|
|
|
|
খাদ্য বিল পাশে বিশেষ অধিবেশন চায় কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
খাদ্য সুরক্ষা বিলকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস যে ক্রমশ আগ্রাসী হবে, তার ইঙ্গিত সম্প্রতি ইউপিএ-র বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই দিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। সেই চিত্রনাট্য ধরে এগোনোর কাজ এ বার শুরু হল।
আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাসভবনে কংগ্রেস কোর গ্রুপের দীর্ঘ বৈঠকের পর জানিয়ে দেওয়া হল, খাদ্য বিল পাশ করাতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথা ভাবা হচ্ছে। এ জন্য প্রথমে সোমবার ইউপিএ সমন্বয় কমিটির বৈঠক হবে। তার পর বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ৭ জুন সর্বদল বৈঠক ডাকবে সরকার। সর্বসম্মতি গড়ে উঠলে এ মাসের শেষ দিকে ডাকা হতে পারে বিশেষ অধিবেশন। বিরোধীরা বিশেষ অধিবেশনে রাজি না-হলে সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে খাদ্য সুরক্ষা চালু করতে পারে বলেও কংগ্রেসের একটি সূত্রের খবর।
সংসদের গত বাজেট অধিবেশনেই খাদ্য বিল পাশ করাতে চেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ তুলে সংসদ অচল করে রাখে বিজেপি। ফলে খাদ্য বিল এবং সেই সঙ্গে একই রকম গুরুত্বপূর্ণ জমি বিল পাশ করানো যায়নি। তাতে মুশকিলে পড়ে কংগ্রেস। কারণ, গরিব মানুষের খাদ্যের অধিকার সুনিশ্চিত করার অস্ত্রেই আগামী লোকসভা ভোট লড়ার পরিকল্পনা করছেন সনিয়া-মনমোহন। এই অবস্থায় পাল্টা রণকৌশল হিসেবে এক দিকে যেমন কংগ্রেস খাদ্য বিল পাশের বিকল্প পথ খুঁজছে, তেমনই জনবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিরোধীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
খাদ্য বিল পাশ না-হওয়ার জন্য কংগ্রেস যে তাদের দায়ী করে গোটা দেশকে বার্তা দিতে চাইছে, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না বিজেপি-র। সেই কারণে দলীয় মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, “একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার, তা হল, বিজেপি চায় খাদ্য বিল এবং জমি বিল সংসদে পাশ হোক। বরং কংগ্রেসই সেটা চায় না। তাই তারা নানা অছিলায় বিজেপি-র ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে।” যদিও কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপি মুখে বিলকে সমর্থনের কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে তা পাশ করার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। সেই কারণেই সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কৌশল নেওয়া হয়েছে। এতে এক দিকে যেমন মানুষকে বোঝানো যাবে যে খাদ্য বিল নিয়ে কংগ্রেস কতটা আন্তরিক, তেমনই বিশেষ অধিবেশন হওয়ায় বিজেপি-র পক্ষেও কোনও ছুতোনাতায় গোলমাল করা সম্ভব হবে না।
কিন্তু বিজেপি কি বিশেষ অধিবেশনে রাজি হবে? রবিশঙ্করের জবাব, “আগে সরকার প্রস্তাব দিক, তার পর আমরা বিবেচনা করব।” খাদ্য বিল এখন যে চেহারায় রয়েছে তাতে বিজেপি-র কিছু আপত্তি আছে জানিয়ে রবিশঙ্কর বলেন, “আমরা চাই বিজেপি-শাসিত ছত্তীসগঢ়ের মডেলকে সামনে রেখে বিলটি সংশোধন করা হোক।”
খাদ্য বিলের কিছু প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি রয়েছে তৃণমূল তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও। মহাকরণ সূত্রের খবর, খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আর্থিক দায় কোনও ভাবেই নিতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। তাদের বক্তব্য, কোষাগারের যা অবস্থা, তাতে এই খাতে কোনও টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তৃণমূল সূত্রেও বলা হচ্ছে, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে তাদের সাংসদদের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে তাঁরা সকলেই ব্যস্ত।
বিশেষ অধিবেশন ডাকা না গেলে অর্ডিন্যান্স জারি করে খাদ্য সুরক্ষা চালু করে দেওয়ার পক্ষপাতী কংগ্রেসের একটি অংশ। কিন্তু এ নিয়ে দলে মতপার্থক্য রয়েছে। অন্য একটি অংশের মতে, এই বিলে সাতটি সংশোধনী রয়েছে। ছ’মাসের মধ্যে বিলটি সংসদে পাশ করানোর সময় কোনও একটি সংশোধনী খারিজ হয়ে গেলে জটিলতা তৈরি হবে। ফলে কংগ্রেসের এই অংশটি বিশেষ অধিবেশন ডাকারই পক্ষপাতী। তাদের আশা, আম-আদমির প্রশ্নে ডাকা এই অধিবেশন নিয়ে আপত্তি তুলতে পারবে না বিজেপি।
কিন্তু লোকসভা ভোট খাতায়কলমে এক বছর দূরে থাকলেও খাদ্য বিল নিয়ে কংগ্রেস কেন এখন থেকেই সক্রিয়, সেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করতে চাইলেও নভেম্বরে চার রাজ্যে বিধানসভা ভোটের পর জল কোন দিকে গড়াবে তা নিয়ে নিশ্চিত নন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাই এখন থেকেই লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দিতে চাইছেন সনিয়া-রাহুল। সে জন্য সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘ভারত নির্মাণ’-এর প্রচার এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। খাদ্য বিল পাশ করানোর চেষ্টাও সেই প্রচারেরই অঙ্গ।
দশ বছর আগে শিমলায় দলের চিন্তন শিবির থেকে খাদ্য সুরক্ষার জন্য সওয়াল শুরু করেছিলেন সনিয়া। এত দিন পরে সেই বিল পাশ করা গেলে তার কৃতিত্ব স্বাভাবিক ভাবেই নিতে চাইবে কংগ্রেস। না করাতে পারলেও দায় চাপাবে বিজেপি-র কাঁধে।
|
পুরনো খবর: সংসদ অচলই, বিজেপির চালে বিপাকে কংগ্রেস |
|
|
|
|
|