|
|
|
|
কেদারের মন্দির বাঁচাতে প্রাচীর গড়বে এএসআই |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
চোরাবারিতাল আর মন্দাকিনীর প্রবল জলস্রোতে আশপাশের প্রায় সব ঘরদোর ভেসে গিয়েছে। কিন্তু রক্ষা পেয়ে গিয়েছে কেদারনাথের মূল মন্দিরটি। একটি মত বলছে, জলের তোড়ে মন্দিরের ঠিক পিছনে ভেসে এসে আটকে গিয়েছিল বিরাট বোল্ডার। তাতে ধাক্কা খেয়েই জল মূল মন্দিরের দু’পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে। অন্য মতে, নিরেট পাথরে তৈরি মন্দিরটিই ওই জলভারের অভিঘাত সহ্য করতে পেরেছে। কিন্তু তাতে সামান্য হলেও ক্ষতি হয়েছে মন্দিরের দেওয়ালের। ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়, তাই মন্দিরের পিছনে একটি প্রাচীর খাড়া করে কেদারনাথকে রক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)।
সর্বেক্ষণের মহা নির্দেশক প্রবীণকুমার শ্রীবাস্তব বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, জলের স্রোতে মন্দিরটির পিছন দিকের দেওয়ালে বড় বড় বোল্ডার এসে পড়েছিল। তারাই জলের অভিঘাত সহ্য করে মন্দিরটি বাঁচিয়ে দিয়েছে। তবে ওই বোল্ডারের ধাক্কায় মন্দিরের দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্ভবত গ্র্যানাইট বা স্যান্ডস্টোন দিয়ে মন্দিরটি তৈরি। মন্দিরের গায়ের পাথর কোথাও কোথাও সরে গিয়েছে। ভিতরে ভাঙাচোরা পাথরে ভরে গিয়েছে। তবে মূল মন্দিরটি অক্ষতই রয়েছে।” |
|
সুপ্রাচীন এই মন্দিরটি এখনও পর্যন্ত সর্বেক্ষণের হাতে সংরক্ষিত নয়। তবে মন্দিরটি সংরক্ষণের দায়িত্ব তাঁদের হাতেই থাকা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তা হলে শুধু মন্দিরটিই নয়, সংলগ্ন পুরো এলাকাটিই বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সংরক্ষণ করা যাবে। তবে তা করা হবে মন্দিরের মূল কাঠামো ও পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখেই। সর্বেক্ষণের প্রাক্তন মহা নির্দেশক অধিকর্তা গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, “যখনই প্রয়োজন পড়েছে সর্বেক্ষণই এই মন্দির সংরক্ষণের কাজ করেছে। মন্দিরটির যে ধর্মীয় গুরুত্ব, তাতে তার সংরক্ষণ নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করা উচিত।” সর্বেক্ষণের অতিরিক্ত ডিজি বি আর মণির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যেই এই মন্দিরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। তবে তাঁরা এখনও মূল মন্দিরে পৌঁছতে পারেননি। প্রবীণকুমার জানান, ওই প্রতিনিধি দল ফিরে আসার পরেই ঠিক মতো জানা যাবে, মন্দিরের কতটা ক্ষতি হয়েছে। কী ভাবে তা মেরামত করা হবে, তারপরেই তা স্থির হবে।
মহাভারতের সময়েই শৈব তীর্থ হিসাবে কেদারনাথের উল্লেখ থাকলেও মূল মন্দিরটি গড়ে ওঠে অনেক পরে। মূলত চারটি দফায় প্রায় হাজার বছর ধরে নির্মাণ কাজ শেষে মন্দিরটি বর্তমান চেহারা নেয়। রাহুল সাংকৃত্যায়ন তাঁর হিমালয় পরিচয় গ্রন্থে দাবি করেন, গুপ্ত ব্রাহ্মিণী লিপিতে ওই মন্দিরের প্রথম উল্লেখ রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এগারোশো শতকে বর্তমান মন্দিরের মূল কাঠামোটি নির্মাণ করা হয়। মন্দিরের গর্ভগৃহটি সে সময়েই নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তী শতকেও ফের এক দফা সংস্কারের কাজ হয় ওই মন্দিরের। চতুর্থ পর্যায়ে ১৮০০ শতাব্দীতে নির্মিত হয় মন্ডপটি। |
|
গৌরীকুণ্ড-কেদারনাথ পথের ধারেই পড়ে রয়েছে তীর্থযাত্রীর মৃতদেহ। ছবি: এপি। |
প্রাথমিক ভাবে এএসআইয়ের কাছে যে তথ্য এসেছে তাতে জানা গিয়েছে, বড় পাথরের আঘাতে মন্দিরের তিন থেকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। বি আর মণির মতে, মন্দিরের পূর্ব দিকের প্রবেশ পথটি সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হেলে পড়েছে মন্ডপটি। ফলে মন্দিরটির ভারসাম্য কিছুটা হলেও নড়ে গিয়েছে। ফলে সেটিকেও সতর্কতার সঙ্গে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াও বড় চ্যালেঞ্জ সর্বেক্ষণের। ইতিমধ্যেই মন্দির সংরক্ষণের কাজে ভূতত্ত্ববিদ ও নদীর গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য জলবিজ্ঞানীদের সাহায্য চেয়েছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী চন্দ্রেশ কুমারী কাটোচ দাবি করেছেন, “উত্তরাখণ্ড সরকার থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলেই সর্বেক্ষণের দলটি মন্দির পৌঁছে গিয়ে হাতে কলমে ক্ষতির পরিমাপ করবে। তবে মন্দির সংরক্ষণেও টাকার অভাব হবে না।” চন্দ্রেশকুমারী বলেন, “মূল মন্দিরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়াটাই আমাদের লক্ষ্য।”
|
এই সংক্রান্ত আরও খবর... |
• পিছলে খাদে পড়ছে মানুষ, পথে চললে পায়ে ঠেকছে লাশ
|
পুরনো খবর: ছড়ানো দেহের পাশে টাকার বান্ডিল, মৃত্যুপুরী কেদারনাথ |
|
|
|
|
|