মারের দুরন্ত প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী বান্ধবী কিম সিয়ার্স। |
নির্ণায়ক সেটের একাদশ গেমে প্রতিপক্ষের সার্ভিস ভাঙার পরের গেমে নিজের সার্ভিস ধরে রেখে ৪-৬, ৩-৬, ৬-১, ৬-৪, ৭-৫ জিততেই মারেকে যত না উল্লসিত দেখাল, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নাচানাচি করছেন তখন রয়্যাল বক্সে বসা প্রবল টেনশনাক্রান্ত ভিভিআইপি-রা। কে নেই সেই চাঁদের হাটে? রড লেভার থেকে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। ইংল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল কোচ রয় হজসন থেকে জাতীয় রাগবি কোচ স্টুয়ার্ট ল্যাঙ্কাস্টার। মারের বান্ধবী কিম সিয়ার্স থেকে ৪৪ বছরের পুরনো ব্রিটিশ মহিলা উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন অ্যান হেডন জোন্স। সব রথী-মহারথী যে সেই বিরল অভুক্তি মেটানোর স্বপ্ন এ বারও দেখছেন! ফ্রেড পেরির ৭৭ বছর পর কোনও ব্রিটিশ পুরুষের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মহাস্বপ্ন!
মারের কাছে অবশ্য ০-২ থেকে ৩-২ সেটে ম্যাচ জেতা নতুন কিছু নয়। গ্র্যান্ড স্ল্যামেই এ দিন নিয়ে হাফডজন বার এই কাণ্ড ঘটালেন। কিন্তু পাশাপাশি মারে-ভক্তদের জন্য প্রশ্নও রেখে গেলেন। তাঁর কি পিঠের পুরনো চোট আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে? যে চোটের জন্য তিনি এ বার ফরাসি ওপেন খেলেননি। কোয়ার্টার ফাইনালের আগে আর পরে নাছোড় ব্রিটিশ মিডিয়ার কিন্তু মারের কাছে তাঁর পিঠের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রশ্নই সবচেয়ে বেশি ছিল। দ্বিতীয়ত, মারে কি বাঁ-হাতির সামনে চাপে পড়ে যান?
|
অ্যালেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে প্রাক্তন উইম্বলডনজয়ী অ্যান হেডন জোনস। বুধবার উইম্বলডনে। |
ম্যাচ চলাকালীন প্যাট ক্যাশ টুইট করলেন, ‘টানা ন’মাস কোনও বাঁ-হাতিকে না খেলার পর ভার্দাস্কোর বিরুদ্ধে সমস্যায় পড়েছে মারে।” তবে এ সবকে সামলে মারের ম্যারাথন যুদ্ধ জয় তাঁর ফিটনেসের দুর্দান্ত বিজ্ঞাপন হয়ে থাকছে। এ ব্যাপারে ঢ্যাঙা ব্রিটিশ যুবক তাঁর বিখ্যাত কোচ ইভান লেন্ডলের দুর্ধর্ষ ফিটনেস লেভেলের কথাই মনে পড়িয়ে দিয়েছেন এ দিন।
পোল্যান্ডের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম পুরুষ সেমিফাইনালে পা রাখার পর জের্জি জাঙ্কোভিচ দেশোয়ালি প্রতিদ্বন্দ্বী লুকাস কুবটের সঙ্গে গায়ের জামা বদলা-বদলি করলেন ফুটবল ম্যাচের স্টাইলে। ৭-৫, ৬-৪, ৬-৪ জেতা ম্যাচের আগে জাঙ্কোভিচকে কুবটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পোল্যান্ডের লাল-সাদা জাতীয় পতাকা তুলে ধরতেও দেখল উইম্বলডন! |
দেল পোত্রো হারান এ বারের ফরাসি ওপেন ফাইনালিস্ট ডেভিড ফেরারকে। ৬-২, ৬-৪, ৭-৬ (৭-৫)। ম্যাচের প্রথম গেমেই ৪০-১৫ এগিয়ে থাকা অবস্থায় ফেরারের একটা স্ম্যাশ অনেকটা পা বাড়িয়ে রিটার্ন করতে গিয়ে বেসলাইনের কাছে পিছলে পড়ে চোট পান দেল পোত্রো। প্রাক্তন যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়নকে কোর্টেই ডাক্তার ডেকে বেশ কিছুক্ষণ শুশ্রূষা করাতে হয়। “একটা সময় ভেবেছিলাম ম্যাচটাই ছেড়ে দেব। ডাক্তার গোটা কয়েক ম্যাজিক পিল খেতে দিয়েছিলেন আমাকে। তার পর দু’ঘণ্টা শুধু খেলাই নয়, স্ট্রেট সেটে জিততে পেরে আমি সত্যিই খুশি,” ম্যাচ শেষে বলেছেন দেল পোত্রো। এখানে তৃতীয় রাউন্ডেই কোর্টের ধার থেকে রিটার্ন করতে গিয়ে চেয়ারের সঙ্গে সংঘর্ষে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন দেল পোত্রো। আজ মোটা ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলতে নামা সেই বাঁ হাঁটুতেই পিছলে পড়ে চোট লাগে তাঁর। বলতে গেলে গোটা ম্যাচটাই খেলেন ‘এক পায়ে’! নির্মম পেশাদারিত্বের যুগে দেল পোত্রোর প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখা যায়, স্লাইস শটের বদলে ঘাসের কোর্টেও বেশি ড্রপ শট মারতে। যাতে কোর্টে বেশি ছোটাছুটি করতে হয় ‘এক পায়ের’ দেল পোত্রোকে। কিন্তু তাতেও কাবু করা যায়নি আর্জেন্তিনীয়কে।
|
ভারতীয় নায়ক এ বার বোপান্না
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পছন্দের পার্টনার স্টেপানেককে ফিরে পেয়ে লিয়েন্ডার সেমিফাইনাল পৌঁছে গিয়েছেন। সানিয়া মিক্সড ডাবলসে দ্বিতীয় বাছাই হওয়ার সম্মানকে মর্যাদা দিচ্ছেন রোমানিয়ার তেকাউকে নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল উঠে। কিন্তু উইম্বলডনে এ বার ভারতীয় নায়ক অন্য একজন— রোহন বোপান্না। ভূপতির ব্যর্থতার মধ্যে আর এক বেঙ্গালুরুয়ানের অপ্রত্যাশিত দাপট এসডব্লিউ নাইনটিন-এ!
গ্র্যান্ড স্ল্যামে বোপান্না অবশ্য অসফল নন। বোপান্না-কুরেশির বহু আলোচিত ইন্দো-পাক জুড়ি ২০১০ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ফাইনালিস্ট। পরের বছরও সেমিফাইনাল খেলেছিলেন। তিন বছর আগে তাঁদের জুটি উইম্বলডনেও শেষ আটে উঠেছিল। কিন্তু এ বারের মতো ডাবলস-মিক্সড ডাবলস দুটোতেই বোপান্নার দাপট উইম্বলডনে অতীতে দেখা যায়নি। ডাবলস সেমিফাইনালে ওঠার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আজ মিক্সড ডাবলসেও বোপান্নাদের জুটি কোয়ার্টার ফাইনাল উঠল। বোপান্না-জি জেং ইন্দো-চিনা জুড়ি তৃতীয় রাউন্ডে হারায় ব্রুনস্ট্রম-মারোসিকে ৭-৬ (৭-৪), ৩-৬, ৬-১। ডাবলসে যেমন বোপান্নার এটাই প্রথম উইম্বলডন সেমিফাইনাল, তেমনই মিক্সডে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল। তবে আসল কেরামতি টিম বোপান্না-র ডাবলসে। তৃতীয় রাউন্ডে তৃতীয় বাছাই জুড়িকে ছিটকে দেওয়ার পর কোয়ার্টার ফাইনালে ষষ্ঠ বাছাই জুটিকে পরাস্ত করেন বোপান্নারা। পাঁচ সেটের ম্যারাথন লড়াইও জিতেছেন। এবং এ সব নতুন পার্টনার নিয়ে খেলে। ছ’ফুট দু’ইঞ্চি ফরাসি ভাসেলিন গ্রাস কোর্টের ট্রেডমার্ক সার্ভ অ্যান্ড ভলি, চিপ অ্যান্ড চার্জ প্লেয়ার। তিন বছরের জুনিয়র পার্টনারকে ডান দিকের কোর্ট ছেড়ে দিয়ে তেত্রিশের বোপান্না অ্যাডভান্টেজ কোর্টে খেলে পিছন থেকে দুর্দান্ত সব রিটার্ন মারছেন। লি-হেশ জুটির মধ্যগগনে মহেশ যেমন করতেন। |