ফের এক বার সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে চলেছেন সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব। আগামী ১৯ জুলাই উত্তর ২৪ পরগনায় পঞ্চায়েত ভোট। তার ঠিক আগেই ভবানী ভবনে দ্বিতীয় দফায় ডেকে পাঠিয়ে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতমবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান গোয়েন্দারা। সিআইডি-র তরফে শুক্রবার বিকালে প্রাক্তন মন্ত্রীর সল্টলেকের বাড়িতে সমন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সিআইডি-র এডিজি শিবাজী ঘোষ এ দিন জানান, আগামী সপ্তাহে গৌতমবাবুকে ভবানী ভবনে ডেকে পাঠানো হয়েছে। বাম জমানায় আবাসন দফতরের জমির হস্তান্তর ও আবাসন তৈরির বিষয়ে ২০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে এর আগে ২১ জুন ভবানী ভবনে ডেকে পাঠিয়ে এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল প্রাক্তন মন্ত্রীকে। সিআইডি সূত্রে খবর, আগামী ১৭ অথবা ১৮ তারিখ ভবানী ভবনে আসতে বলা হয়েছে গৌতমবাবুকে।
আগের বার ভবানী ভবনে গিয়েই গোয়েন্দাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন গৌতমবাবু। বাইরে জমায়েত করেছিলেন সিপিএম সমর্থকেরা। এ বার অবশ্য গৌতমবাবু কী করবেন, সেই ব্যাপারে সিপিএম এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে ভবানী ভবনে গিয়ে গোয়েন্দাদের প্রশ্নের জবাব দিতে বসতে চাইছেন না গৌতমবাবুরা। সিআইডি-র নোটিস যখন এ দিন আসে, গৌতমবাবু তখন বাড়িতে ছিলেন না। গৌতমবাবু বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় নোটিসে ঠিক কী আছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত দলেরও জানা ছিল না। দলের তরফে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য জানান, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য গৌতমবাবুর কিছু ব্যস্ততা আছে। ভোটের আগে সিআইডি চাইলে ওঁর বাড়িতে গিয়ে কথা বলতে পারে। অন্যথায় কী করণীয়, ভোটের পরে ভাবা যাবে।
একটি সংস্থার সঙ্গে ১৯৯৩ সালে মৌ অনুযায়ী দক্ষিণ শহরতলির মহেশতলার যোত-শিবরামপুর ও পারুই মৌজায় প্রায় ৪৫ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল আবাসন দফতর। পরে ২০০৪ সালে ‘গ্রিনফিল্ড’ নামে একটি আবাসন সংস্থাকে ওই জমি হস্তান্তর করা হয় আবাসন প্রকল্প তৈরির জন্য। অভিযোগ, ওই সংস্থাকে বিনা টেন্ডারে বাজার দর থেকে কম দামে ওই জমি হস্তান্তর করা হয়েছিল। যার ফলে আবাসন দফতরের ক্ষতি হয়েছে ২০ কোটি টাকার বেশি। ওই সংস্থার সূত্রেই প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন বসুর নাম এই ঘটনায় জড়িয়েছে। সম্প্রতি আবাসন দফতরের বিশেষ অডিটে ওই বেনিয়ম ধরা পড়ে। গত এপ্রিলে রাজ্য আবাসন দফতরের সচিব তালতলা থানায় গৌতমবাবু-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে সেই তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় সিআইডি-র হাতে।
কেন ফের গৌতমবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন গোয়েন্দারা? সিআইডি সূত্রের খবর, প্রথম বার সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদের সময় আবাসন দফতরের জমির হস্তান্তর ও আবাসন তৈরির বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছিলেন প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী। পরে সে বিষয়ে বিস্তর খোঁজখবর করেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, প্রাক্তন মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে।
এ ছাড়া, জিজ্ঞাসাবাদের সময় জমির হস্তান্তরের বিষয়ে কোনও বেনিয়ম হয়নি বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছিলেন গৌতমবাবু। কিন্তু গোয়েন্দাদের দাবি, আবাসন দফতরের বেশ কয়েক জন প্রাক্তন কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁরা জেনেছেন, প্রাক্তন মন্ত্রী তদন্তকারীদের সঠিক তথ্য দেননি। কয়েক দিন আগেই সিআইডি-র গোয়েন্দারা ওই বেসরকারি আবাসন সংস্থার বেশ কয়েক জনকে জেরা করেন। তদন্তকারীদের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা জানান, বিনা টেন্ডারে জমির হস্তান্তর বিষয়টি প্রাক্তন মন্ত্রী জানতেন। এই সূত্রেই কিছু অনিয়মের সন্ধান তদন্তে উঠে এসেছে। এক তদন্তকারী জানান, নয়া তথ্য পেয়েই ঠিক হয়েছে, গৌতমবাবুকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
|