জামাইকার অভিজ্ঞতা ভারতকে ভালই শিক্ষা দিয়ে গেল। এটা ঠিক যে, একটা দলের পর পর দু’টো ম্যাচ হেরে যাওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কাছে হারের ধরনটা বিরাট কোহলিদের বহু দিন কাঁটা হয়ে বিঁধবে। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যা, তাতে ভারত ত্রিনিদাদে নিজেদের বাকি দু’টো ম্যাচ যদি জিতেও যায়, তার পরেও কিন্তু ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত হবে না। ভারতকে তাকিয়ে থাকতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচের দিকে। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে ঘোর অনিশ্চয়তায় ঘেরা ভারতের অভিযান একটা ক্ষীণ আশাকে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ভারতের প্রথম হারটার পিছনে আবহাওয়া আর ভেজা পিচের একটা বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু পরের হারটা সত্যিই রীতিমতো চমকে দেওয়া। আরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যে দলটা প্রায় প্রত্যেক প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়ে জিতে এসেছে, তারাই কিনা শ্রীলঙ্কাকে ৩৫০ রান তুলতে দিল! মানছি ভুবনেশ্বর কুমার ছিল না। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে চ্যাম্পিয়ন দলের বাকি বোলারদের শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা ধোপার বাড়ি পাঠিয়ে ছাড়বে! ভারতের ফিল্ডিংও হতাশ করল।
যাই হোক, ভারতের সামনে এখন নিজেদের শেষ দু’টো ম্যাচ জেতার থেকে বেশি দুর্দান্ত কিছু করে দেখানোর সুযোগ নেই। বাকিটা ভাগ্যের হাতে ছাড়তে হবে। ক্যাপ্টেন কুল ধোনির অভাবটা ওরা টের পাবে। তবে ভাল দল কখনওই এক জন ক্রিকেটারের উপর নির্ভরশীল থাকে না। আবার এটাও মানতে হবে, এমএসডি কোনও সাধারণ মানুষ নয়, আর ভারতীয় দল সেটা বেশ বুঝতে পারছে। ত্রিনিদাদে আজ, শুক্রবার ভারতের শুরুটা ভাল হওয়া সব থেকে বেশি জরুরি। সঙ্গে বোলারদেরও নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে ভাল বল করতে হবে। শ্রীলঙ্কা ম্যাচটায় ভারত অসম্ভব হঠকারী খেলেছিল। সেটা করলে কিন্তু চলবে না।
|
জয়ে ফেরাতে পারবেন দলকে? প্র্যাক্টিসে বিরাট কোহলি। |
এই সিরিজে ভারতের হারের সব থেকে বড় কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। বোর্ডে বড় স্কোর তুলতে না পারার মাসুল দিতে হয়েছে। শ্রীলঙ্কা ম্যাচে ওরা ফিল্ডিং নিয়েছিল কারণ ওরা ধরে নিয়েছিল ব্যাটিংটাই আসল শক্তি। তাই রান তাড়া করা কঠিন হবে না। আগে ফিল্ডিং করার পিছনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের অভিজ্ঞতাও কাজ করেছিল। বিরাটরা ভেবেছিল, পিচে শুরুর দিকে ভেজা ভাব থাকবে। কিন্তু এই দু’টো ভাবনাই ভুল প্রমাণ করে দিল শ্রীলঙ্কা। শুরুতে ধরে খেলে এবং তার পর দারুণ বোলিং করে।
ত্রিনিদাদ জায়গাটা এমন যে ভারতীয় দলের কাছে হোম অ্যাওয়ে ফ্রম হোম মনে হবে। ত্রিনিদাদ আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক দিনের অধিনায়ক ডোয়েন ব্রাভো আর স্পিন-সম্রাট সুনীল নারিনেরও নিজের বাড়ি! মেরুন টুপির ছেলেরা আচমকা অবিশ্বাস্য ছন্দ খুঁজে পেয়েছে। সিরিজে ওদের অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে। অন্য দিকে, শ্রীলঙ্কাকে একটা বোনাস পয়েন্ট পাইয়ে দেওয়া ভারতের জন্য শুক্রবার হারা মানে ত্রিদেশীয় এই লড়াই থেকে কার্যত ছিটকে যাওয়া।
পোর্ট অব স্পেনের পিচ অবশ্য জামাইকার তুলনায় বেশি স্পিন সহায়ক হবে। অন্ততপক্ষে বাউন্সের দিক থেকে বো বটেই। রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর রবীন্দ্র জাডেজার উচিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পিচকে কাজে লাগানো। জামাইকায় ওরা কিছু করে দেখাতে পারেনি। আজ কিন্তু ভারতকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে স্পিনারদের প্রমাণ করতে হবে যে ওরা ফারাক গড়তে পারে।
এই দলটা তরুণ তুর্কিদের নিয়ে তৈরি। ওদের এ বার প্রমাণ করতে হবে যে ওরা সত্যিই ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়ে ওঠার যোগ্য। সাধারণত ক্রিকেটে কোনও দলের জন্য পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যাওয়াটা বেশ কষ্টকর হয়। ভারতের ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা হয়নি। তবে এই মুহূর্তে ভারতীয় দলের একটা ভরকেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস তৈরি হওয়া জরুরি। যারা আগামী পাঁচ-সাত বছর দলটাকে টানতে পারবে। ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমী পরবর্তী লক্ষ্মণ, কুম্বলে, দ্রাবিড়দের দেখার আশায় রয়েছে। চাইব ওদের আশা পূর্ণ হোক।
|
আজ ত্রিদেশীয় সিরিজে |
ভারত : ওয়েস্ট ইন্ডিজ
(পোর্ট অব স্পেন, সন্ধ্যা ৭-০০) |
|
|