রাস্তার ধারে গাছে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে থাকা জ্যামারের অ্যান্টেনা। সেই ভাঙা জ্যামার নিয়েই গত সোমবার মেদিনীপুর শহর থেকে মাওবাদী প্রভাবিত লালগড়ে গিয়েছিল তাঁর কনভয়। পরের দিন কলকাতা থেকে নতুন জ্যামার নিয়ে গিয়ে কনভয়ে লাগানো হলেও এই ঘটনার জেরে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সরিয়ে দেওয়া হল রাজ্যে ভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এআইজি (সিকিওরিটি) দীপশঙ্কর রুদ্রকে। বৃহস্পতিবারই মহাকরণ থেকে ওই বদলির নির্দেশ বেরিয়েছে। তাঁকে রাজ্য পুলিশের অষ্টম ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডান্ট করা হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য, জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের সেই দাপাদাপি আর নেই ঠিকই। কিন্তু তারা যে ফের ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার সীমানা লাগোয়া এ রাজ্যের গ্রামগুলিতে ঢুকতে শুরু করেছে, এমনকী গোপনে বৈঠকও করছে, সে ব্যাপারে বেশ কিছু দিন ধরেই খবর আসছিল রাজ্যের গোয়েন্দাদের কাছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও একাধিক সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে মহাকরণে। মুখ্যমন্ত্রী যে মাওবাদীদের ‘টার্গেট লিস্ট’-এ আছেন এবং তাঁর নিরাপত্তা যে আরও আঁটোসাটো করা দরকার, এমন সুপারিশও পাঠিয়েছে দিল্লি। এই পরিস্থিতিতে সুরক্ষার সর্বোচ্চ স্তর ‘জেড প্লাস’ মানের নিরাপত্তায় থাকা এক জন ভিআইপি-র কনভয়ের জ্যামার গাছে ধাক্কা খেয়ে কী ভাবে ভেঙে পড়ল, সেই প্রশ্ন তুলেই ওই আইপিএস অফিসারকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা।
রাজ্য পুলিশের একাংশ অবশ্য বলছেন, জ্যামার এতটাই স্পর্শকাতর একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র যে, একমাত্র নির্মাতা সংস্থার পক্ষেই তার রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব। তাই জরুরি পরিস্থিতিতেও বাইরের কোনও সংস্থাকে ওই কাজে হাত লাগাতে দেওয়া হয় না। এক পুলিশকর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে থাকা যে জ্যামারটির অ্যান্টেনা ভেঙে পড়েছে, সেটির রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি ছিল। ২০০৭ সালে ওই যন্ত্র কেনা
হলেও নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে রাজ্য সরকারের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি ছিল না। তাই অল্প আঘাতেই সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
বিরোধী নেত্রী থাকাকালীনই মমতাকে ‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তা দিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। কিন্তু কোনও দিনই রাজ্য পুলিশের ঘেরাটোপে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না
তিনি। তাই সেই সময়ে ‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তা নেননি মমতা। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরেও
খুব কম সংখ্যক পুলিশ নিয়েই এত দিন চলাফেরা করেছেন। কিন্তু জুন মাসে ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস নেতাদের উপরে মাওবাদী হামলার পরে নড়েচড়ে বসেন
এ রাজ্যের পুলিশকর্তারা। রাজ্য
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তা
বলেন, “দিল্লির পাঠানো একাধিক সতর্কবার্তা দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে অনেক বোঝানোর পরে জেলা সফরে বুলেটপ্রুফ গাড়ি নিতে রাজি হন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নিরাপত্তার ব্যাকরণ মেনেই তাঁর সাম্প্রতিক জঙ্গলমহল সফরে কনভয়ের গাড়িতে লাগানো হয়েছিল জ্যামার।”
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, যে গাড়িতে ভিআইপি থাকেন, মূলত তারই আগে-পিছে জ্যামার লাগানো গাড়ি রাখা হয়। রবিবার যখন মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে মেদিনীপুর শহরে পৌঁছয়, তখনও জ্যামারটি ঠিকই ছিল। বিপত্তি বাধে পরের দিন, যখন মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় লালগড়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেই সময়েই ঝিটকার জঙ্গলে রাস্তার পাথে নুয়ে পড়া একটি গাছে ধাক্কা লেগে জ্যামারের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। ওই পুলিশকর্তা জানান, জ্যামার লাগানো গাড়ির ঠিক পিছনেই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। ফলে ঘটনাটি
তাঁরও নজরে পড়ে। ওই কনভয়েই ছিলেন রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা তথা মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য নিরাপত্তা অফিসার বীরেন্দ্র। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকেই বীরেন্দ্রকে ফোন করে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, জ্যামার সংক্রান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি কোন পুলিশ অফিসারের দেখার কথা। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফিরেই তিনি এআইজি (সিকিওরিটি)-কে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সে দিনই বদলির নির্দেশ বেরিয়ে যায়। |