দেহ আনা নিয়ে টানাপোড়েন
ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হানায় হত বাঙালি অফিসার
স্তারের হামলার রেশ কাটার আগেই ছত্তীসগঢ়ে ফের হামলা চালাল মাওবাদীরা। শনিবার, বস্তার কাণ্ডের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায়। আর তাতে প্রাণ হারালেন এক বাঙালি সিআরপিএফ অফিসার। নিহত শৌনক দাস (৩৬) সিআরপিএফের ২১১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের ডেল্টা কোম্পানির সহকারী কম্যান্ডান্ট ছিলেন। তাঁর বাড়ি হাওড়ার জয়নারায়ণবাবু আনন্দ দত্ত লেনে। গত দু’বছর ধরে তিনি ছত্তীসগঢ়ে কর্মরত ছিলেন। তারও আগে ছিলেন কাশ্মীরের সোপোরে। স্পর্শকাতর এলাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় তাঁকে সিআরপি-র বিশেষ দলের সদস্য করে আনা হয় ছত্তীসগঢ়ে।
শৌনকবাবুর দাদা সৌরভ দাস জানিয়েছেন, গরমের ছুটি পড়ায় গত রবিবারই স্ত্রী উর্মি ও দুই মেয়েকে ছত্তীসগঢ়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ওই বাঙালি অফিসার। তাঁর বাবা-মা বর্তমানে বেঙ্গালুরুতে আছেন। এ দিন দুপুরেই ছত্তীসগঢ়ের সিআরপি-র সদর দফতর থেকে হাওড়ার বাড়িতে দুঃসংবাদটি পৌঁছয়। রায়পুর থেকে শনিবার রাতের গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়েছে শৌনকবাবুর দেহ। তাঁর স্ত্রী, সন্তানেরাও একই ট্রেনে আসছেন। আসছেন সিআরপি-র স্থানীয় পদস্থ কর্তারাও। তবে দেহ ট্রেনে আসবে না বিমানে, তা নিয়ে সিআরপি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত টানাপোড়েন চলে।
কী ভাবে মৃত্যু হল শৌনকবাবুর?

শৌনক দাস
এক সিআরপি অফিসার জানিয়েছেন, এ দিন দুপুরে খাল্লাড়ি জঙ্গল এলাকায় অভিযান চালাচ্ছিল তাদের একটি বিশেষ দল। গত ২৫ মে কংগ্রেসের ‘পরিবর্তন যাত্রায়’ মাওবাদী হামলার পর থেকেই ছত্তীসগঢ়ের বিভিন্ন জঙ্গলে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে সিআরপি। এ দিনের অভিযান চলছিল ওড়িশার নাগরানপুর আর ছত্তীসগঢ়ের ধন্তেরি জেলার সীমানাবর্তী এক পাহাড় ঘেরা জঙ্গল এলাকায়। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন শৌনকবাবুই। দুপুর দেড়টা নাগাদ উল্টো দিক থেকে আক্রমণ চালায় মাওবাদীরা। পাল্টা গুলি চালান জওয়ানরাও। মাওবাদীদের দলটি পিছু হটতে বাধ্য হলেও আধ ঘণ্টার ওই সংঘর্ষে নিহত হন কম্যান্ডান্ট দাস। তাঁর পেটে ও পায়ে গুলি লেগেছিল বলে জানা গিয়েছে।
সিআরপি-র ওই দলটির দাবি, সংঘর্ষে দু’তিন জন মাওবাদীও আহত হয়েছে। তবে তারা ওড়িশায় পালিয়েছে বলে সন্দেহ। খাল্লাড়ির জঙ্গলে যে মাওবাদীরা রীতিমতো ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল, তার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন জওয়ানরা।
সেই ঘাঁটি থেকে কিছু ক্যামোফ্লেজ পোশাক, ডায়েরি ও কিছু ওষুধ উদ্ধার হয়েছে।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ময়না-তদন্ত সেরে শৌনকবাবুর দেহ শনিবার রাতের গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন সিআরপি-র কর্তারা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা রবিবার বিমানে করে দেহ আনতে চায়। রায়পুর থেকে রবিবার বিকেলের আগে কোনও উড়ান নেই। সেই বিমানেই শৌনকবাবুর দেহ আনতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই মতো ছত্তীসগঢ় সরকারের মাধ্যমে অনুরোধ পাঠানো হয় সিআরপি-র কাছে। কিন্তু সিআরপি কর্তারা তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। যাকে অভব্য আচরণ হিসেবেই গণ্য করছে মহাকরণ। সিআরপি-র বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নালিশ জানানোর কথাও বিবেচনা করছে ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার।
আজ রবিবার হাওড়ায় ভোট। ভোটপর্ব চলার মধ্যে সিআরপি কর্তারা দেহ নিয়ে হাওড়ায় এসে পৌঁছলে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হবে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলছে তৃণমূল শিবির। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছে তারা।
শনিবারই শৌনকবাবুর হাওড়ার বাড়িতে যান রাজ্যের দুই মন্ত্রী, অরূপ রায় ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অন্ত্যেষ্টির সব রকম ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করবে বলে নিহত অফিসারের পরিবারকে জানিয়ে আসেন তাঁরা।
শৌনকবাবুর অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে সিআরপিএফের ডিজি প্রণয় সহায় নিজে দিল্লি থেকে কলকাতায় আসছেন বলে খবর।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.