অতিরিক্ত যাত্রীর চাপেই ভুগছে এসি রেক |
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবাশিস দাস |
রাস্তায় বাস নেই। প্রাণ অতিষ্ঠ করা প্যাচপেচে গরম। এই অবস্থায় মাত্র চার টাকায় বাতানুকূল ট্রেনে মনোরম সফর মেট্রো ছাড়া আর কে দেবে? ফলে ক্রমেই ভিড় বাড়ছে মেট্রোয়। গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে সাধারণ রেক ছেড়ে বাতানুকূল রেকেই সফর করতে চাইছেন যাত্রীরা। আর সেটাই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মেট্রো-কর্তৃপক্ষের। অত যাত্রী বহন করার মতো পরিকাঠামো না থাকায় নিত্য বসে যাচ্ছে দু’-তিন বছরের পুরনো বাতানুকূল বা এসি রেকগুলি।
কিন্তু কী ভাবে বাতানুকূল রেকে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠা বন্ধ করা যাবে? মেট্রো-কর্তৃপক্ষের কথায়, অনুরোধ করা ছাড়া উপায় নেই। যাত্রীদের বোঝানো হবে, সামনে যে রেক পাবেন তাতেই উঠুন। সবাই বাতানুকূল রেকের জন্য দাঁড়াবেন না। পাশাপাশি, দরজা বন্ধ হওয়ার সময়ে অনেকেই ট্রেনে ওঠার মরিয়া চেষ্টা করেন। এ বার থেকে এমন হলে জরিমানা করাও শুরু করেছে মেট্রো। সব রেকগুলি এসি না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের কাছে এই অনুরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ বলেছেন, “ইতিমধ্যে যতীন দাস পার্ক স্টেশনে বাতানুকূল ট্রেনের দরজা বন্ধ হওয়ার সময়ে ওঠার চেষ্টা করায় তিন যাত্রীকে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়।” |
বৃহস্পতিবারও মেট্রোর এসি রেকে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য ব্যস্ত সময়ে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ বেলগাছিয়া স্টেশনে কবি সুভাষমুখী এসি ট্রেনে যান্ত্রিক ত্রুটি নজরে আসে চালকের। নিরাপত্তার কারণে সব যাত্রীকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে ইঞ্জিনিয়ারেরা এসে যান্ত্রিক ত্রুটি সারাই করেন। এর জেরে দমদম এবং কবি সুভাষের মধ্যে প্রায় আধ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। এ সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিরিশ পার্ক ও কবি সুভাষের মধ্যে ট্রেন চালানো হয়। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বেলা সাড়ে ১১টার পরে দমদম ও কবি সুভাষ স্টেশনের মধ্যে ট্রেন চলাচল ফের স্বাভাবিক হয়।
মেট্রো-কর্তারা জানান, যাত্রাপথ টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া পর্যন্ত বাড়ার পরে যাত্রী-সংখ্যা অনেক বেড়েছিল। মেট্রোর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, শেষ তিন মাসেই গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ যাত্রী বেড়েছে। এক দিকে পরিকাঠামো ছাড়া যাত্রাপথ বাড়ানো, অন্য দিকে যাত্রীদের সাধারণ রেকে উঠতে না চাওয়া এই দু’টি বিষয় এখন সাঁড়াশির মত গলা চেপে ধরেছে মেট্রো-কর্তৃপক্ষের। মেট্রো সূত্রের খবর, যে সময়ের (৫ মিনিট) ব্যবধানে এখন মেট্রো চালানো হচ্ছে, তাতে মেট্রোর মোট ২৩টি রেক প্রয়োজন। মেট্রোর হাতে এখন মোট ২৭টি রেক। তার মধ্যে ১৩টি এসি। বাকিগুলি সাধারণ। এই সাধারণ রেকগুলির মধ্যে ৭টির গড় আয়ু শেষ। শীঘ্রই এগুলি বসিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ওই ৭টি বাদ দিতে গেলে তিনটি রেক কমে যাবে। তাতে আরও গোলমাল বাড়বে। আবার শুধু বাতানুকূল রেক দিয়ে মেট্রো চালানোও সম্ভব হচ্ছে না। তাতেও প্রয়োজন আরও ন্যূনতম ১০টি রেক। কবে আসবে, রেলের কোনও কর্তাই জানেন না। ফলে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে।
কিন্তু অনুরোধ করে কী বাতানুকূল রেকে যাত্রী ওঠা বন্ধ করতে পারবেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ? না কি পরিকাঠামো তৈরির জন্য মেট্রোর ভাড়া বাড়ানো হবে? এখন সেটাই দেখার।
|