বিশ্বের এক আর দু’নম্বর টেনিস তারকাকে শুক্রবার উইম্বলডন সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন যে দু’জন, তাঁদের একজন খোঁড়াচ্ছেন। অন্য জন নিজের কেরিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালই খেলছেন না, পোল্যান্ডের টেনিস ইতিহাসেরই প্রথম পুরুষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালিস্ট। তা সত্ত্বেও এহেন ‘এক পায়ের’ আর ‘অনভিজ্ঞ’ প্রতিদ্বন্দ্বী অঘটন ঘটাতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন।
বিশেষ করে টেনিস পরিসংখ্যানবিদরা। জকোভিচ প্রতিপক্ষ দেল পোত্রোর সঙ্গে মোট সাক্ষাতে ৮-৩ এগিয়ে থাকলেও তাঁদের এর আগে একমাত্র গ্রাস কোর্ট লড়াইয়ে আর্জেন্তিনীয় হারিয়েছিলেন সার্বিয়ান ‘জোকার’কে। আর সেটাও কাল দু’জনে যেখানে মুখোমুখি হবেন, সেই উইম্বলডন সেন্টার কোর্টেই। গত বছর লন্ডন অলিম্পিক টেনিসের ব্রোঞ্জ পদক জয়ের ম্যাচে। আর শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, অ্যান্ডি মারের সঙ্গে অতীত সাক্ষাতে জের্জি জাঙ্কোভিচ-ই জিতে কোর্ট ছেড়েছিলেন! মাত্র এক বছর আগে প্যারিসে।
জকোভিচ যদি তাঁর সাড়ে ছ’ফুটের সেমিফাইনাল প্রতিদ্বন্দ্বীকে ‘নিঃশব্দ দৈত্য’ আখ্যা দিয়ে থাকেন। তা হলে, সাতাত্তর বছরের আদিম ‘ফ্রেড পেরির ভূত’ ঘাড় থেকে নামাতে সমগ্র ব্রিটিশ জাতি যাঁর দিতে তাকিয়ে সেই মারের সেমিফাইনাল প্রতিপক্ষ টেনিস সার্কিটে ‘অশান্ত দৈত্য’ নামে পরিচিতি লাভ করেছেন।
ছ’ফুট আট ইঞ্চির জের্জি জাঙ্কোভিচ এ বছর অস্ট্রেলীয় ওপেনে এক লাইনজাজকে চেঁচিয়ে বলেছিলেন, “আপনাকে তো একটা লাইনের দিকেই নজর রাখতে হয় মশাই। পুরো কোর্টে নয়। যেটা মনে হয়, খুব একটা কঠিন কাজ নয়!” গত বছর কোয়ালিফায়ার হিসেবে প্যারিস মাস্টার্স ফাইনালে ওঠার পর থেকেই পোল্যান্ডে তিনি হিট। এতটাই যে, তাঁকে নিয়ে পোলিশ টেনিসপ্রেমীরা গান অবধি তৈরি করেছিল ‘বাজকা ও জের্জিকু সিলি নিয়েজওয়াইকেল প্রিজিগোডি জের্জেগো জাঙ্কোভিচকা ওয়া পারিজু’। যার অর্থ, ‘প্যারিসে জের্জি জাঙ্কোভিচের রূপকথার অ্যাডভেঞ্চার!’
|
গানটা মারের আরও বেশি করে মনে থাকার কথা! কে জানে, হয়তো মনেও আছে। কারণ স্বপ্নের ফাইনালে ওঠার পথে জাঙ্কোভিচ প্যারিসে মারেকেও হারিয়েছিলেন! অথচ, মাত্র বছর দুই আগে জাঙ্কোভিচের যখন বিশ্ব র্যাঙ্কিং ২২১, তখন যুক্তরাষ্ট্র ওপেন কোয়ালিফাইং খেলার সময় নিউইয়র্কবাসী কতিপয় সহৃদয় পোলিশ তাঁর নতুন র্যাকেট কেনার ডলার জুগিয়েছিলেন। সে বার অস্ট্রেলীয় ওপেন যাওয়ার বিমান টিকিটের ভাড়াটুকুও তাঁর পকেটে ছিল না। টুর্নামেন্টের রাত ক’টা গাড়ির ভেতরে শুয়ে ঘুমোতেন। হোটেল ভাড়া করার সম্বল না থাকায়। “ঐতিহাসিক সেমিফাইনালে ওঠার মুহূর্তে বেশি করে সেই সব কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে পড়ায় উইম্বলডনে আমাকে অত বেশি কাঁদতে দেখেছে সবাই। আসলে আমি কিন্তু খুব কঠিন মানসিকতার প্লেয়ার।”
মারে কি সে জন্যই আগেভাগে বলে রেখেছেন, “একসঙ্গে রাফা, রজার, সেরেনা, শারাপোভা, আজারেঙ্কা, সঙ্গার হারার পর এ বার উইম্বলডনে কেউই নিশ্চিন্ত নয়। আমার কপালেও ওই সুপারস্টারদের দশা হতে পারে যে কোনও রাউন্ডে। আর কাল তো সেমিফাইনাল। চার জন প্লেয়ারই যেখানে ট্রফি থেকে আর মাত্র দু’টো ম্যাচ দূরে। কোনও ফেভারিট হয় না টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে। এখনই তো উইম্বলডনের বিজনেস এন্ড। আসল সময়।”
অন্য দিকে, জকোভিচ যতই টানা ১৩তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল খেলুন, কেউ কেউ পাল্টা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত পাঁচ বছরে ৩৩টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের মধ্যে ৩২টাই ফেডেরার-জকোভিচ-নাদাল-মারে, টেনিসের ‘ফ্যাব ফোরে’র জেতার বাইরে যিনি একটি মাত্র খেতাব (২০০৯ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন) জেতেন তাঁর নাম দেল পোত্রো। যে জন্যই হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বীর বাঁ-হাঁটুর চোটের খবরে এতটুকু স্বস্তিতে না থেকে জকোভিচ বরং বলছেন, “গত কয়েক বছর ধরেই ও চোট নিয়ে ভুগছে। কিন্তু প্রতিবারই দারুণ ভাবে উঠে দাঁড়ায়। এতটাই ওর ট্যালেন্ট! নইলে গ্র্যান্ড স্ল্যাম কোয়ার্টার ফাইনাল কার্যত এক পায়ে খেলে কেউ জিততে পারে না। ওকে নিঃশব্দ দৈত্য বলা ভাল।”
দু’জনের কেউই এ বার উইম্বলডনে পাঁচটা ম্যাচে একটাও সেট হারেননি। তবু সতর্ক জকোভিচ বলেছেন, “আমি জানি এই মুহূর্তে কমপ্লিট টেনিস খেলছি। তা সত্ত্বেও আমার খেলার অনেকগুলো জায়গায় এখনও উন্নতির সুযোগ আছে।” কেরিয়ারের প্রথম উইম্বলডন সেমিফাইনালে নামার আগে দেল পোত্রোও পাল্টা সাবধানী। “নোভাককে সামলাতে আমাকে একশো দশ পার্সেন্টেজ দিতে হবে কোর্টে। যে কারণে আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় আমার হাঁটুর অবস্থা কেমন থাকে সেটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।”
|
মারের ফিটনেস ম্যানিয়া |
• এক মিনিটে ২৭ পুল আপ। বুকে বাঁধা থাকে অন্তত ৪৪ পাউন্ডের ওজন।
• ৫০০ পাউন্ড ওজন নিয়ে লেগ প্রেস। অর্থাৎ ভ্লাদিমির ক্লিৎস্কোর মতো দু’জন বক্সারের ওজন পা দিয়ে ঠেলে তোলা।
• টানা দশ বার চার শো মিটার দৌড়নো। প্রতিটা ল্যাপ শেষ করতে লাগে ৭৫ সেকেন্ড মতো। কুড়ি বার একশো মিটার দৌড়নো।
প্রতি মিনিটে এক বার। |
মারের খাদ্য প্রেম |
• উইম্বলডনে প্রতিটা ম্যাচ শেষে একটাই অর্ডার দেন মারে। তিরিশটা টুনা অ্যান্ড আভোকাডো রোল। এ ছাড়াও মারের ডায়েটে থাকে ৫০ পিস সুশি। এবং কোনও কিছুই টিম মারের সদস্যদের মধ্যে ভাগ হয় না। পুরোটাই চলে যায় মারের পেটে। প্রোটিন আর কার্বোহাইড্রেটের মিশেল এই ডায়েট চার্ট মারের পেশি শক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
|
“মারে যদি মনে করে রাত ন’টার মধ্যে শুয়ে পড়লে ওর খেলার .০০০০০৫ শতাংশ উন্নতি হবে, তা হলে ও ন’টা বাজতে পাঁচে সবাইকে গুড নাইট করে দেবে।”—মারের কোচিং টিমের সদস্য |
|
|