নিরুত্তাপ সিঙ্গুর তাকিয়ে
সুপ্রিম কোর্টের দিকে
সুপ্রিম কোর্টে ১৩ অগস্ট কী হয়, তা নিয়েই শুধু জল্পনা। ভোটের সিঙ্গুর পুরো নিস্তরঙ্গ।
রাস্তাঘাট নিয়ে অভিযোগ? নলকূপ বসেছে? ১০০ দিনের কাজ? সেচের ব্যবস্থা? গ্রামোন্নয়নের এ সব বিষয় নিয়েই তো পঞ্চায়েত ভোটে বাজার গরম হয়। কোথায় কী! সোমবার ভোট। অথচ, সিঙ্গুর তাতেনি। পঞ্চায়েতের পরিষেবার প্রশ্নে গ্রামবাসীদের মতামতও যেন দায়সারা। সব কিছু ছাপিয়ে বারবার উঠে আসছে সেই প্রশ্নটাই জমি!
আসলে সাত বছর ধরে জমি আর সিঙ্গুর সমার্থক হয়ে গিয়েছে। মাঝখানে কেটেছে একটি পঞ্চায়েত ভোটও। বামেদের হারিয়ে সিঙ্গুরের ১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৫টিতে ক্ষমতা কায়েম করে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের তিনটি আসনেও ক্ষমতায় ছিল শাসক দল। কিন্তু টাটা প্রকল্পে চলে যাওয়া ‘অনিচ্ছুক’দের জমি এখনও প্রতিশ্রুতিমতো ফেরাতে পারেনি রাজ্য সরকার। তাই যাবতীয় জল্পনা চলছে ১৩ অগস্ট নিয়ে। সে দিনই তো সিঙ্গুরের জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে তাঁদের পরিকল্পনা জানানোর কথা টাটা মোটরসের।
বাজেমিলিয়ার দিলীপ কোলে যেমন মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের পক্ষে রায় দেবে। গোপালনগরের অশোক মৈত্রের আশা, “এ বার জমি ফেরত পাব।” বাজেমিলিয়ার মহাদেব সাঁতরা অবশ্য সন্দিহান, “জমি কি আর মিলবে?” তিন জনেই ‘অনিচ্ছুক’। কারও পারিবারিক আট বিঘা জমি গিয়েছে টাটাদের প্রকল্পে। কারও এক বিঘা, কারও চার কাঠা।
তা হলে কি পঞ্চায়েত পরিষেবা নিয়ে হুগলির এই জনপদে গ্রামবাসীদের অভাব-অভিযোগ নেই? রাজনৈতিক চাপান-উতোর নেই? প্রচারের হইহই নেই? সব আছে। কিন্তু উচ্চগ্রামে নয়। আসলে জমি-আন্দোলন পর্ব বাদ দিলে সিঙ্গুর বরাবরই শান্তিপ্রিয়। গত পঞ্চায়েত ভোটে তো বটেই, এ বারেও এখনও তেমন রাজনৈতিক অশান্তি হয়নি। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ২৯০টি আসনে সব দলই প্রার্থী দিয়েছে। কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতেনি। প্রার্থীদের ভয় দেখানোর তেমন কোনও অভিযোগও জমা পড়েনি পুলিশের কাছে।
খালি চোখেও ধরা পড়ে, শান্তির আবহ। গোপালনগর, বেড়াবেড়ি, খাসেরভেড়ি, কামারকুণ্ডু, বলরামবাটী, রতনপুর নানা তল্লাটে রাস্তার দু’প্রান্তে তৃণমূল-সিপিএম দু’পক্ষেরই দলীয় পতাকা উড়ছে। ফ্লেক্স-ব্যানারও দেখা যাচ্ছে পাশাপাশি। বহু রাস্তাতেই মোরাম পড়েছে। নলকূপ বসেছে। গ্রামে ঘুরলে পুকুর সংস্কারের কাজও চোখে পড়ে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১-১২ অর্থবর্ষে গোটা ব্লকে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ হয়েছে ৩২ দিন। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয়েছে ৩৯.৭ দিন।
অমুক রাস্তাটা এখনও তৈরি হয়নি, ওই পুকুরটা বাঁধানো হয়নি, বার্ধক্য-ভাতা মিলছে না এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বহু গ্রামবাসীই পঞ্চায়েতগুলির কাজে সন্তুষ্ট। ১৯৭৭ থেকে এ পর্যন্ত সিঙ্গুরের গোপালনগর পঞ্চায়েত একবারও হাতছাড়া হয়নি বামেদের। সেই পঞ্চায়েতের ভাণ্ডারীপাড়ার বাসিন্দা মিঠু পালের কথায়, “পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ নেই। পঞ্চায়েত ভালই কাজ করেছে।” একই সুরে তৃণমূল পরিচালিত কেজিডি পঞ্চায়েতের অশোক মাঝি বলেন, “পঞ্চায়েত খারাপ কাজ করেছে বলতে পারব না।”
তা হলে কোথায় ভোটের উত্তাপ?
ছোট ছোট পথসভা, মিছিল, লিফলেট বিলি করে তৃণমূল চাইছে ১৫-১ হিসেবটা পাল্টে এ বার গ্রাম পঞ্চায়েতে বামেদের ১৬-০ ফলে হারানোর। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের তিনটি আসনেও ক্ষমতা ধরে রাখতে তারা মরিয়া। প্রচারে তারা তুলে ধরছে সিঙ্গুর তথা রাজ্যের ‘উন্নয়ন’। এর সঙ্গে রথের দিন সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে টাটা মোটরসকে সিঙ্গুরের জমি নিয়ে তাদের পরিকল্পার কথা জানাতে বলেছে, সেটাকেও যোগ করছে তারা। ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নাই সিঙ্গুরে দলকে নেত্ৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, “যে ভাবে উন্নয়ন হয়েছে, ১৬টি পঞ্চায়েতেই আমরা জিতব। গত বার তিনটি পঞ্চায়েত (সিঙ্গুর-২, নসিবপুর এবং কেজিডি) বিরোধীশূন্য ছিল। দু’টি পঞ্চায়েতে (আনন্দনগর, বেড়াবেড়ি) এক জন বিরোধী ছিল। এ বার ওই পাঁচটিই বিরোধীশূন্য হবে।”
যা শুনে হাসছেন সিপিএমের সিঙ্গুর জোনাল কমিটির সম্পাদক পাঁচকড়ি দাস। শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, ‘অনুন্নয়ন’ এবং সিঙ্গুরে জমি ফেরতের ‘ভাঁওতাবাজি’কে প্রচারে তুলে ধরে কেল্লা ফতে করার পরিকল্পনায় মশগুল তাঁরা। পাঁচকড়িবাবুর অভিযোগ, “উন্নয়নের নামে ওরা পুকুর চুরি করেছে। ওদের পঞ্চায়েতগুলিতে প্রচুর দুর্নীতি, স্বজনপোষণ। আর এখনও তো ওরা টাটাদের প্রকল্প থেকে জমিই ফেরত দিতে পারল না।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “এ বার পঞ্চায়েতে হিসেব উল্টে যাবে। বেশির ভাগ পঞ্চায়েত আমরা পাব।”
কী ভাবে? পাঁচকড়িবাবুর ভরসা, “১৯৯৮ এর ভোটে ওরা ১১টা, আমরা পাঁচটা পঞ্চায়েতে জিতেছিলাম। ২০০৩-এ হিসেবটা পুরো উল্টো হয়। ২০০৮-এর আমরা পেলাম একটা, ওরা ১৫টা। এ বার তো আমাদের পালা।”
তৃণমূল অবশ্য বামেদের এই ‘তত্ত্ব’ নিয়ে ভাবছে না। তাদের কপালে কিছুটা ভাঁজ ফেলেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য গোষ্ঠী বনাম বেচারাম মান্না গোষ্ঠীর ‘লড়াই’। যার শুরু বেশ কয়েক মাস আগে দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথবাবুর ‘তোলাবাজি’র তোপ দাগা থেকে। এ বার ভোটের টিকিট বিলি এবং প্রচারেও সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া দেখা যাচ্ছে। নেতারা ঠারেঠোরে ঘনিষ্ঠ মাহলে সে কথা মানছেনও। কিন্তু তাতে পারদ চড়েনি।
ভোটের সিঙ্গুর নিস্তরঙ্গই।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.