|
|
|
|
যাত্রাপথে হামলা |
ছত্তীসগঢ়ে খতম সালওয়া জুড়ুমের হোতা, জখম বিদ্যাচরণ |
তাপস সিংহ • কলকাতা |
রাজনৈতিক নেতাদের উপরে সব থেকে বড় মাওবাদী হামলার ঘটনা ঘটল ছত্তীসগঢ়ে।
আজ সন্ধ্যায় ছত্তীসগঢ় প্রদেশ কংগ্রেসের ‘পরিবর্তন যাত্রা’র উপরে ভয়াবহ মাওবাদী হামলায় হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। তবে গভীর রাত পর্যন্ত নিহত ও আহতের সংখ্যা নির্দিষ্ট ভাবে জানা যায়নি।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ছত্তীসগঢ় বিধানসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা মহেন্দ্র কর্মা, রাজনন্দগাঁওয়ের প্রাক্তন বিধায়ক উদয় মুদালিয়ার এবং এক কংগ্রেস কর্মী। গুলিতে গুরুতর আহত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল। তাঁকে রাতেই জগদলপুরের হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাঁর অস্ত্রোপচার চলছে। আহতদের মধ্যে আরও আছেন কংগ্রেস বিধায়ক কাওয়াসি লাখমা, দলীয় নেতা রাজীব নারায়ণ, প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক ফোলো দেবী নেতাম ও এক কংগ্রেসকর্মী। নিহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন নিরাপত্তা রক্ষীও। মাওবাদীদের হাতে অপহৃত হয়েছেন ছত্তীসগঢ় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নন্দকুমার পটেল ও তাঁর ছেলে দীনেশ। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁদের কোনও সন্ধান মেলেনি। সুকমা থেকেই হেলিকপ্টারে রায়পুরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ায় রেহাই পেয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজিত জোগী। |
|
|
হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে জখম
স্থানীয় বিধায়ক কাওয়াসি লাখমা-র । |
হাসপাতালে রক্তাক্ত কংগ্রেসের
আর এক নেতা। |
|
রাতেই ছত্তীসগঢ়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসারদের একটি দলও সেখানে যাচ্ছেন।
ছত্তীসগঢ়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ ও ‘বিকাশযাত্রা’র নামে প্রচারে নেমেছে যথাক্রমে বিরোধী কংগ্রেস ও শাসক বিজেপি। ছত্তীসগঢ় পুলিশের ডিজি রাম নিবাস জানিয়েছেন, আজ সুকমায় ‘পরিবর্তন যাত্রা’ সেরে কেশলুরে ফিরছিলেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। পথে টোঙ্গাপাল ও দরভার মধ্যে জেরেমি পাহাড়ের উপরে তাঁদের কনভয়ে হামলা চালায় মাওবাদীরা। বস্তুত, দেশের মাওবাদী সন্ত্রাস-মানচিত্রে ছত্তীসগঢ়ের তিন জেলা সুকমা, দন্তেওয়াড়া ও বিজাপুর অন্যতম প্রধান। এই সুকমার টারমেটলার জঙ্গলে তিন বছর আগে, ২০১০-এর ৬ এপ্রিল একই কায়দায় ঘিরে ফেলে সিআরপিএফের ৭৬ জন জওয়ানকে গুলি করে, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, কুপিয়ে খুন করে মাওবাদীরা। |
|
|
নিহত। সালওয়া জুড়ুমের হোতা মহেন্দ্র কর্মা |
জখম। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল |
|
ছত্তীসগঢ় পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (গোয়েন্দা শাখা) মুকেশ গুপ্ত রাতে আনন্দবাজারকে জানান, প্রথমে পাহাড়ি পথে গাছ ফেলে কনভয় আটকে দেয় মাওবাদীরা। তার পরেই ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটায়। ঘন জঙ্গলের আড়াল থেকে শুরু হয় গুলিবর্ষণও। প্রায় দু’ঘণ্টা কনভয়ের নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে জঙ্গিদের গুলির লড়াই চলে। গোটা কনভয় ঘিরে ফেলে হামলা চালায় দেড়শো থেকে দু’শো মাওবাদী।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কনভয়ে থাকা কংগ্রেস নেতাদের নিরাপত্তা রক্ষীরা পাল্টা গুলি চালালেও মাওবাদীরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল। মহেন্দ্র কর্মার গাড়ি লক্ষ করে গুলিবর্ষণের সময় তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরাও পাল্টা জবাব দেন। এক সময়ে তাঁদের গুলি শেষ হয়ে গেলে মহেন্দ্র গাড়ি থেকে নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি তাঁকে ঝাঁঝরা করে দেয়। বিদ্যাচরণ শুক্লর পায়ে, পিঠে ও পাকস্থলীতে তিনটি গুলি লেগেছে বলে জানা গিয়েছে। তাঁকে প্রথমে স্থানীয় গরবা থানায় আনা হয়। পরে সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় জগদলপুরের মহারানি হাসপাতালে। সংঘর্ষে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীর মৃত্যু হয়েছে। |
|
ইতিমধ্যে নন্দকুমার ও দীনেশকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মাওবাদীদের উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছেন দীনেশের ভাই উমেশ কুমার।
ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী-বিরোধী ‘সালওয়া জুড়ুম’-এর প্রধান সংগঠক ছিলেন মহেন্দ্র কর্মাই। অনেক দিন ধরেই মাওবাদীদের ‘হিট লিস্ট’-এ ছিলেন তিনি। আহত কংগ্রেস নেতা রাজীব নারায়ণকে সিআরপিএফের হেলিকপ্টারে রায়পুরের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সিআরপিএফের ছত্তীসগঢ়ে আইজি (অপারেশনস) জুলফিকার হাসান আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছে সিআরপিএফ বাহিনী। শুরু হয়েছে তল্লাশি। তিনি ও অন্য সিআরপিএফ কর্তারা আগামিকাল সেখানে যাচ্ছেন।
‘পরিবর্তন’ ও ‘বিকাশ’ যাত্রার উপরে মাওবাদীরা হামলার হুমকি দিয়েছিল আগেই। ছত্তীসগঢ়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজিত জোগীর দাবি, “পুলিশকর্তাদের যাবতীয় মাথাব্যথা মুখ্যমন্ত্রীর ‘বিকাশযাত্রা’কে ঘিরেই। ‘পরিবর্তন যাত্রা’য় অনেক কংগ্রেস নেতা-কর্মী শামিল হন। কিন্তু, তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি।”
ঘটনার পরেই পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে রায়পুরে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ। ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যপাল শেখর দত্তও ওই বৈঠকে ছিলেন। আপাতত তাঁর ‘বিকাশযাত্রা’ স্থগিত রাখা হয়েছে। ঘটনার পরেই রমন সিংহের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ছত্তীসগঢ়ের এখনই আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী চাই কি না তা জানতে চান তিনি। অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর। মাওবাদীরা গণতন্ত্রের উপরে হামলা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী। সনিয়া ও রাহুল গাঁধী এ দিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে জরুরি বৈঠকে বসেন। সেখান থেকে বেরিয়ে সনিয়া বলেন, “রমন সিংহের কী সাহায্য চাই তা জানতে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রমন জানিয়েছেন, তিনি পরে ফোন করে তা জানাবেন। যদিও এখনও সে ফোন এসেছে বলে আমার মনে হয় না।” কংগ্রেস সূত্রে খবর, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ছত্তীসগঢ়ে সহানুভূতির হাওয়া তুলতে পুরোদস্তুর আসরে নেমেছে।
|
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|