দুষ্কৃতী-রাজ দিব্য বহাল, দেখিয়ে দিল নোয়াপাড়া
ক মাস আগে মণিরামপুরে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব দেখেছেন বাসিন্দারা। মাসখানেক পরের নোয়াপাড়া বুঝিয়ে দিল, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে আমজনতার নিরাপত্তার হাল এখনও সেই তিমিরে। ৭ জুনের সেই সকালের কয়েক ঘণ্টা মণিরামপুরের গোটা তল্লাট কার্যত সমাজবিরোধীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছিল। তাণ্ডবের ছবি তুলতে গিয়ে বেধড়ক মার খেয়েছিলেন দুই চিত্র-সাংবাদিক, যাদের গায়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মারারও চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, দুষ্কৃতী-রাজ দমনে ব্যবস্থার কসুর হবে না। তা যে স্রেফ কথার কথা হয়ে রয়ে গিয়েছে, বুধবার নোয়াপাড়ায় তিন যুবকের নিগ্রহই তার জ্বলন্ত প্রমাণ বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। একাংশের এ-ও আক্ষেপ, প্রকাশ্যে স্কুলছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা বা যাকে-তাকে মারধর করার সময়ে পুলিশের হুঁশিয়ারির বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা দুষ্কৃতীরা করছে না। শুধু তা-ই নয়, ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে গিয়েও হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, প্রতিকার তো দূর অস্ত্।
নোয়াপাড়ার কলেজ-ছাত্রটির যেমন অভিজ্ঞতা। কী হয়েছে তাঁদের সঙ্গে? অভিযোগ, বুধবার বিকেলে স্থানীয় সুকান্তপল্লিতে গুয়াহাটি আইআইটি’র ওই ছাত্র ও তাঁর দু’ভাইকে গাড়ি থেকে নামিয়ে এলাকার দু’টি ছেলে মারধর করে। দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে চড়ে পথচলতি স্কুলছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করছিল। বুধবার রাতে নোয়াপাড়া থানায় জেনারেল ডায়েরি হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের তরফে থেকে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মারধর ও ইভটিজিংয়ের মামলা রুজু হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে এক জন সোনু। মূল অভিযুক্ত অমিত রায় ফেরার বলে পুলিশের দাবি।
অমিত-সোনুর বিরুদ্ধে যে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ, তারা অবশ্য থানায় যাওয়ার মতো সাহস দেখাতে পারেনি। স্থানীয় মহিলাদের অনেকে জানাচ্ছেন, ইভটিজিং ওখানে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ‘‘রাস্তায়, বাসস্ট্যান্ডে, স্টেশনে, ফেরিঘাটে, বাজারে, স্কুল-কলেজের সামনে সর্বত্র মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ চোখ বুজে থাকছেন। মেয়েরা বা তাদের বাড়ির লোকও মুখ খুলতে ভয় পান।” মন্তব্য করেছেন ব্যারাকপুরের কলেজ-শিক্ষিকা শ্রাবস্তী চট্টোপাধ্যায়। বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, পুলিশে গেলে উল্টে অভিযোগকারীকেই হেনস্থা হতে হয়।
নোয়াপাড়ার নিগৃহীত ছাত্র রিকি বিশ্বাসও বলছেন, থানায় এফআইআর করতে গিয়ে চার ঘণ্টা বসিয়ে রেখে স্রেফ জিডি নিয়ে দায় সেরেছে পুলিশ। যা শুনে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কর্তাদের আশ্বাস, ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা হবে। ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা-প্রধান দেবাশিস বেজের কথায়, ‘‘রিকির অভিযোগের ভিত্তিতেই তো অমিত-সোনুর নামে মামলা দায়ের হয়!” চার ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হল কেন? তাঁর জবাব, “যতটুকু জানি, ওঁদের এক-এক জনের বয়ান এক-এক রকম ছিল। সবটা গুছিয়ে নালিশ জমা দিতে ওঁদেরই সময় লেগেছে।’’
বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, সমাজবিরোধীরাই এখন থানায় ঢুকে বসে থাকছে। এমনকী, মণিরামপুর-কাণ্ডের পরে এক দুষ্কৃতী থানায় গিয়ে খোদ পুলিশের উপরে চড়াও হয়েছিল এমনও শোনা গিয়েছে। পুলিশের এক কর্তারও আক্ষেপ, “সব জেনে-বুঝে হাত গুটিয়ে থাকতে হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.