|
|
|
|
মাঠ দখলমুক্ত করতে নির্দেশ হাইকোর্টের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে আগামী চার মাসের মধ্যে মেদিনীপুর শহরে অরবিন্দনগরের মাঠ জবরদখলমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলাটি করেছিলেন কার্তিক ধর। কার্তিকবাবু স্থানীয় বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “হাইকোর্টের রায়ে মানুষের জয় হয়েছে। জেলা প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ছিল। তাই মাঠ জবরদখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি।” জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ বার পদক্ষেপ করা হবে।
অরবিন্দনগরের মাঠটি মদতে সরকারি জায়গা। মাঠের দখল নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। রাজনৈতিক চাপানউতোরও হয়েছে। তিন বছর ধরে এই খেলার মাঠের একাংশ বেআইনি ভাবে দখল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাঠের একটা বড় অংশে অস্থায়ী বসতি গড়ে উঠেছে। অভিযোগ, ফরওয়ার্ড ব্লকের মদতেই এ সব হয়েছে। জবরদখল উচ্ছেদের দাবিতে শহরে আন্দোলন, বন্ধ হয়। তবে, পরিস্থিতির তেমন হেরফের হয়নি। তখন বাসিন্দাদের বক্তব্য ছিল, যেহেতু এ সবের পিছনে রয়েছে বাম শরিক ফব, তাই আগের বাম সরকার দখল উচ্ছেদে তেমন পদক্ষেপ করেনি। কিন্তু পালাবদলের পরও মাঠ দখলমুক্ত না হওয়ায় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এলাকার ছেলেমেয়েরা এই মাঠে খেলাধুলো করে। এমন জায়গা জবরদখল করে অস্থায়ী বসতি তৈরি অনুচিত। মাঠ মাঠের জায়গাতেই থাকুক। সরকারি জায়গা এ ভাবে দখল করা যায় না। যাঁরা মাঠ দখল করে বসতি গড়েছেন, তাঁদের বক্তব্য, ‘আমরা গরিব মানুষ। বসবাস করার অন্য জায়গা নেই। তাই মাঠে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে আছি। উচ্ছেদ হলে কোথায় যাব?’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, ইচ্ছে করেই জায়গা দখল করা হয়েছে। |
|
অরবিন্দনগর মাঠের একাংশ দখল করে গড়ে উঠেছে বসতি। —নিজস্ব চিত্র। |
এই মাঠ নিয়ে গত বছর এক সর্বদল বৈঠক হয়। সেখানে খেলার মাঠ দখলমুক্ত করার পক্ষে মত দেন অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানিয়ে দেন, মাঠকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। বৈঠকে একমাত্র ফব নেতৃত্বই মাঠ দখল করে থাকা সকলের পুনর্বাসনের দাবি জানায়। বৈঠকে ঠিক হয়, কেউ প্রকৃত ভূমিহীন কি না, তা খতিয়ে দেখার পর উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হবে। পরবর্তীকালে জবরদখল উচ্ছেদের জন্য আইনি পদক্ষেপও শুরু করে প্রশাসন। গত বছরের ২৩ জুলাই নোটিস দিয়ে জানানো হয়, ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারি জায়গার দখল ছেড়ে দিতে হবে। না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসন সূত্রে খবর, জবরদখলকারীদের আগেই নোটিস দেওয়া হয়েছিল। শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। তবে কেউই শুনানিতে এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এরপরই উচ্ছেদের তোড়জোড় শুরু হয়। যদিও ওই সময়সীমা পেরোলেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পরিস্থিতি দেখে গত মাসে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন কার্তিকবাবু। ২৭ জুন শুনানি হয়। ওই দিনই রায় দেয় প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। কার্তিকবাবু বলেন, “সরকারি জায়গা এ ভাবে জবরদখল করে রাখা যায় না। শহরের উন্নয়নের স্বার্থে এই মাঠ দখলমুক্ত করা জরুরি। আগে এই মাঠের পরিবেশ অন্য রকম ছিল। কত ছেলেমেয়ে আসত। খেলাধুলো হত। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না।” তাঁর কথায়, “তিন বছরে আট বার মৌখিক প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। তিন বার লিখিত প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। তবে, এই পর্যন্তই। প্রতিশ্রুতি মতো মাঠ দখলমুক্ত করতে পদক্ষেপ আর হয়নি।” আদালতের নির্দেশের পর কী হয়, সেটাই এখন দেখার।
|
পুরনো খবর: মাঠের দখল-মুক্তির পক্ষেই মত |
|
|
|
|
|