অবরোধ যাঁদের তোলার কথা সেই পুলিশকর্মীরা বসেছেন অবরোধে। শেষে জনতার ক্ষোভের মুখে পড়ে অবরোধ তুলছেন। শুক্রবার ভোটের কাজে কলকাতা লাগোয়া দুই জেলা থেকে এলাকায় যাওয়া পুলিশকর্মীদের এমনই কাণ্ডের সাক্ষী থাকল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর। অবরোধকারীদের দাবি, তাঁরা ‘অব্যবস্থা’র প্রতিবাদ করছিলেন মাত্র।
এই ‘অব্যস্থা’র অভিযোগকে ঘিরেই ভোটের কাজে ঝাড়গ্রামে যাওয়া ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশের সঙ্গে মারপিট বাধল স্ট্র্যাকো বাহিনীর। সংঘর্ষে জখম দু’পক্ষের জনা কুড়ি। পরে কমিশনারেটের ১৬০ জন সশস্ত্র পুলিশকর্মী ঝাড়গ্রাম থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। শেষ পর্যন্ত ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ থামে।
একই অভিযোগে কলকাতা পুলিশের কর্মীদের বিক্ষোভ, বাস দাঁড় করিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটল পুরুলিয়া সদরেও। ‘অব্যবস্থা’ নিয়ে ক্ষোভেই বাঁকুড়ার রাইপুরে জেলা পুলিশের কর্মীদের কলকাতা পুলিশের কর্মীরা গালিগালাজ করেন বলেও খবর।
তবে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “জেলা পুলিশ কিছু জানায়নি।” |
ভোটের কাজে সোমবার বাঁকুড়ায় পৌঁছেই বিক্ষোভ দেখান কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। সেই বিক্ষোভ ছিল মান্ধাতার আমলের ‘থ্রি নট থ্রি’ রাইফেল নিয়ে মাওবাদী-উপদ্রুত এলাকায় যাওয়ার প্রশ্নে। দাসপুর ১ ও ২ ব্লকে ভোটের কাজে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে প্রায় ১,২০০ পুলিশকর্মী গিয়েছিলেন। ভোট মিটতে তাঁদের পূর্ব মেদিনীপুরে পাঠানোর নির্দেশ পৌঁছয়। সেই মতো থানা থেকে একে-একে ‘রিলিজ অর্ডার’ দেওয়া হয়। একদম শেষে ছিলেন ফলতা এবং বারুইপুর থানার পুলিশ কর্মীরা। ‘রিলিজ-অর্ডার’ পেতে রাত ১২টা বাজে। ততক্ষণে দাসপুরে দোকানপাট বন্ধ। ওই পুলিশকর্মীরা খাবার ব্যবস্থা করার কথা বলেন দাসপুর থানার ওসি ননীগোপাল দত্তকে। ওসি তা করেননি। ওই পুলিশকর্মীরা তখন ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কে অবরোধে বসেন।
ভোরেও সেই অবরোধ না ওঠায় আটকে পড়া লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। জনতার ক্ষোভ দেখে অবরোধ তুলে নেন পুলিশকর্মীরা। তাঁদের একাধিক জনের বক্তব্য, “সারা দিন ঠিক মতো খাওয়া হয়নি। তার উপর ফের আর এক জায়গায় যেতে বলল। মানুষ তো!”
ওসি ননীগোপাল দত্ত বলেন, “ওই পুলিশকর্মীদের খাওয়ার টাকা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, রিলিজ অর্ডার দেওয়ার পরে আমাদের আর দায় থাকে না।”
প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতান্তরের জেরেই পরিস্থিতি তেতে ওঠে ঝাড়গ্রামে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ১৬০ জন পুলিশকর্মীর ফেরার জন্য তিনটি বাস বরাদ্দ হয়। সঙ্গে বিছানাপত্র থাকায় ওই পুলিশকর্মীরা আরও কয়েকটি গাড়ি চান। সন্ধ্যায় তাঁরা থানায় গাড়ির খোঁজ করতে গেলে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার এক আধিকারিকের সঙ্গে তাঁদের বচসা শুরু হয়। বচসা থেকে মারপিট বাধে। বিক্ষোভ শুরু করেন কমিশনারেটের কর্মীরা। শেষে ঝাড়গ্রামের এসপি ভারতী ঘোষ ওই পুলিশকর্মীদের জন্য অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করেন।
পুরুলিয়াতে সকালে গণ্ডগোল বাধে সময়ে বাস না পাওয়ার অভিযোগকে ঘিরে। পুলিশকর্মীদের অভিযোগ, বর্ধমান থেকে বাস আসতে সময় লাগছিল। ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছিল। মাথা বাঁচানোর জায়গা ছিল না। আশপাশে খাবার দোকানও ছিল না। সকাল ১০টায় বিক্ষোভ শুরু হয়। গড়ায় দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। পুরুলিয়া-ঝালদা রাস্তায় একটি বাস আড়াআড়ি রেখে যান চলাচলও বন্ধ করেন ওই পুলিশকর্মীরা। পুরুলিয়ার জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা ছিল। এমন হওয়ার কথা নয়।” এসপি সি সুধাকরের মন্তব্য, “তেমন কিছু নয়।”
কিন্তু পরপর এমন ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তিই কি প্রশ্নের মুখে পড়ছে না? আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেন, “আগে তো ঘটনাগুলো নিয়ে খোঁজ নিই। পরে মন্তব্য করব।” |