পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মধ্যে বিস্তর টানাপোড়েন এবং আইন-আদালত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে ভোটের জট খোলার পরে জানা যাচ্ছে, সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা আধাসেনা দেওয়া সম্ভব হবে না। ভোটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বৃহস্পতিবার সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরে এই ইঙ্গিত দিয়েছে কমিশনই। তবে তারা জানায়, কোনও ভোটকেন্দ্রে একাধিক বুথ থাকলে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে।
প্রথম দফার পঞ্চায়েত ভোট হবে ১১ জুলাই। জঙ্গলমহল-সহ সংলগ্ন এলাকায় ওই দিনের ভোটের জন্য ৯ জুলাই থেকে টহল দিতে শুরু করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এ দিন ভোটের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-র সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। আজ, শুক্রবার ন’টি জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
কিন্তু সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না কেন?
কমিশনের সচিব তাপস রায় এ দিনের বৈঠকের পরে জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হয়। সেই নিয়মবিধিতে বলা হয়েছে, কোনও জায়গায় তিন থেকে চার জনের কমে (আধ সেকশন) আধাসেনা নিয়োগ করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতি বুথে অত কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া যাচ্ছে না। আদালতেরও তেমন কোনও নির্দেশ নেই।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে কমিশনের এক কর্তা জানান, প্রথম দফায় ১০ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে। এ ছাড়াও এলাকায় টহল, সেক্টর অফিস পাহারা দেওয়ার জন্যও আধাসেনা নিয়োগ করতে হবে। অথচ প্রথম দফার ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে ১৫ হাজার। বাহিনী নিয়োগের নিয়ম (ন্যূনতম তিন থেকে চার জন) মানতে গেলে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া যে সম্ভব নয়, তা পরিষ্কার।
নিরাপত্তার ছবিটা কী দাঁড়াচ্ছে?
কমিশন ও সরকারের আলোচনায় ঠিক হয়েছে, আদালতের নির্দেশে প্রতি বুথে কমপক্ষে দু’জন সশস্ত্র পুলিশ থাকবে। যে-সব ভোটকেন্দ্রে একের বেশি বুথ রয়েছে, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীও থাকবে। কিন্তু একটি বুথবিশিষ্ট ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র পুলিশ থাকলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে না। কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের দুমকায় সাম্প্রতিক মাওবাদী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গলমহলে প্রথম দফার ভোটে নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ওই হামলার জন্যই বীরভূম জেলাতেও ভোটের দিনে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে।
কমিশনের সচিব তাপসবাবু জানান, নির্বাচনী প্রচারের সময় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব জেলা পর্যবেক্ষককে। এ দিন তাঁদের বৈঠকে ডেকে কমিশনের মনোভাব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের বৈঠকে দক্ষিণ দিনাজপুরের পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর গরহাজির থাকার কারণ জানায়নি কমিশন।
নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি ভোটের তারিখ বদলের দাবি এখনও উঠছে। তৃতীয় দফার ভোটের দিন (১৯ জুলাই) পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ১৬টি মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধিরা এ দিন কমিশনের কাছে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁদের আরও দাবি, ভোটদানের সময় পরিবর্তন করে বিকেল ৪টের মধ্যে তা শেষ করার ব্যবস্থা হোক। তাপসবাবু জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই কমিশন ভোটের ব্যবস্থা করছে। আর ভোট নেওয়ার সময়সীমা ঠিক করবে রাজ্য। তবে তিনি জানিয়ে দেন, এই প্রস্তাব রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হবে। মুসলিম সংগঠনের নেতারা এবং ত্বহা সিদ্দিকী এ দিনই মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করে এই দাবি জানিয়ে আসেন।
|