বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ার সময় স্বামীজিরা বলতেন, জীবনে একা হয়ে গেলেও সততার পথ কখনও ছাড়বে না। কারণ কোনও কিছুর জন্যই জীবনে সত্যের পথ ছাড়া চলে না।
সেই ফুটবলার জীবন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, খেলা ছাড়ার পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কিছু দিয়ে যাব। অ্যাকাডেমি তৈরি করে বাংলাকে এমন কিছু ফুটবলার উপহার দিতে হবে যাদের দক্ষতার কাছে গৌতম সরকারও তুচ্ছ। এ বছরের শুরুর দিকেই ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমির দায়িত্ব যে দিন আমার হাতে দিলেন, সে দিন ছিল স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতে চলার আনন্দ। পরদিন থেকেই নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়েছি। পাঁচ বছর ধরে যুক্ত হিন্দমোটর ফুটবল অ্যাকাডেমির দায়িত্ব ছেড়ে কাজটা করতে এসেছি। কারণ, ফাঁকিবাজি শব্দটা আমার অভিধানে নেই।
কিন্তু দুঃখটা একটাই জায়গায়। যাদের সঙ্গে নিয়ে এই স্বপ্নের কাজ শুরু করেছিলাম সেই সব বন্ধুরাই সংবাদমাধ্যমে দিন কয়েক ধরে এই ফুটবল অ্যাকাডেমি নিয়ে যা খুশি তাই বলে বেড়াচ্ছেন। যার সবটাই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।
নিজেকে রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদের কোর কমিটির চেয়ারম্যান বলে জাহির করা এক বর্ষীয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক অ্যাকাডেমির সততা প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদকে এড়িয়ে তৈরি হয়েছে রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমির কমিটি। মানতে পারলাম না। যেখানে স্বয়ং ক্রীড়ামন্ত্রী এর মধ্যে যুক্ত তখন এই প্রশ্ন ওঠে কী ভাবে? ওই শ্রদ্ধেয় সাংবাদিকের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনাকে কোর কমিটির চেয়ারম্যান কে করল? কবে?
আনন্দবাজারেই পড়লাম ৮৩ বছরের এক অলিম্পিয়ান বলেছেন, তাঁর কথা শোনা হয় না। তাই তিনি পদ ছাড়ছেন। ওই প্রাক্তনকে বলতে ইচ্ছে করছে, আপনি কী প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা বলুন না! কেন অযথা বিতর্ক তৈরি করছেন? চুনীদা, প্রদীপদা, শ্যাম, প্রসূন, সমরেশ, সুধীররা তা হলে অ্যাকাডেমির প্রশংসা করছেন কেন?
সিনিয়র আর এক প্রাক্তন ফুটবলার বলেছেন তিনি নাকি গ্রাম থেকে খেলোয়াড় তুলে আনতে গিয়ে হতাশ হয়েছেন। তাঁর কাছে প্রশ্ন, কবে, কোন গ্রামে গিয়েছেন এক বার বলবেন? জেলাশাসকরা কিন্তু কোনও গ্রামেই আপনাদের উপস্থিতি টের পাননি। ক্রীড়া পর্ষদের যুগ্ম সচিব জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করলেই এটা আরও স্পষ্ট হবে।
অ্যাকাডেমির পরামর্শদাতা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবার ফুটবলার ও কোচ হিসাবে নিজেকে সবার আগে রাখেন। সেই সর্বজ্ঞ ফুটবলার বন্ধুটি আবার জানতে চেয়েছে আমার কোচিং যোগ্যতা কী? অ্যাকাডেমির জন্য পরিকল্পনার কী নকশা জমা দিয়েছি? তাঁর কাছে আমার ছোট্ট জিজ্ঞাসা, আপনি তো এত কিছু জানেন, কোচিং এবং ট্রেনিং-এর ফারাকটা কী একটু বলবেন?
আর আমার কোচিং দক্ষতা? ডিক হাওয়ার্ড, অ্যান্ডি রক্সবার্গ, রিচার্ড ডেট, জোসেফ হিকাস বার্গারদের সই করা শংসাপত্র তা হলে কি কিনে আনলাম? দুই প্রধানে খেলা ভাইচুং, বাসুদেব, অজয় সিংহ, আরপি সিংহ, সুমন দত্ত, সরোজ দাসরা কার কোচিংয়ে উঠে এসেছে সেটা ওদেরই জিজ্ঞাসা করুন না! আর আমি চিফ কোচ না টিডি? আমার কাজটা টিডির। সেটাও জানিয়ে দিলাম।
জানি, আপনাদের অনেক প্রশ্ন। কবে অ্যাকাডেমি শুরু হবে? ফুটবলাররা কোথায় থাকবে এবং কোথায় পড়াশোনা করবে? পুজোর আগেই এই অ্যাকাডেমির বাছাই পর্ব শেষ হয়ে যাত্রা শুরু হবে। সব আয়োজন সম্পূর্ণ করতেই রাজ্য সরকার কোমর কষে পরিকল্পনা করেছে।
অনুরোধ একটাই, আমাকে পছন্দ না হলে যা খুশি তাই বলুন। কিন্তু রাজ্য সরকারের অ্যাকাডেমির সততা নিয়ে মিথ্যা প্রশ্ন তুলে জল ঘোলা করবেন না। অ্যাকাডেমি করতে সকলের সহযোগিতা চাই। না হলে একটা সুন্দর উদ্যোগ মাঠে মারা যাবে।
|