রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমির সলতে পাকানোর কাজই শুরু হয়নি। উদ্বোধন উপলক্ষে মোহনবাগান মাঠে সাড়ে সাতশো ছেলেকে নিয়ে উৎসব হয়েছে মাত্র। আর তাতেই এক অভূতপূর্ব ঝামেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। তীব্র চাপান-উতোরে জড়িয়ে পড়েছেন অলিম্পিয়ান থেকে প্রাক্তন নামী ফুটবলার। স্পোর্টস কাউন্সিল থেকে ফুটবল অ্যাকাডেমির কমিটি। বাদ যাননি ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রও। এমনকী বি ও এ প্রেসিডেন্ট মুখ্যমন্ত্রীর দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
স্পোর্টস কাউন্সিলের বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। আরও কয়েক জন পদত্যাগের লাইনে দাঁড়িয়ে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি এড়াতে বিক্ষুব্ধ সদস্যদের ফোন করছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। ৩০ জুলাই তড়িঘড়ি সভা ডেকে দিয়েছেন স্পোর্টস কাউন্সিলের। জানিয়ে দিয়েছেন, সেখানে সবাই এসে তাঁদের মতামত জানাক। পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হওয়ার আগেই ক্রীড়ামন্ত্রী লিখিত ভাবে বলে দিয়েছেন,“আমার ব্যক্তিগত ব্যবহারে বা আচরণে কোনও বর্ষীয়ান খেলোয়াড় যদি দুঃখ পেয়ে থাকেন তা হলে আমার অজান্তেই ঘটেছে।”
কিন্তু তাতেও ঝামেলা কমছে না। ফুটবল অ্যাকাডেমির জন্য সরকারি ভাবে নিযুক্ত টিডি কাম কোচ গৌতম সরকারের আনন্দবাজারে প্রকাশিত লেখার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ক্রীড়া পর্ষদের পদত্যাগী তিন সদস্য। কোর কমিটির চেয়ারম্যান প্রবীণ সাংবাদিক শ্যামসুন্দর ঘোষ, প্রাক্তন তারকা ফুটবলার সুকুমার সমাজপতি এবং অলিম্পিয়ান বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়। গৌতমের লেখা সম্পর্কে দু’বারের আই লিগ-সহ ১৯ টি ট্রফি জয়ী কোচ ও পর্ষদের পরামর্শদাতা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত ভট্টাচার্য বললেন, “খেলোয়াড় জীবনে গৌতম ছিল জ্বলন্ত প্রদীপ, এখন ধোঁয়া ছাড়া কিছুই নেই।” শ্যামসুন্দর বলেছেন, “মরিশাসে ভারতীয় দল নিয়ে গিয়ে এবং বিদেশে মেয়রের দল নিয়ে গিয়ে গৌতম মনে হয় গোটা চল্লিশেক গোল খেয়েছিল। কোথাও কোনও সাফল্যও নেই। সে অলিম্পিয়ানদের, সফল কোচেদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দেখে আমি বিস্মিত।” আর ক্রীড়া পর্ষদের কাজের বিরুদ্ধে সরব সুকুমার সমাজপতির মন্তব্য, “একটা অ্যাকাডেমির কোচ হওয়ার জন্য একজন নামী ফুটবলার ক্রীড়ামন্ত্রীর হয়ে ব্যাটন ধরছে দেখে অবাক হয়েছি। ওর লেখার বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করতে রুচিতে বাঁধছে। ও তো ক্রীড়া পর্ষদের কেউ নয়। ও কথা বলার কে?” আর অলিম্পিয়ান বদ্রু এত ক্ষুব্ধ যে বলে ফেললেন, “গৌতম জানে না আমি ফুটবলের জন্য ফেডারেশন থেকে ক্রীড়া পর্ষদে কত কাজ করেছি। ওর কোচিং যোগ্যতা কী? কী সাফল্য পেয়েছে?”
চাপান-উতোর চললেও সব থেকে মজার ব্যাপার হল, সব পক্ষই কিন্তু চাইছে রাজ্যে একটা ফুটবল অ্যাকাডেমি হোক। সমস্যাটা হল, সেটা কোন পথে? কী ভাবে? অ্যাকাডেমি নিয়ে প্রশ্ন তোলা পক্ষের প্রশ্ন, আবাসিক শিবিরে কোথায় থাকবে ফুটবলাররা? কোন মাঠে খেলা হবে? ফুটবলার বাছাই হবে কীভাবে? কোন স্কুলে পড়বে? শিবির যেখানে টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেখানে অ্যাকাডেমির জন্য প্রস্তাবিত ৪০ লাখ টাকা আসবে কোথা থেকে? কবে শুরু হবে অ্যাকাডেমি? এ সবের উত্তর নেই এখনও।
যেমন শুক্রবারও উত্তর মেলেনি।
১) গ্রামে-গঞ্জে যে ৮৯ টি শিবির চালু করেছিল ক্রীড়া পর্ষদ এবং যা টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেগুলো কবে চালু হবে। পর্ষদ থেকে বকেয়া টাকা আদৌ পাবে পকেট থেকে গত দু’বছর শিবির চালানো গরিব সংস্থাগুলো? এবং ওই শিবিরের ফুটবলারদের থেকে রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলোয়াড় নেওয়া হবে কী না?
২) রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমির টিডি কাম কোচ হিসাবে গৌতম সরকারের মনোনয়ন বা অ্যাকাডেমির অন্য কমিটিগুলো পর্ষদের কোন সভায় ঠিক হয়েছে?
আরও একটি বিষয় নিয়ে ঝামেলা অব্যাহত। সেটা হল পর্ষদের কোনও কোর কমিটি আদৌ তৈরি হয়েছিল ছিল কিনা? ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র চিঠি দিয়ে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, “একটি কমিটি হয়েছিল তবে সেটা মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য।” ‘কোর কমিটি’-র শব্দটির সেখানে উল্লেখ নেই। কিন্তু ক্রীড়ামন্ত্রীর পাল্টা শ্যামসুন্দর ঘোষ একটি সরকারি মেমো পাঠিয়েছেন আনন্দবাজারে। সেখানে ২৭ মার্চ ২০১২- তে মদনবাবুর সই করা সেই সরকারি সিদ্ধান্তের মেমোতে ১০ জনের কোর কমিটির নাম রয়েছে। চেয়ারম্যান হিসাবে লেখা রয়েছে শ্যামবাবুর নাম।
নানা ঝামেলায় রাজ্যের খেলাধুলা নিয়ন্ত্রণের প্রধান সরকারি সংস্থা যখন তোলপাড় তখন সাংসদ-ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, “সবাই মিলে বসে ফুটবল অ্যাকাডেমি নিয়ে সিদ্ধান্ত হোক। এটা খুব ভাল কাজ। আমাকে ডাকলে সমস্যা মেটাতে রাজি।”
|