কাল খেতাবের লড়াইয়ে ১৫ বনাম ২৩
স্টেফির পর প্রথম জার্মান মেয়ে উইম্বলডন ফাইনালে
রিস বেকার তো থাকবেনই। তিনি তো আনন্দবাজারের জন্য লিখছেন। কিন্তু শনিবার সেন্টার কোর্টে আর এক জার্মান টেনিস কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফকে কি দেখা যাবে? যিনি উইম্বলডনের প্রথম দশ দিন তাঁর টেনিস সেলিব্রিটি স্বামী আন্দ্রে আগাসির মতোই বেপাত্তা!
সাবিন লিজিকি অবশ্য তাঁর প্রথম উইম্বলডন ফাইনালের দিন রয়্যাল বক্সে বেকার-স্টেফি জুটিকেই বেশি করে দেখতে চাইবেন। উনিশশো নিরানব্বই উইম্বলডনে স্টেফির পরে বছর তেইশের লিজিকিই প্রথম জার্মান মেয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালিস্ট যে! প্রচণ্ড কাঠিন্য, নাছোড় মানসিকতা, ধারাবাহিক ভাল সার্ভ আর কিছু অসাধারণ পাসিং শটকে মূলধন করে ২৩ নম্বর বাছাই বিশ্বের চার নম্বর রাডওয়ানস্কাকে আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে হারালেন ৬-৪, ২-৬, ৯-৭। সওয়া দু’ঘণ্টার মারকাটারি টেনিস যুদ্ধের আগে এ দিন প্রথম সেমিফাইনালে প্রাক্তন উইম্বলডন ফাইনালিস্ট মারিয়ন বার্তোলির অভিজ্ঞতার সামনে এই পর্যায়ের ম্যাচ খেলার ব্যাপারে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ কার্স্টেন ফ্লিপকিন্স ‘চোক্’ করে গেলেন। ১-৬, ২-৬।
ফাইনালে ওঠে লিজিকি-স্টাইলে সেলিব্রেশন।
টেনিসে রূপকথার উত্থানের নায়িকার মাত্র ৬২ মিনিটে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া দেখে জন ম্যাকেনরোর মন্তব্য, “ধরা যাক, আপনার দারুণ স্বপ্ন হঠাৎ দুঃস্বপ্নে বদলে গেল। আর তাতেই ঘুম ভেঙে যেতে আপনি টের পেলেন কোনও কিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। ফ্লিপকিন্স বেচারার সেই অবস্থা হল!” ফ্রান্সের ১৫ নম্বর বাছাই বার্তোলিকে এখন গ্র্যান্ড স্ল্যামে ট্রেনিং দিচ্ছেন প্রাক্তন ফরাসি উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন এমিলি মরেসমো। তিনি যে বছর (২০০৬) উইম্বলডন জেতেন, তার পরের বছরই বার্তোলির জীবনের প্রথম উইম্বলডন ফাইনাল খেলা। যেখানে ভেনাস উইলিয়ামসের কাছে তিনি হারেন।
আর ভেনাসের বোন সেরেনাকে চতুর্থ রাউন্ডে অত্যাশ্চর্য হারিয়ে এ বার উইম্বলডনের আগাম রানি হয়ে ওঠা লিজিকি আজ গত বারের ফাইনালিস্ট রাডওয়ানস্কাকেও হারিয়ে খেতাবের রেড হটফেভারিট হয়ে উঠলেন। গত বারের চ্যাম্পিয়ন আর রানার্স দু’জনকেই যে ফাইনালে ওঠার পথে বধ করে এলেন জার্মান ছয় ফুট চার ইঞ্চির দীর্ঘকায় মেয়ে!
দুই প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন টেনিস কন্যা ট্রেসি অস্টিন আর লিন্ডসে ডাভেনপোর্ট একমত, “সেরেনার থেকে নির্ণায়ক সেট বার করা মেয়েদের টেনিসের সম্ভবত কঠিনতম কাজ। লিজিকি সেটাও করে দেখানোর পর আজ যাকে নির্ণায়ক সেটে ০-৩ পিছিয়ে থেকেও পড়েও হারাল সেই রাডওয়ানস্কাকে আবার নির্দ্বিধায় ঘাসের কোর্টে এই জমানার মেয়েদের মধ্যে সেরা রিটার্নার বলা যায়।”
ফাইনালে ওঠার সেলিব্রেশন। বার্তোলি-স্টাইল।
কিন্তু নবম গেমে দু’টো ম্যাচ পয়েন্ট পেলেও লিজিকি সার্ভিস খোয়ানোর পর মনে হচ্ছিল, রাডওয়ানস্কার অভিজ্ঞতা শেষ হাসি হাসবে। কিন্তু ১৫তম গেমে বিপক্ষকে শুধু তৃতীয় সেটেই তৃতীয় বার ভাঙার পর আর পিছন ফিরে তাকাননি লিজিকি। পরের গেমে রাডওয়ানস্কার রিটার্ন বেসলাইনের বাইরে যেতেই উইম্বলডন ফাইনালে ওঠার আবেগ সামলাতে না পেরে লিজিকি কোর্টেই হাঁটু মুড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। “আমি সত্যি বলছি, এখনও জানি না, ঠিক কী ভাবে ম্যাচটা জিতলাম! কোন শটে খেলাটা শেষ হল!” নির্মল স্বীকারোক্তি জার্মান নায়িকার।

পুরনো খবর:

বিদায় লি, বোপান্না, সানিয়ার
সেন্টার কোর্টে ধুন্ধুমার মেয়েদের সিঙ্গলস সেমিফাইনাল যুদ্ধের মধ্যে উইম্বলডনের এক আর দু’নম্বর কোর্ট থেকে একে-একে খসে পড়লেন ভারতীয়রা। এক ঘণ্টার এ দিক-ও দিক ডাবলস সেমিফাইনালে হেরে গেলেন রোহন বোপান্না-রজার ভাসেলিন। আর লিয়েন্ডোর পেজ-রাদেক স্টেপানেক। আচমকা নায়ক হয়ে ওঠা ইন্দো-ফরাসি জুটির মতোই ম্যারাথন পাঁচ সেট লড়ে হার স্বীকার করল প্রাক্তন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী ইন্দো-চেক জুটি। বোপান্নারা শীর্ষ বাছাই তথা সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ডাবলস চ্যাম্পিয়ন বব ও মাইক, বাঁ ও ডান হাতি জমজ ব্রায়ান ভাইদের কাছে হারেন ৭-৬ (৭-৪), ৪-৬, ৩-৬, ৭-৫, ৩-৬। তুলনায় অনেক অখ্যাত ক্রোট-ব্রাজিলীয় জুটি ইভান ডডিগ-মার্সেলো মেলোর কাছে প্রায় একই ভাবে হারলেন লিয়েন্ডাররা। ৬-৩, ৪-৬, ১-৬, ৬-৩, ৩-৬। প্রায় গায়ে গায়ে সানিয়া মির্জা-হোরিয়া তেকাউয়ের ইন্দো-রোমানিয়ান জুটি মিক্সড ডাবলস কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছেন। ৪১ বছরের ড্যানিয়েল নেস্টর আর তাঁর অর্ধেকেরও কম বয়সি সঙ্গী ক্রিস্টিনা ম্লাডেননোভিচের বিরুদ্ধে ৬-৭, ৬-৭। সানিয়াদের হারও সেই লড়াই দিয়ে। ফলে উইম্বলডনে ভারতীয় চ্যালেঞ্জ বলতে সবেধন নীলমণি রইলেন মিক্সড ডাবলস কোয়ার্টার ফাইনালে রোহন বোপান্না। চিনা সঙ্গী জে জিং-কে নিয়ে।

টেনিসে মেলায় শত্রু
টেনিস যেমন মিলিয়ে দিয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানকে, জুটি বেঁধেছিলেন রোহন বোপন্না ও আয়সাম উল হক কুরেশি, তেমন চিন ও তাইওয়ানও মিলে গেল টেনিস কোর্টে, জুটি বাঁধলেন চিনের পেং সুয়াই ও তাইওয়ানের হসিয়ে সু উই, যাঁরা শুক্রবার উইম্বলডনের মহিলাদের ডাবলস সেমিফাইনালে নামবেন। ১৯৪৯ থেকে যে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক মোটেও ভাল নয়, সেই দুই দেশের দুই টেনিস-কন্যা বলেছেন, স্রেফ বন্ধুত্বের খাতিরেই তাঁদের এই জুটি বাঁধা। “বন্ধুত্বের চেয়ে তো রাজনীতি বড় হতে পারে না”, বলেছেন পেং। নিজেদের মধ্যে সমানে খুনসুটি করে যাওয়া পেং ও হসিয়ে দু’জনেরই বক্তব্য, “একজনের খারাপ দিনে অন্যজন তাকে সাহায্য করি। এটাই আমাদের বন্ধুত্বের রসায়ন।”

ডোপিং-তরজা
ডোপিং নিয়ে কড়াকড়ি কোথায় টেনিস সার্কিটে? এমনই প্রশ্ন তুলেছিলেন জকোভিচ, ফেডেরার ও মারের মতো তারকারা। জকোভিচ তো পরিষ্কার জানিয়েই দেন, ছয়-সাত মাস তাঁকে ডোপ টেস্ট দিতেই হয়নি। পরিসংখ্যানও বলছে টুর্নামেন্টের বাইরে মাত্র ৬৩ বার রক্ত পরীক্ষা হয়েছিল ২০১২-য়। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল টেনিস ফেডারেশনের প্রধান ডা. স্টুয়ার্ট মিলার বলছেন অন্য কথা। তাঁর মতে, “ডোপিং নিয়ে কাজকর্ম বেশ ভাল চলছে। প্রত্যেকদিন প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ডোপ টেস্ট করাটা তো মহাকাশের মতো একটা বিশাল ব্যাপার। তবে আমাদের যতটুকু পরিকাঠামো ও আর্থিক সাধ্য রয়েছে, তার পুরোটাই কাজে লাগাচ্ছি আমরা।”

নিষিদ্ধ গোরান
২০০১-এ যিনি ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি নিয়ে খেলে পুরুষদের সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন, সেই ক্রোয়েশিয়ার সেরা তারকা গোরান ইভানিসেভিচের এ বার উইম্বলডনের কোর্টে বা লকার রুমে ঢোকা বারণ। তাই সিনিয়র বিভাগে খেলার কথা থাকলেও পারছেন না তিনি। কিন্তু কেন এই নিষেধাজ্ঞা? আসলে এক বেটিং সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে গোরানের। তিনি তাদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। ব্যাপারটা সে দেশে সম্পুর্ণ আইনসিদ্ধ হলেও গড়াপেটার আশঙ্কায় বেটিং সংস্থার কোনও প্রতিনিধিকে উইম্বলডনের অন্দরমহলে ঢুকতে দেওয়ার কোনও নিয়মই নেই। তবে গ্যালারিতে বসতে পারেন তিনি। তার বেশি নয়।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.