সুপ্রিম কোর্টের মত শুনে
নিয়োগেও ফাঁপরে রাজ্য
সুপ্রিম কোর্টে ফের বেকায়দায় রাজ্য সরকার। এ বার কর্মী নিয়োগ নিয়ে।
বামফ্রন্ট আমলে, ২০১০ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেচ দফতরে চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের জন্য ১ হাজার ৪৪৬ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যাল (স্যাট)-এ মামলা করেন দু’জন। নিয়োগ পদ্ধতি যথাযথ নয় বলে রায় দেয় স্যাট। এর পর কলকাতা হাইকোর্টও স্যাটের ওই রায় বহাল রাখলে নিয়োগ তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা দ্বারস্থ হন সুপ্রিম কোর্টের। স্যাট ও হাইকোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ওই তালিকা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এইচ এল দাত্তু এবং বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চ শুক্রবার এই মামলার শুনানি চলাকালে যে মন্তব্য করেছে, রাজ্য সরকারকে তা অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। মামলাটির রায় ঘোষণা হতে পারে কাল। তবে তার আগে বিচারপতিরা আজ মত প্রকাশ করেছেন, ২০১০ সালে যাঁদের নাম নিয়োগের জন্য তালিকভুক্ত হয়েছিল, অবিলম্বে তাঁদের নিয়োগ করা উচিত।
শীর্ষ আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবীরা এ দিন যুক্তি দেন, ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ এই নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৪৪৬ জন সফল হন। ওই নিয়োগের বিরুদ্ধে দু’জন স্যাটে মামলা করেছিলেন। দু’জনের জন্য এত জনকে কেন বঞ্চিত করা হবে? কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে এর বিরুদ্ধ মত পেশ করা হলে বিচারপতিরা প্রশ্ন করেন, “সরকারের অসুবিধাটা কোথায়? রাজ্য সরকারই তো এই সব শূন্যপদে নিয়োগ করতে চেয়েছিল। যে দু’জন বিজ্ঞাপন না দিয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আপত্তি জানিয়েছেন, তাঁরা যোগ্য বলে মনোনীত হলে তাঁদেরও নিয়োগ করা হোক।”
বিচারপতিদের এই মত কিছুটা চাপে ফেলেছে রাজ্য সরকারকে। রাজ্যের কোষাগারের যা হাল, তাতে এত জনকে এক সঙ্গে নিয়োগ করতে হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সমস্যায় পড়তে হবে বলে মনে করেন মহাকরণের আমলারা। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের ওই পর্যবেক্ষণ শুনে এ দিন বলেন, “আদালত রায়েও যদি এমন কথা বলে, তবে আইনজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে রাজ্য।” সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা তো নিয়োগ করতেই চেয়েছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট সেই কথাই বলেছে। তবে আদালত কিন্তু চূড়ান্ত রায় দেয়নি। সবটাই পর্যবেক্ষণ।”
আবেদনকারীদের আইনজীবী কে এন জানজানি এবং প্রদীপ স্যান্যালের যুক্তি, আদালত রায় ঘোষণা না করলেও বিচারপতিরা তাঁদের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। জানজানি বলেন, “বিচারপতিরা বলেছেন, যাঁদের নাম প্যানেলে রয়েছে, তাঁদের তো কোনও দোষ নেই। এঁদের নাম পাঠিয়েছে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ। তাঁরা প্রত্যেকে মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছেন। তার উপরে এটা মানুষের রুটিরুজির প্রশ্ন। তাই ২০১০ সালের তালিকা বাতিল হবে না। তবে বিজ্ঞাপন দিয়ে আবেদনপত্র চাওয়া হয়নি বলে যে দু’জন মামলা করেছেন,তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করুক রাজ্য সরকার।”
মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে ২০০৬ সালে ওই নিয়োগের বিষয়ে তৎপর হয় সেচ দফতর। ১ হাজার ৪৪৬ টি পদের জন্য কর্মসংস্থান কেন্দ্র থেকে নাম চেয়ে পাঠানো হয়। নিয়ম মতো, পদপিছু ২০ জন হিসেবে প্রায় ২৯ হাজার কর্মপ্রার্থীর নাম পাঠায় তারা। এ ছাড়াও বিজ্ঞাপন না দিয়ে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর বিরুদ্ধে যাঁরা স্যাট-এ এবং কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন, সেই রকম আরও কয়েক হাজার জনকে চিহ্নিত করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৭ হাজার কর্মপ্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকে সেচ দফতর। সেটা ২০০৮ সাল। ২০১০ সালের মাঝামাঝি ১ হাজার ৪৪৬ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে সেচ দফতর। তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন সার্কেল অফিসে। কিন্তু এই নিয়োগ নিয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠায় সরকার এক সদস্যের কমিশন গঠন করে। তাতে চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া আটকে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ শুনে খুশি রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর। বস্তুত, তাঁর আমলেই এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ দিন তিনি বলেন, “সরকারের নিয়ম মেনেই আমরা নিয়োগের তালিকা তৈরি করেছিলাম। সর্বোচ্চ আদালত তাতে শিলমোহর দিলে প্রমাণিত হবে, আমরা ঠিক ছিলাম।” ওই চাকরিপ্রার্থীদের প্রথম থেকেই সাহায্য করে আসছিল বিপ্লবী যুব ফ্রন্ট। সংগঠনের যুগ্ম-সভাপতি অঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, “এতগুলো পরিবার এই দিনটির অপেক্ষা করছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণ জানানোর পরে মনে হচ্ছে আমাদের লড়াই সফল হওয়ার পথে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.