মনমোহন-সরকার তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব ধরেই নিয়েছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা খাদ্য সুরক্ষা অর্ডিন্যান্স রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাতে সই করে দেবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই অনুযায়ী আজ দুপুরে কংগ্রেসের সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনও ডেকে ফেলেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কে ভি টমাস। কিন্তু প্রথমে সাংবাদিক সম্মেলন পেছতে হয়। তার পরে আর সারা দিনেও সাংবাদিক সম্মেলন করে উঠতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী। কারণ, অর্ডিন্যান্সে এখনও সই-ই করেননি রাষ্ট্রপতি।
মনে করা হচ্ছে, অর্ডিন্যান্স হাতে পাওয়া মাত্র সই না করে আসলে একটা বার্তা দিলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি যে এত গুরুত্বপূর্ণ বিল না পড়ে এবং তার সাংবিধানিক বা আইনি দিকগুলি খতিয়ে না দেখেই সই করে দিচ্ছেন, এমন কোনও ধারণা তৈরি করতে চাননি রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, বিলটি এখনও রাষ্ট্রপতি দেখেনইনি।
গত কাল সন্ধ্যাতেই মন্ত্রিসভায় অর্ডিন্যান্সটি পাশ হয়েছে। তার পরে তা রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণববাবুর টেবিলে পৌঁছবে। রাষ্ট্রপতি তা দেখে যথা সময়েই ফেরত পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রের আরও বক্তব্য, প্রণববাবু বরাবরই ‘টেক্সটবুক’ মেনে চলা রাষ্ট্রপতি। কাজেই তিনি যে বিলে সই করবেন না, এমন নয়। কারণ রাষ্ট্রপতি কোনও বিল ফেরত পাঠালে মন্ত্রিসভা দ্বিতীয় বার তা পাঠাতে পারে। তখন আর সই করা ছাড়া উপায় থাকে না রাষ্ট্রপতির। প্রণববাবু সেটা করে এপিজে আব্দুল কালামের মতো প্রকাশ্যে মতামত জাহির করার পক্ষে নন। বিলের সব দিক খতিয়ে দেখার পরেই তিনি সই করবেন, আর তাতে সময় লাগবে।
রাষ্ট্রপতির সই না হওয়ায় আজ কংগ্রেস নেতৃত্বকে অবশ্য অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। কারণ আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের তুরুপের তাস হল এই খাদ্য সুরক্ষা বিল। যা নিয়ে আজ থেকেই প্রচারে নামার পরিকল্পনা ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বের। সে প্রচারের সুর বেঁধে দেওয়ার লক্ষ্যেই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী টমাস। কিন্তু প্রথমেই সে পরিকল্পনা হোঁচট খেল। অন্য দিকে সংসদে বিল না এনে অর্ডিন্যান্স আনার জন্য আজও কংগ্রেসকে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের অভিযোগ, অর্ডিন্যান্স জারি করে, খাদ্য সুরক্ষা আইন আনার পুরো বিষয়টিই রাজনৈতিক ও ভোটের চমক। তিনি বলেন, “আমরা এই আইনের বিরোধী নই। কিন্তু, সংবিধানের পথে, সংসদে বিল পেশ করে, বিতর্ক ও সংশোধনীর মাধ্যমে তা পাশ করানো যেত। সাড়ে আট বছর চুপ থেকে, ভোটের আগে তড়িঘড়ি আইন পাশ করানোর একটাই অর্থ দাঁড়ায়।” সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাটের বক্তব্য, “সরকার যে খাদ্য সুরক্ষা আইন আনছে, তাতে প্রচুর ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। আর সেই জন্যই সংসদে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
কংগ্রেসের মুখপাত্র অজয় মাকেনের অবশ্য যুক্তি, সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্যই এই বিল আনা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি বলেন, “যারা সংসদে হট্টগোল পাকানোয় পিএইচডি করে ফেলেছে, তারাই এখন সংসদে আলোচনা নিয়ে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করছে।”
|