পাখির চোখ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। কিন্তু সংসদ চলবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চয়তা নেই। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর তাই শেষ পর্যন্ত খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে সেই অর্ডিন্যান্সের পথেই হাঁটল মনমোহন সরকার। আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমেই দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের জন্য তিন টাকা কেজি দরে চাল এবং দু’টাকা কেজি দরে গমের ব্যবস্থা করা হবে।
এর আগে ১৩ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও তখন অর্ডিন্যান্স জারির পথে হাঁটেনি কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নির্দেশে ঠিক হয়েছিল, সনিয়া গাঁধীর স্বপ্নের এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য অর্ডিন্যান্স জারি করার আগে সরকার আরও এক বার বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবে। এমনকী সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতেও তৈরি ছিল কেন্দ্র। আর দিন বিশেক পরেই বাদল অধিবেশন শুরু। তা সত্ত্বেও সংসদে বিল না এনে সরকার কেন অর্ডিন্যান্সের পথে হাঁটল, সেই প্রশ্ন আজ উঠেছে। বিরোধী থেকে সমর্থক, সব দলই কেন্দ্রকে বিঁধেছে। সংসদের অবমাননার অভিযোগ তোলেন বামেরা, বিজেপি বলেছে ‘নির্বাচনী চমক’, মুলায়ম সিংহের দলও খড়্গহস্ত। সপা বলেছে, এই পন্থা শুধু যে অগণতান্ত্রিক তা-ই নয়, এর ফলে দেশের খাদ্য অর্থনীতি বেহাল হয়ে পড়বে।
লোকসভায় অচলাবস্থার আশঙ্কায় অর্ডিন্যান্সের পথ নেওয়ার পরেও অবশ্য সংসদের অধিবেশন শুরুর ছ’সপ্তাহের মধ্যেই ওই অর্ডিন্যান্স পাশ করাতে হবে সরকারকে। আজ বৈঠকের পর খাদ্যমন্ত্রী কে ভি টমাস বলেন, “মন্ত্রিসভায় সম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।” অর্ডিন্যান্স জারি করতে হলেও কংগ্রেস নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছেন, খাদ্য সুরক্ষা বিলকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটে জনমুখী ভাবমূর্তি ফের তুলে ধরার লড়াইয়ে নামবেন তাঁরা। বস্তুত, খোদ খাদ্যমন্ত্রী টমাসই আগামিকাল দিল্লিতে কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে সেই প্রচারের সুর বেঁধে দেবেন।
সরকারি সূত্রের খবর, সংসদে খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে অনিশ্চয়তার সঙ্গে নভেম্বরে দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনও অর্ডিন্যান্স জারির অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছে। ২২ সেপ্টেম্বর রাজ্যগুলিতে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তখন থেকেই নির্বাচনের আচরণবিধি চালু হয়ে যাবে। এ দিকে বাদল অধিবেশন শেষ হতে হতে অগস্ট পেরিয়ে যাবে। সরকারের আশঙ্কা, বাদল অধিবেশনেও বিজেপি কোনও না কোনও অছিলায় অচলাবস্থা তৈরি করবে। অধিবেশনের মধ্যে অর্ডিন্যান্স জারি করাটাও সমস্যার হয়ে যাবে। অধিবেশন পেরিয়ে গেলেও সরকারের হাতে সময় থাকবে না। ভেবেচিন্তেই তাই আজ অর্ডিন্যান্সে সায়। আপাতত দরকার রাষ্ট্রপতির সই।
পৃথিবীর আর কোনও দেশ এখনও পর্যন্ত এত বড় খাদ্য সুরক্ষা কর্মসূচি নেয়নি। প্রায় সওয়া এক লক্ষ কোটি টাকার খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে সরকারের খাদ্য ভর্তুকি অন্তত ৪৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। এই প্রকল্পে প্রতি মাসে তিন টাকা কেজি দরে মাথা-পিছু পাঁচ কেজি চাল, দু’টাকা কেজি দরে গম এবং এক টাকা দরে জোয়ার-বাজরার মতো খাদ্যশস্য দেওয়া হবে। সরকারকে এখন ৭০ লক্ষ টন খাদ্যশস্য অধিগ্রহণ করতে হয়। খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের জন্য ৬ কোটি ২০ লক্ষ টন খাদ্যশস্যের প্রয়োজন পড়বে। একেবারে গরিব তালিকাভুক্ত আড়াই কোটি পরিবার অবশ্য অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা-র আওতায় মাসে ৩৫ কেজি করেই খাদশস্য পাবে। অর্ডিন্যান্সের জারির পরেও প্রকল্প রূপায়ণের কাজ শুরু হতে হতে অগস্ট মাস গড়িয়ে যাবে বলে খাদ্য মন্ত্রকের ধারণা। কারণ, কারা এই প্রকল্পের আওতায় পড়বেন, রাজ্য সরকারকে সেই তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে। তার পরেও গোটা দেশে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে লাগবে আরও অন্তত মাস ছয়েক।
|