কামদুনিতে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছিল গত ৭ জুন। তার দশ দিন পরে ১৭ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, এক মাসের মধ্যে কামদুনি-কাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে দোষীদের সাজা ঘোষণা হবে। কিন্তু এখন এক মাসের মধ্যে মূল বিচারের কাজই শুরু হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কামদুনির ঘটনা নিয়ে দু’টি আদালতে দু’টি মামলার শুনানি ছিল। একটি কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে, অন্যটি বারাসতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে। কলকাতা হাইকোর্টে কামদুনির ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। আর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে এ দিন সিআইডি-কে চার্জশিটের ভুলভ্রান্তি সংশোধন করে জমা দিতে বলেছিলেন বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়।
হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় জানান, ফরেন্সিক রিপোর্ট জমা পড়তে আরও অন্তত এক মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট তার আগে তৈরি করা যাবে না। বারাসতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে চার্জ গঠনের শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয় ১২ জুলাই পর্যন্ত।
শুনানি পিছোল কেন? এ দিন আদালত বসার সঙ্গে সঙ্গেই চার্জশিট সংশোধন করে পেশ করার জন্য কিছুটা সময় চেয়ে নেন বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি সন্দীপ ভট্টাচার্য। আদালতে তিনি জানান, সিআইডি-র তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। পর্যায়ক্রমে ফরেন্সিক রিপোর্ট-সহ আরও তদন্ত রিপোর্ট, সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। এর পরেই বিচারক জানান, ১২ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
হাইকোর্টের জনস্বার্থ মামলাতেও এ দিন সিআইডি-র ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের প্রসঙ্গটি ওঠে। আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, মঙ্গলবার বারাসত আদালতে সিআইডি যে চার্জশিট পেশ করেছে, তা অসম্পূর্ণ। সেই চার্জশিটে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট নেই। কেমিক্যাল রিপোর্টও নেই। এফআইআর-এ থাকা অনেকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার এফআইআর-এ নেই অথচ চার্জশিটে নাম রয়েছে, এমনও হয়েছে। আইনজীবী সওয়াল করেন, কামদুনির ঘটনার তদন্ত ও চার্জশিট নিয়ে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা এবং এলাকার মানুষ যদি মনে করেন তদন্ত সঠিক হচ্ছে না, তা সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়। বিষয়টি এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আদালতের বিবেচনা করা উচিত।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এ প্রসঙ্গে বলেন, “চার্জশিট পেশ করার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত নয়। তাড়াতাড়ি চার্জশিট দেওয়াটা লক্ষ্য নয়। যাতে সঠিক এবং ন্যায় বিচার পাওয়া যায় সেটা দেখতে হবে।” রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য সরকারের নির্দেশে পুলিশ দ্রুত চার্জশিট পেশ করেছে। তবে এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। আরও তদন্তের প্রয়োজন।
কেন এখনও ফরেন্সিক রিপোর্ট জমা পড়ল না তা ব্যাখ্যা করে বিমলবাবু আদালতকে বলেন, “ওই বিষয়ে যাঁরা বিশেষজ্ঞ, তাঁরা সকলেই উত্তরাখণ্ডে রয়েছেন। সেখানে বিপর্যস্ত এলাকায় যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে ফরেন্সিক তদন্তের কাজ চলছে। তাই কামদুনি মামলার ফরেন্সিক রিপোর্ট পেতে আরও এক মাস সময় লাগবে।” এজি একটি রিপোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের কাছে জমা দেন। ডিভিশন বেঞ্চ ৩০ জুলাই রাজ্য সরকারকে তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট এবং বিচারের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতকে জানাতে বলেছে। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, কামদুনির ঘটনাটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে একটা জনরোষ দেখা দিয়েছে।
এ দিনও সিআইডি-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল হয় কামদুনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথা রাখতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করাতেই যে সিআইডি-র চার্জশিটের এই হাল তা অস্বীকার করেননি সিআইডি-র প্রাক্তন কর্তারাও। তবে সিআইডি-র তরফে বলা হচ্ছে যে, এফআইএর-এ নাম থাকলেই যে তা চার্জশিটে উঠবে, এমন কথা নেই। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সারবত্তা পেলে তবেই চার্জ গঠন করা হয়। আর তদন্ত এগোলে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার সুযোগও সব সময়ই আছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো কেন এক মাসের মধ্যে দোষীদের শাস্তি দেওয়া গেল না, তা নিয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “শাস্তি দেবে আদালত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়। আর দিনক্ষণ দেখে শাস্তি ঘোষণা করা যায় না। আদালত ঠিক করবে শাস্তি কার হবে, কবে হবে।”
|

১৭ জুন, ২০১৩
ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে
দোষীদের ফাঁসির ব্যবস্থা করা হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী |

৪ জুলাই, ২০১৩
তাড়াতাড়ি চার্জশিট দেওয়াটা লক্ষ্য নয়।
যাতে ন্যায় বিচার হয়, সেটা দেখতে হবে।
জয়মাল্য বাগচী, হাইকোর্টের বিচারপতি |

সিআইডি-র চার্জশিট অসম্পূর্ণ। ডিএনএ, কেমিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট
নেই।
এফআইআর-এ থাকা অনেকের নাম নেই।
বিকাশ ভট্টাচার্য, আইনজীবী |

কামদুনি-মামলায় ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট
হাতে পেতে আরও প্রায় এক মাস সময় লাগবে।
বিমল চট্টোপাধ্যায়, অ্যাডভোকেট জেনারেল |

শাস্তি দেবে আদালত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়।
আর দিনক্ষণ দেখে তো শাস্তি ঘোষণা করা যায় না।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পঞ্চায়েতমন্ত্রী |
|