প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক পাকিস্তান সফর নিয়ে রাজ্য সরকারের তোলা যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের সচিব জে সুন্দরশেখর শুক্রবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ওই সফর ছিল ব্যক্তিগত। সরকারি খরচেও তিনি যাননি। তাই সরকারকে তা জানানোর প্রয়োজন ছিল না। এ কথা জানিয়ে সচিব চিঠিতে স্পষ্ট করেছেন, সরকারকে না জানিয়ে পাকিস্তান গিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কোনও অন্যায় করেননি।
গত ৪ অগস্ট স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনের সচিবকে চিঠি দিয়ে পাঁচ দফা প্রশ্ন করেছিলেন। সরকারের প্রশ্ন ছিল, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের ওই সফর সরকারি না ব্যক্তিগত, কোন উদ্দেশ্যে, কার খরচে এবং সফরের অনুমতি ছিল কি না। কমিশনের চেয়ারম্যান তথা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় জবাব দিয়ে বলেন, “আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল এক জন আইনজ্ঞ হিসেবে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান তো দূরের কথা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হিসেবেও আমাকে ডাকা হয়নি। ফলে নিতান্তই এই ব্যক্তিগত সফর সরকারকে জানাতে যাব কেন? সরকার বা মানবাধিকার কমিশনের খরচও তো আমি নিইনি। উদ্যোক্তাদের খরচেই যাতায়াত করেছি।”
কিন্তু পাকিস্তানে গিয়ে বিদেশি আতিথ্য নেওয়ার জন্য তো ফরেন কন্ট্রিবিউশন (রেগুলেশন) অ্যাক্ট-২০১০ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্র নেওয়ার কথা। তা কি নিয়েছিলেন? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের জবাব, “আইনে বলা আছে, কর্মরত বিচারপতিরা বিদেশে গেলে ওই ছাড়পত্র নিতে হবে। আমি তো এখন বিচারপতি নই, অবসর নিয়েছি। ফলে এই ছাড়পত্র আমার প্রয়োজন নেই। যদি জানতেই হয়, তা জানবে কেন্দ্রীয় সরকার।” আর বিদেশে যাওয়ার আগে রাজ্যপালের কাছে আগাম অনুমতি বা ছুটি নিয়েছিলেন কি? মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, ব্যক্তিগত সফরে এটা প্রয়োজন পড়ে না।
কমিশনের এক কর্তা বলেন, “জানতে চাওয়া হয়েছিল, সফর সরকারি না বেসরকারি? যদি সরকারি হয় তা হলে আরও পাঁচটি প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। আমরা চাইলে সফর ব্যক্তিগত, তা জানিয়েই ছেড়ে দিতে পারতাম। কিন্তু তা করা হয়নি।” কমিশন যে জবাব দিয়েছে, তা সরকারি সূত্রেও জানানো হয়েছে।
কমিশনের জবাবে কি সরকার সন্তুষ্ট? মহাকরণের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য: “সফর সরকারি হোক বা ব্যক্তিগত, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি দেশের বাইরে গেলে রাজ্যপালের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। তা হয়নি। তা ছাড়া যে হেতু তিনি পাকিস্তান গিয়েছিলেন, ফলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও জানাতে হতো।” প্রশাসনের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অফ লেবার, এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পিআইএলইআর) এবং হমদর্দ আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে কাদের মদত এবং সহায়তা আছে, তাই নিয়েও। ভারতের হিউম্যান রাইটস ল নেটওয়ার্ক (এইচআরএলএম)-এর সঙ্গে এই দুই সংস্থা যৌথ ভাবে আলোচনাসভাটির আয়োজন করে।
এখন সরকার কী করবে? “সবে চিঠি এসেছে। আইন দফতরের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে”- জানান ওই কর্তা।
সরকারি সূত্রের খবর, জুনের প্রথম সপ্তাহে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পাকিস্তান যান। হমদর্দ আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত পাকিস্তানের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া ভারত থেকে তিন আইনজীবীও যান। তাঁরা হলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, কলিন গঞ্জালেস এবং গুজরাত হাইকোর্টের আইনজীবী মুকুল সিনহা।
|