|
|
|
|
ছত্তীসগঢ়ে গেলেন সনিয়া, মনমোহনও |
আবেগ-অস্ত্রেই ঘুরে দাঁড়াতে চায় কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নভেম্বরে ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভা নির্বাচন। তার কয়েক মাস আগে শনিবার বিকেলে কংগ্রেসের কনভয়ে মাওবাদী হামলার ঘটনায় বড় ধাক্কা খেলেন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ। আর এই ঘটনায় কংগ্রেসের প্রতি মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে দলকে উজ্জীবিত করতে মাঠে নেমে পড়েছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী।
গত কালের হামলা রমন সিংহকে একাধিক ধাক্কা দিয়েছে। এক, ওই ঘটনার পর রাজ্য জুড়ে কংগ্রেসের পক্ষে সহানুভূতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। রায়পুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতর সর্বত্রই রমন সিংহের সরকারকে বরখাস্তের দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে কংগ্রেস। ছত্তীসগঢ়ে বন্ধও হয়েছে। লোকসভার আগে ইউপিএ সরকারকে বিপাকে ফেলতে বিজেপি এ মাসের ২৭ তারিখ থেকে যে ‘জেল-ভরো’ আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেছিল, এই পরিস্থিতিতে তা বাতিল করে দিয়েছেন দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ। |
|
উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিহত মহেন্দ্র কর্মার দেহ। —নিজস্ব চিত্র |
দ্বিতীয় বড় বিষয়টি হল, কংগ্রেসের নেতাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না দেওয়ার অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে, কংগ্রেসের ‘পরিবর্তন যাত্রা’য় যখন তাবড় নেতারা যাচ্ছেন, তখন সেখানে কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হল না? রাজ্য গোয়েন্দারা কেন আগাম সতর্ক করতে পারলেন না? প্রশ্ন উঠেছে, দিন পনেরো আগে এই এলাকা থেকেই রমন সিংহ তাঁর ‘বিকাশ যাত্রা’ শুরু করেছেন। তখন নিরাপত্তা আটোসাঁটো ছিল। তা হলে কংগ্রেসের সময় কেন নিরাপত্তা ঢিলেঢালা ছিল?
পরিস্থিতি সামাল দিতে গত কাল থেকেই সক্রিয় বিজেপি নেতৃত্ব। রমন নিজেই প্রধানমন্ত্রীকে ফোনে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে যেন রাজনীতি না হয়। আডবাণীও গতকাল প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন। আজ সকালে বিদ্যাচরণ শুক্লকে দেখতে গুড়গাঁওয়ের হাসপাতালেও যান তিনি। কিন্তু কংগ্রেস জমি ছাড়তে নারাজ। এই হামলাকে কেন্দ্র করে রমন সরকারকে প্যাঁচে ফেলতে কংগ্রেসের প্রথম কৌশল হল, এই হামলার ঘটনাকে সামনে রেখে মানুষের সহানুভূতি আদায় করা। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেওয়া। এবং দ্বিতীয়ত, বিধানসভা ভোটের আগে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করা।
মাওবাদী হামলায় আদিবাসী নেতা মহেন্দ্র কর্মা ও উদয় মুদিয়ালের মৃত্যুর খবর ছড়াতেই রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কর্মীদের মনোভাব বুঝে রাতেই রায়পুরে হাসপাতালে পৌঁছন রাহুল। সেখানে আহতদের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি বলেন, “ওরা ভয় দেখাতে চাইছে। কিন্তু আমাদের ভয় দেখিয়ে পিছু হটানো যাবে না।” আজ সকালে রায়পুরে গিয়ে নিহত ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।
ছত্তীসগঢ়ের ঘটনাকে কংগ্রেস কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা এই তিন শীর্ষ নেতার সফরেই স্পষ্ট। যদিও সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এঁরা কেউই আঙুল তোলেননি। কিন্তু রাজ্য কংগ্রেস যেমন রমন সরকারকে বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি তুলতে শুরু করেছে, তেমনই কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্য রাজ্যই দায়ী। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশের কথায়, “মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের।”
গত কালের হামলার ঘটনায় কোণঠাসা রমন সিংহ সরকারকে হারিয়ে ছত্তীসগঢ় দখলের সুযোগ এসেছে কংগ্রেসের কাছে। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে রমন সুবিধা করে দিতে চায় না তারা। বরং বিজেপির সরকারকে রাজ্যে বহাল রেখেই বিজাপুর, দান্তেওয়াড়া, সুকমা, নারায়ণপুর ও কাঙ্কেরে মাওবাদী দমনে আরও সক্রিয় হবে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে তার কৃতিত্বও নিতে পারবে কংগ্রেস। জয়রামও আজ বলেন, “কখনও কখনও এমন সময় আসে, যখন উন্নয়ন কর্মসূচিকে কিছুটা সরিয়ে রেখে নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হয়।”
ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া রমন সিংহও। তিনি জানেন, ভোটের আগে মাওবাদী হামলায় দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতার মৃত্যুতে বেশ সঙ্কটে কংগ্রেস নেতৃত্ব। ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই সম্প্রতি নন্দকুমার পটেলকে প্রদেশ সভাপতি করেছিলেন রাহুল। কেন না অজিত জোগীর মতো কেবল একজন আদিবাসী নেতাকে সামনে রেখে রাজ্যে ক্ষমতা দখল সম্ভব নয় বলেই মনে করছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তা ছাড়া জোগীর তুলনায় পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন নন্দকুমার। গত কাল হামলার সময় নন্দকুমারের সঙ্গে তাঁর ছেলেকেও তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে মাওবাদীরা। এই ঘটনায় বড় ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য কংগ্রেস। তা ছাড়া, গত বিধানসভা নির্বাচনে বস্তার অঞ্চলের ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছিল কংগ্রেস। তাই এ বার বস্তারে জোর দিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু গত কালের হামলায় দলের অন্যতম আদিবাসী নেতা মহেন্দ্র কর্মার মৃত্যু বস্তারে বড় ধাক্কা দিয়েছে কংগ্রেসকে।
রাজ্যে ভোটের এখনও প্রায় ছ’মাস বাকি। রমন মনে করছেন, রাজনীতির মোড় ঘোরানোর জন্য এটুকু সময়ই যথেষ্ট। সামনের মাসের ৫ তারিখে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা হবে। অনেক দিন ধরেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি বলে আসছে, মাওবাদী সমস্যা শুধু রাজ্যের বিষয় নয়। তাই এ নিয়ে রাজ্যকে এক তরফা দায়ী করার বিরুদ্ধেই প্রচার করবে তারা। তা ছাড়া, অদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় মাওবাদী হামলাকে কংগ্রেসের প্রতি আদিবাসীদের বার্তা হিসেবেই দেখছে বিজেপি। সেটাকেও কাজে লাগাতে চায় তারা।
কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আজ বলেন, “রাজ্যে কর্মীদের মনোবল বাড়ানোই এখন প্রথম কাজ। ঘটনার পরেই রাহুল ওখানে গিয়েছেনও সেই কারণেই।” ওই নেতা জানান, রাহুলের নির্দেশেই মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে একযোগে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ শুরু হয়। ছত্তীসগঢ়ে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তা ফের শুরু হবে। সেই যাত্রা নতুন করে শুরুর দিনে সম্ভবত নেতৃত্ব দেবেন রাহুল নিজেই। |
|
|
|
|
|