সিআইডি-র কুশপুতুল পোড়াল কামদুনি
সম্পূর্ণ চার্জশিট নিয়ে বুধবার আদালতের মন্তব্যের পর থেকেই সিআইডি-র বিরুদ্ধে রাগে ফুঁসছিল কামদুনি। বৃহস্পতিবার সিআইডি-র কুশপুতুল পুড়িয়ে সেই রাগকেই যেন উগরে দিলেন গ্রামের বাসিন্দারা।
এ দিন সকাল থেকেই কামদুনির বাসিন্দারা সিআইডি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য তৈরি হন। সিআইডি-র কুশপুতুল তৈরির কাজে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিলেন স্থানীয় মহিলারাও। ওই কুশপুতুল নিজের হাতে রঙও করেন তাঁরা। এর পর কুশপুতুলটি নিয়ে গ্রামের বাসিন্দারা কামদুনি মোড়ে জড়ো হন। সেখানে কুশপুতুলে আগুন দিয়ে সিআইডি-র বিরুদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। জ্বলন্ত কুশপুতুলকে লাঠিপেটা করার পাশাপাশি কয়েক জন সেটিতে থুতুও ফেলেন। ক্ষুব্ধ মহিলাদের বক্তব্য, “সিআইডি আর চাই না। ওরা শুধু এলাকায় এসে মাওবাদী খুঁজছে!” সিবিআই-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিও ওঠে বিক্ষোভ থেকে।
গত ৭ জুন কলেজ ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের পরে এ ভাবেই পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান কামদুনির বাসিন্দারা। সেই বিক্ষোভ অন্দোলন কামদুনির গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে রাজ্য জুড়ে। কলকাতার রাজপথেও এ নিয়ে বিচারের দাবিতে পথে নামেন বহু মানুষ। কামদুনির এক মহিলা এ দিন বলেন, “সরকার পক্ষের সবাই বলতে লাগলেন, ‘দোষীদের তো গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের এক মাসের মধ্যে সাজা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর চিন্তা নেই।’ কিন্তু এ ভাবে দোষীদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।”
ক্ষোভের আগুন। কুশপুতুল পোড়াচ্ছেন কামদুনির বাসিন্দারা।
বিক্ষোভকারীদের সামনের সারিতে মৃতার ভাই। ছবি: সুদীপ ঘোষ
এ দিনের বিক্ষোভে পোস্টার হাতে এসেছিলেন মধ্যবয়স্ক এক মহিলা। তাতে লেখা, ‘অসম্পূর্ণ চার্জশিট দেওয়া হল কেন? জবাব চাই।’ কামদুনির এক মহিলা বলেন, “সিআইডি গত এক মাস ধরে শুধু আমাদের গ্রামে মাওবাদী খুঁজে যাচ্ছে! গ্রামে ঢোকা বেরোনোর সময় শুধু পথ আটকে নামধাম জিজ্ঞাসা করে খাতায় লিখে নিচ্ছে! এ সব করেই যদি সময় কাটে, তা হলে তদন্ত করার সময় পাবে কখন?”
সিআইডি-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে কামদুনির ঘরে ঘরে। গ্রামের মহিলারা রাস্তায় নেমে বলছেন, “এ ভাবে তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। দোষীদের সবার ফাঁসি না হলে আমরা দিল্লি যাব। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করব।”
কামদুনিতে যেখানে ওই কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল, কুশপুতুল পুড়িয়ে গ্রামে ফেরার পথে সেই পাঁচিল ঘেরা জায়গাটির সামনে দাঁড়ান বিক্ষোভকারীরা। ভাঙা পাঁচিলটি দেখিয়ে এক মহিলা বলেন, “কামদুনি যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থাতেই রয়েছে। কথা ছিল, ওই পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও ভাঙা হয়নি।” বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নেতা-মন্ত্রীরা কামদুনির বাসিন্দাদের যেমন খুশি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অথচ কোনও প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।
কামদুনির ঘটনায় অসম্পূর্ণ চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রতিবাদে এ দিন সিআইডি-র সদর দফতর ভবানীভবনের সামনে আলাদা ভাবে বিক্ষোভ দেখান গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি ও যুব কংগ্রেসের সদস্যরা। বিক্ষোভে যোগ দিতে আসা কামদুনি বিআর অম্বেডকর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আরতি পাল বলেন, “আমার গ্রামের মেয়ের উপর নারকীয় নির্যাতন হয়েছে। সিআইডি এর সঠিক তদন্ত করছে না। সেই কারণেই এখানে প্রতিবাদ করতে এসেছি।” পরে মহিলা সমিতির নেত্রী রেখা গোস্বামীর নেতৃত্বে পাঁচ জনের এক প্রতিনিধিদল সিআইডি-র এডিজি শিবাজী ঘোষের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেন। পরে রেখাদেবী বলেন, “এ রকম চার্জশিট দেওয়ায় অভিযুক্তরা ছাড়া পেতে পারে বলেই আমাদের আশঙ্কা।” যুব কংগ্রেসের প্রায় শ’পাঁচেক কর্মীও ভবানীভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান। এই জোড়া বিক্ষোভের ফলে সাড়ে তিনটে থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ভবানীভবনের সামনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.