রাজ্য ক্রীড়া দফতরের কাজকর্মে বিরক্ত ও বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিন নামী প্রাক্তন ফুটবলার ক্রীড়া পর্ষদের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এঁরা হলেন বদ্রু বন্দোপাধ্যায়, সুকুমার সমাজপতি এবং সুব্রত ভট্টাচার্য।
অলিম্পিয়ান বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বলে দিলেন, “আমাদের কোনও কথাই শোনা হচ্ছে না। তা হলে কমিটিতে থেকে কী লাভ? ৮৩ বছর বয়স আমার। সভা ডেকে ক্রীড়ামন্ত্রী তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখছেন। শম্ভু মল্লিকের আমল থেকে ক্রীড়া পর্ষদে যাচ্ছি আমি। এ রকম অবস্থা কখনও দেখিনি।”
ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ আর এক প্রাক্তন সুকুমার সমাজপতির মন্তব্য, “গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিভিন্ন খেলার শিবির শুরু করেছিলাম। সেখান থেকে খেলোয়াড় তুলে আনা যেত। দু’বছর চলার পর সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হল। খাওয়ার পয়সাও এখনও পায়নি ওরা। খুব খারাপ লাগছে। আর পর্ষদের কোনও সভায় যাব না।”
পরামর্শদাতা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছিল সুব্রত ভট্টাচার্যকে। দু’বছরে সভার কোনও চিঠিই পাননি। বলে দিলেন, “ফুটবল অ্যাকাডেমি নিয়ে হইচই হচ্ছে। যাঁদের বাছা হয়েছে অ্যাকাডেমির কোচিং করানোর জন্য, তাঁদের কাছ থেকে কোনও পরিকল্পনার নকশা নেওয়া হয়েছে? আমি জেলায় যাই। কোনও সাহায্যই ওরা পাচ্ছে না সরকারের তরফ থেকে। আমি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
অর্থের অভাবে পর্ষদের বিভিন্ন খেলায় ৮৯টি শিবির বন্ধ। অথচ টাকার দান-খয়রাত চলছে উৎসব করে। কোচ-সহ পর্ষদের বিভিন্ন বেহিসেবি কাজকর্ম নিয়ে তোলপাড় ময়দান। নেতাজি ইন্ডোরের অফিসে অবশ্য কোনও হেলদোল নেই। বুধবার দুপুরে কোচেদের ঘরে দিয়ে দেখা গেল ৪২ জনের মধ্যে মাত্র চার জন বসে আছেন। বাকি ৩৮ জন কোথায় গিয়েছেন কেউ জানেন না। ছোট খেলার কিছু লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন নানা সাহায্যের জন্য। ক্রীড়া পর্ষদের কাছ থেকে তাঁদের প্রাপ্য টাকা পাননি বহু দিন। অ্যাথলেটিক্স, টেবল টেনিস, জিমন্যাস্টিক্স-সহ বিভিন্ন খেলার লোকজন এত দিন জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলতে গেলে খাওয়া, থাকা এবং ট্রেনের অর্ধেক ভাড়া পেতেন পর্ষদ থেকে। সেটা গত চার বছর পাননি ওরা। বি ও এ সূত্রের খবর রাজ্যের ৩৩টি খেলার সংস্থা এই খাতে পান প্রায় দেড় কোটি।
বিভিন্ন ছোট খেলার রাজ্য সংস্থা এই বকেয়া টাকা কবে পাবে তা জানতে ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে দরবার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি আবার বি ও এ প্রেসিডেন্ট। তাঁকে শুনতে হয়েছে “ওটা রীতি ছিল। সরকারি ভাবে কোনও নিয়ম নেই।” ফলে ছোট খেলার কর্তারা তীব্র সমস্যায়। জাতীয় স্তরের কোনও প্রতিযোগিতা হলে সংস্থাগুলিকে রাজ্য সরকার যে আর্থিক সাহায্য করে তার অবশ্য কোনও নিয়ম নেই। ক্রীড়ামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হলে জোটে দশ লাখ। না হলে এক লাখ।
এরই মধ্যে অবশ্য রাজ্য ফুটবল আ্যাকাডেমি চালু করার তোড়জোড় চলছে। ক্রীড়ামন্ত্রী যাঁকে একই সঙ্গে এই অ্যাকাডেমির টিডি এবং চিফ কোচ নির্বাচিত করেছেন সেই গৌতম সরকার বললেন, “খেলোয়াড় বাছাই করতে সময় লাগছে। সেটা হলেই সব চালু হয়ে যাবে।” কিন্তু কোথায় হবে অ্যাকাডেমি? প্রাক্তন তারকা ফুটবলার বললেন, “মাঠের খোঁজ চলছে। সব ঠিকঠাক করতে সময় লাগবে।” |