|
|
|
|
হামলার পরে মহেন্দ্র কর্মার দেহ ঘিরে নাচ মাওবাদীদের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
জঙ্গলের রাস্তায় পড়ে ছিল গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া মহেন্দ্র কর্মার দেহটা। যেটা ঘিরে কয়েক ঘণ্টা আগেই নাচতে নাচতে উল্লাসে ফেটে পড়েছিল মাওবাদীরা। ইতস্তত রক্তের দাগ, কার্তুজের খোল। এক ঝলক দেখলেই বোঝা যায়, শনিবার বিকেলে কী তাণ্ডব চলেছে এখানে। ঘন জঙ্গলের ভিতরে তখন নিরাপত্তাবাহিনীর সন্ধানী চোখ এ দিক ও দিক ঘুরছে। আরও দেহের খোঁজে।
কংগ্রেসের ‘পরিবর্তন যাত্রা’র কনভয়ে মাওবাদী হামলার ২৪ ঘণ্টা পরেও নিহতের সংখ্যা জানাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাম নিবাস জানিয়েছেন, রবিবার রাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪। অসমর্থিত সূত্রে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানানো হচ্ছে। আহতের সংখ্যা ৩২।
কাল সন্ধ্যায় মাওবাদীদের হাতে অপহৃত ছত্তীসগঢ় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নন্দকুমার পটেল ও তাঁর ছেলে দীনেশের গুলিবিদ্ধ দেহ আজ সকালে বস্তারের জিরাম উপত্যকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। |
|
সভানেত্রীর সান্ত্বনা। নিহত প্রদেশ সভাপতি নন্দকুমার পটেলের
বাড়িতে সনিয়া গাঁধী। রায়পুরে রবিবার। ছবি: পিটিআই |
উদ্ধার হয়েছে আরও আট জনের দেহ। গুরুতর আহত বিদ্যাচরণ শুক্লকে আজ ভোরে গুড়গাঁওয়ের একটি হাসপাতালে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী আজ রায়পুরে গিয়ে হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। কাল রাতেই রায়পুরে এসে হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন রাহুল গাঁধী। মাওবাদী হানায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরে একটি শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে জানিয়েছেন, ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলার তদন্ত করবে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। রাতে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে বসে রাজ্য মন্ত্রিসভা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, দুই বিচারপতির নেতৃত্বে এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হবে। রাজ্য সরকার নিহতদের পরিবারপিছু এককালীন ৫ লক্ষ ও আহতদের এককালীন ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
কাল সুকমা-জগদলপুর জাতীয় সড়কের উপরে টোঙ্গাপাল ও দরভার মধ্যে জেরেমি পাহাড়ে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালানোর সময় মাওবাদীরা নন্দকুমার ও তাঁর ছেলে দীনেশকে তুলে নিয়ে যায়। ওই দু’জনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নন্দকুমারের আর এক ছেলে উমেশ মাওবাদীদের উদ্দেশে আবেদনও জানান। কিন্তু আজ তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় ওই দু’জনের গুলিবিদ্ধ দেহ পাওয়া যায়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সালওয়া জুড়ুমের প্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র কর্মার দেহ গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়ার পরে আনন্দে ফেটে পড়ে তাঁর দেহ ঘিরে নাচতে শুরু করে মাওবাদীরা। কয়েক জন নিরাপত্তা রক্ষীর পায়ে গুলি করে তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাঁদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, কংগ্রেসের কনভয়ের উপরে মাওবাদী হামলার ছক কষা হয় দিন কয়েক আগেই। এই হামলার মূল দায়িত্ব ছিল সিপিআই (মাওবাদী)-র দরভা ডিভিশনের উপরে। এদের সাহায্য করতে ওড়িশা থেকে মাওবাদীদের একটি বড় দল সুকমায় পৌঁছয়। হামলার নেতৃত্ব দেয় দরভা ডিভিশনের কমান্ডার বিনোদ এবং সুকমার কেরলাপালের এরিয়া কমান্ডার দেবা। মাওবাদীদের কাছে আগে থেকেই খবর ছিল যে, ‘পরিবর্তন যাত্রা’র জন্য রাজ্য কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বস্তারে যাবেন। তাঁদের মধ্যেই থাকবেন ‘সালওয়া জুড়ুম’-এর হোতা মহেন্দ্র কর্মা। দীর্ঘ দিন ধরেই সালওয়া জুড়ুম আন্দোলনের জন্য মাওবাদীদের খতম তালিকার শীর্ষে রয়েছেন মহেন্দ্র। এ জন্য তাঁর বিশেষ নিরাপত্তাও ছিল। |
|
বাবা-ছেলে। মাওবাদী হামলায় নিহত নন্দকুমার পটেল ও তাঁর ছেলে দীনেশ। ছবি: পিটিআই |
কিন্তু মহেন্দ্র খতম তালিকায় থাকলেও বিদ্যাচরণ শুক্ল বা নন্দকুমার পটেলের মতো কোনও নেতা সেই তালিকায় ছিলেন না বলেই পুলিশের অনুমান। রাজনন্দগাঁওয়ের প্রাক্তন বিধায়ক উদয় মুদালিয়ারের নাম থাকারও প্রশ্ন ছিল না। তা সত্ত্বেও কেন এমন হামলা হল, তার উত্তর এখনও মেলেনি। তবে একটি সূত্রের দাবি, তিনটি বলয় তৈরি করে দেড়-দু’হাজার মাওবাদীকে এই অভিযানে কাজে লাগানো হয়েছে। গাছ ফেলে, ল্যান্ডমাইন ফাটিয়ে, নির্বিচার গুলি চালিয়ে যারা এই অভিযানে সামিল হয়েছে, তারা শুধু মহেন্দ্র কর্মাকেই মারতে এসেছিল, এমন ভাবার কারণ নেই। দেশব্যাপী আলোড়ন তৈরির এই সুযোগ মাওবাদীরা ছাড়তে চায়নি।
রায়পুরে প্রধানমন্ত্রী এ দিন জানান, এই ঘটনায় মৃতদের পরিবারপিছু এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা ও আহতদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নকশালবাদের সামনে দেশ মাথা নত করবে না। হত্যাকারীদের দ্রুততার সঙ্গে ধরা হবে। দেশকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সরকার তাদের বিচারের জন্য দাঁড় করাবে।” সনিয়াও বলেন, “এটা কংগ্রেস নয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপরেই আক্রমণ।”
|
পুরনো খবর: ছত্তীসগঢ়ে খতম সালওয়া জুড়ুমের হোতা, জখম বিদ্যাচরণ |
|
|
|
|
|