ভোর পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট জঙ্গলমহলে
কাল ৭টার মধ্যে মেরুদণ্ড সোজা করে চেয়ারে বসে পড়েছিলেন পোলিং অফিসারেরা। মাঝরাত পেরিয়েও ঘাড় ঘোরানোর জো নেই। টেবিলের সামনে যে তখনও লম্বা লাইন।
প্রথম দফায় পঞ্চায়েত ভোট ভাল পড়ায় এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ভোটের হার কমলেও বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় ২০০৮-এর তুলনায় বেড়েছে। মাওবাদী-উপদ্রুত এলাকাতেও সেই ধারা। শুক্রবার বর্ধমানের সেহারাবাজারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জঙ্গলমহলে এক সময়ে রক্ত ঝরত। সিপিএম আমলে ৮০-৯০ শতাংশ ভোট হয়তো পড়েছে। কিন্তু সেটা ওরা নিজেরাই দিয়ে দিত। এ বার মানুষ শান্তিতে নিজের ভোট নিজে দিয়েছেন। জঙ্গলমহলে গণতন্ত্রের উৎসব হয়েছে। মানুষ ভোর ৩টে পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন। সে জন্য গোটা বাংলার সঙ্গে আমিও গর্বিত।” বিরোধীরা অবশ্য তা মানতে রাজি নন।
বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের চার ব্লকে ২০০৮-এ ভোট পড়েছিল ৮৬ শতাংশ। এ বার ভোটদানের হার ৮৭ শতাংশ। পুরুলিয়ার ‘জঙ্গলমহল’ ব্লকগুলোতে ব্লকে ভোটের হার ৮৭ শতাংশ। এ বার তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮৯ শতাংশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১টি ব্লকে অবশ্য মোট ভোটদানের হার এ বার কমেছে ৮৮ থেকে ৮৫ শতাংশে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ায় ভোর ৪টে পর্যন্ত ভোট হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু বুথে ভোট হয় রাত ২টো পর্যন্ত। বিকেল ৫টার পরে যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের হাতে স্লিপ ধরানো হয়, যাতে নতুন করে কেউ দাঁড়াতে না পারেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং-এ তিনটি বুথে ও বাঁকুড়ার শালতোড়ার একটি বুথে পুনর্নিবাচন হবে রবিবার, জানিয়েছে কমিশন।
রাত অনেক। তখনও ভোটের লম্বা লাইন। বাঁকুড়ার জুনবেদিয়ায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
জঙ্গলমহলের অধিকাংশ এলাকায় ভোটদানের হার বাড়ার কারণ কী? রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, কৃতিত্ব তৃণমূলের সরকারের। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বান্দোয়ানে ভোটের দিন ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে মারা যান এক বিএসএফ জওয়ান। এবার তেমন কিছু হয়নি। মানুষে রাত পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার সাহস পেলেন মাওবাদী উপদ্রব কমার জন্যই। গত দু’বছরে, মূলত কিষেণজির মৃত্যুর পরে জঙ্গলমহলে হিংসাত্মক ঘটনা কমেছে। জায়গায় জায়গায় যৌথবাহিনীর শিবিরও সাহস জুগিয়েছে মানুষকে, দাবি পুরুলিয়ার তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও আগের রক্তাক্ত ভোটের সঙ্গে এ বারের শান্তিপূর্ণ ভোটের তুলনা করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। মাওবাদীদের উপস্থিতি কমার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজকর্মও বেড়েছে, তাই মানুষ ভোটদানে উৎসাহী হয়েছে, দাবি বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তীর। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বক্তব্য, পরিবর্তন আনতে মানুষের আগ্রহই ভোটের হার বাড়ার কারণ।
কংগ্রেস অবশ্য মনে করছে, জঙ্গলমহলে বিপুল ভোটদান আসলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার সূচক। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার দাবি, “পুলিশ-প্রশাসন নীরব দর্শক না হলে এবং তৃণমূল গুন্ডামির সুযোগ না পেলে ভোটদানের হার আরও বাড়ত।” মানসবাবুদের বিশ্লেষণ, তৃণমূল সরকারও যে তাঁদের হতাশ করেছে, এটা তারই প্রতিফলন।
প্রধান বিরোধী দল সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “এটা তো ঠিক, গভীর রাত পর্যন্ত বেশ কিছু মানুষ ধৈর্য ধরে ভোট দিয়েছেন। নতুন সরকারের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে কি না, এর উত্তর এখনই জানা নেই!” তবে সিপিএমের রাজ্য কমিটির একাধিক নেতার মত, পঞ্চায়েতে ভোট ‘করিয়ে নেওয়া’র উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র অবশ্য বলেন, “মাওবাদী আতঙ্ক না থাকার
সাফল্য তৃণমূল সরকার দাবি করতেই পারে। কিন্তু জঙ্গলমহলে উন্নয়ন কিছুই হয়নি। শুধু জঙ্গলমহল নয়, সর্বত্রই এ বার ভোটের হার বেড়েছে। কারণ, মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ হচ্ছে।” ভোটার তালিকা থেকে মৃত ও অন্যত্র চলে যাওয়া মানুষের নাম বাদ পড়াও ভোটের হারে প্রভাব ফেলেছে, দাবি তাঁর।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.