটবে। এ দিন সেই মর্মেই ইঙ্গিত মিলেছে। তবে সবটাই নির্ভর করছে হাইকোর্টের রায়ের উপরে।
|