দু’হাজার তেরোর উইম্বলডন নতুন মেয়ে চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে। চার সেমিফাইনালিস্টের দু’জন অতীতে সেন্টার কোর্টে ফাইনাল খেলেছেন। বাকি দু’জন তা-ও নয়।
দু’হাজার তেরোর উইম্বলডন টেনিসের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন শট— সিঙ্গল হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ড শটের ‘নীরব মৃত্যু’র সাক্ষী থাকছে। পুরুষ ও মেয়েদের ষোলোজন কোয়ার্টার ফাইনালিস্টই ব্যাকহ্যান্ড শট মারেন ডাবল হ্যান্ডেড।
কিন্তু যদি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কেউ বলতেন, মেয়েদের সেমিফাইনাল লাইন আপ হবে মারিয়ন বার্তোলি বনাম কার্স্টেন ফ্লিপকেন্স, তা হলে নির্ঘাত তাকে পাগল বা নির্লজ্জ মিথ্যেবাদী বলত সবাই! দু’হাজার তেরোর উইম্বলডনের দশম দিনে সেটাই বাস্তব। সাবিন লিজিকি বনাম রাডওয়ানস্কা-র চেয়ে বৃহস্পতিবার অনেক বেশি টিআরপি অন্য সেমিফাইনালের। এবং তার পিছনে ইউএসপি বেলজিয়ামের এক পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। গত বছর উইম্বলডনের সময় যাঁর বিশ্ব র্যাঙ্কিং ছিল ২৬২। এতটাই নীচে যে, উইম্বলডন কোয়ালিফাইং খেলার যোগ্যতাও ছিল না। এক বছর আগে ঠিক এই সময় ফ্লিপকেন্স ঘাসের কোর্টের বদলে খেলছিলেন ভার্জিনিয়ায় ক্লে কোর্ট টুর্নামেন্টে।
তারও দু’মাস আগে ফ্লিপকেন্স তাইল্যান্ডের টুর্নামেন্টে দু’পায়ে অবিশ্বাস্য রকম ভারী অনুভব করায় আতঙ্কিত হয়ে টোকিওর বিমানে না উঠে বেলজিয়ামের ফ্লাইট ধরেন। এবং কিম ক্লিস্টার্স-জাস্তিন এনার দেশের সাতাশ বছরের মেয়ে বাড়ি ফিরে ডাক্তার দেখিয়ে জানতে পারেন, তাঁর দু’পায়ের কাফ মাসলে কমপক্ষে চারটে বড়-বড় রক্ত জমাট বাঁধার খারাপ খবর। দু’দিন বাদেই টোকিওয়ে খেলতে যাওয়ার কথা ছিল যাঁর, সেই ফ্লিপকেন্সকে চিকিৎসকেরা বলেন, টেনিস জীবন চলা তো দূরের কথা, বাঁচবেন কিনাই সন্দেহ! |
সেমিফাইনালে উঠে তৃপ্ত ফ্লিপকেন্স।
|
“...আমার চোখে জল আসে না। কোর্টে আমি এতটাই নির্লিপ্ত।
আমার ওপর ভরসা রাখে
এমন লোকের সংখ্যা এক হাতেই গোনা শেষ হয়ে যাবে।” —কার্স্টেন ফ্লিপকেন্স |
|
“সে দিনের মতো এ দিনও আমি বুঝলাম, জীবনের মূল্য কী!” কোয়ার্টার ফাইনালে ২০১১ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন কিভিতোভাকে ছিটকে দিয়ে জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামে ওঠার পর বলেছেন বিশ্বের ২০ নম্বর ফ্লিপকেন্স। বারো মাসের মধ্যে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ২৬২ থেকে ২০-তে উঠে আসা! একটা সময় বেলজিয়াম টেনিস ফেডারেশনের যাবতীয় আর্থিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত প্লেয়ারের পক্ষে উত্থানটা বোধহয় আরওই বেশি অবিশ্বাস্য! স্বপ্নের পক্ষেও বাড়াবাড়ি। কিন্তু এখন সেটাও বাস্তব।
জুনিয়র লেভেলে ‘ভবিষ্যতের টেনিস সুপারস্টার’ ফ্লিপকেন্সকে অসুস্থতা আর আচমকা ফর্ম হারিয়ে বসাটা পেশাদার ট্যুরে চোখের আড়ালে পাঠিয়ে দিয়েছিল। নইলে ঠিক দশ বছর আগে একই মরসুমে জুনিয়র উইম্বলডন আর জুনিয়র যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ফ্লিপকেন্স। “চিকিৎসা সফল হলেও তার খরচ জোগাতে আমার এত দিনের সব প্রাইজমানি শেষ হয়ে গিয়েছিল। পেশাদার সার্কিটে ট্যুর করার সম্বলটুকু ছিল না গত বছর এই সময়েও। আমাদের দেশের টেনিসপাগল এক শিল্পপতি জিন পিয়ের হেনডেরিক তখন আমাকে স্পনসর করতে এগিয়ে না এলে আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না। উনি ছাড়া আমি আরও এক জনের কাছে চিরঋণী— বেলজিয়ামের সর্বকালের সেরা টেনিস প্লেয়ার কিম ক্লিস্টার্স। তখন থেকেই কিম আমার ট্রেনিং পার্টনার,” নিজের রূপকথার উত্থানের রহস্য ফাঁস করেছেন ফ্লিপকেন্স। |