শপথ নিলেন নয়া প্রেসিডেন্ট
ফের সেনাবাহিনীর হাতে ফারাওয়ের দেশ
ফের সেনার হাতেই মিশর। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসি গদিচ্যুত হওয়ার পরে দায়িত্ব নিচ্ছেন সাংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতি আদলি মনসুর। কিন্তু, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপেই সরেছেন মুরসি। সংবিধান স্থগিত রাখা, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণাও করেছে তারাই। কাজেই প্রকৃত ক্ষমতা কাদের হাতে তা নিয়ে সন্দেহ নেই সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষেরই।
আজ অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন আদলি মনসুর। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত মনসুরের সঙ্গে আগে কোনওভাবেই যোগ ছিল না রাজনীতির। ফলে, মিশরের ইতিহাসের এই অস্থির সময়ে তিনি নামে মাত্র রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা অনেকের। ঘোষণা অনুযায়ী, এখন আমলাদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবেন মনসুর। পরে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন মানুষ। নির্বাচনের দিনক্ষণ কত দ্রুত স্থির করা হয় তা থেকেই সেনাবাহিনীর প্রকৃত উদ্দেশ্য বোঝা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৯৫০-এর দশকে রাজা ফারুককে সরিয়ে মিশরে ক্ষমতায় এসেছিলেন তরুণ সেনা অফিসার গামাল আবদেল নাসের। তার পরে হোসনি মুবারকের জমানা পর্যন্ত একনায়কতন্ত্রই চলেছে মিশরে। আর সেই ব্যবস্থার রক্ষক ছিল সেনাবাহিনী। মুবারক-বিরোধী বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে ওঠার পরে জনতার পাশে দাঁড়ায় সেনা। গদি হারান মুবারক। এক বছর আগে মুরসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও ক্ষমতার অলিন্দ থেকে সরতে চায়নি সেনাবাহিনী। মুরসিকে সরাতে ফের সেই সেনাকেই ক্ষমতার কেন্দ্রে টেনে এনেছেন তাঁর বিরোধীরা।
মহম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাহরির স্কোয়ারে জনতার উল্লাস।
গোটা দেশের মতোই এখন অনিশ্চিত মুরসির ভাগ্যও। তিনি সামরিক হেফাজতে আছেন, এ ছাড়া প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে আর কিছুই জানা যাচ্ছে না। মুবারকের আমলে নিষিদ্ধ ছিল মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড। ফলে, জেল ও আত্মগোপন করে থাকাতেই বেশি অভ্যস্ত মুরসি। অনেকের মতে, ফের সেই জীবনেই ফিরতে হতে পারে তাঁকে। কিন্তু, এখনও মুরসি তথা ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থন রয়েছে মিশরীয় সমাজের একটি অংশের। ফলে, নতুন সরকারে ব্রাদারহুডের স্থান না হলে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন মনসুরও। তাই শপথ গ্রহণের পরে মুরসি-বিরোধীদের যেমন প্রশংসা করেছেন, তেমনই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছেন মুসলিম ব্রাদারহুডের দিকেও। আজ কায়রোয় সাংবিধানিক আদালতের সামনে শপথ নেন মনসুর। তার আগেই রাজধানীর আকাশে একাধিক বার দেখা দিয়েছে সামরিক বিমান। মনসুরের মতে, মুরসি-বিরোধীরা মিশরের বিপ্লবকে সঠিক পথ দেখাচ্ছেন। আবার মুসলিম ব্রাদারহুডও মিশরীয় সমাজেরই অঙ্গ। তাদের সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে।
ততক্ষণে মুরসি-বিরোধী বিক্ষোভের কেন্দ্র তাহরির স্কোয়ার ফেটে পড়েছে আবেগে। আর প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের সামনে চোখের জল ফেলছেন মুরসির সমর্থকরা। মিশরে রাজনৈতিক বিভেদ আজ কতটা তীব্র, তা-ই বুঝিয়ে দিল এই চিত্র। মুসলিম ব্রাদারহুডের দুই শীর্ষ নেতার গ্রেফতারিতে সমস্যা আরও বেড়েছে। তবে সরকারি আইনজীবীদের দাবি, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে কয়েক জন মুরসি-বিরোধীর হত্যায় দায়ী ওই দুই নেতা।
এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়েছে আমেরিকা। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মুরসি সরলেও তাঁর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ হয়েছে। কার্যত বিক্ষোভকারীদের দাবিরই ‘মর্যাদা রক্ষা’ করেছে সেনা। ফলে, ঘটনাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘সামরিক অভ্যুত্থান’ বলা যায় কি না তা এখনও স্থির করে উঠতে পারেননি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। গণতন্ত্রের পথে ফেরার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মিশরের জেনারেলরা।
সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আদলি মনসুর।
মুবারকের পূর্বসুরি আনোয়ার সাদাতের আমল থেকেই পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার অন্যতম মিত্র দেশ মিশর। প্রতি বছর কোটি কোটি ডলারের আর্থিক সাহায্য পায় তারাযার বেশিরভাগই ব্যয় হয় সামরিক খাতে। মার্কিন মিত্র ইজরায়েলের সঙ্গে প্যালেস্তাইন-সহ আরব দুনিয়ার বিরোধের ক্ষেত্রেও ভারসাম্য বজায় রাখার কাজ করে মিশর।
সামরিক অভ্যুত্থানের কথা স্বীকার করলে মিশরকে মার্কিন সাহায্য বন্ধ করার জন্য চাপ আসতে পারে ওবামা প্রশাসনের উপরে। তার ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে। তাই আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে আমেরিকা। ওবামা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “মিশরে সেনাবাহিনীর কার্যকলাপে আমি উদ্বিগ্ন। এই ঘটনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলবে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছি।”
বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় ভারতও। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন জানিয়েছেন, মিশরে এখন ৩ হাজার ভারতীয় রয়েছেন। সে দেশে সক্রিয় ৫০টি ভারতীয় সংস্থা। তাদের স্বার্থরক্ষার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ভারত। কায়রোর দূতাবাস প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাঁর বক্তব্য, “মিশরের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমরা মিশরে ২৫ জানুয়ারির বিপ্লব (মুবারক-পতন) ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানিয়েছিলাম।” আকবরুদ্দিনের মতে, আলোচনার পথে হেঁটে সমস্যার সমাধান করা উচিত সব পক্ষের।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, মিশরের সঙ্গে গত এক বছরে সম্পর্ক বেশ কিছু দূর এগিয়েছিল। একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির কথাও ভাবছিল দু’দেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুরো বিষয়টিই বানচাল হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। পাশাপাশি মুসলিম ব্রাদারহুড মূল ধারার রাজনীতিতে স্থান না পেলে মিশর মৌলবাদের দিকে ঝুঁকতে পারে বলেও ধারণা বিদেশ মন্ত্রকের একাংশের।
ফারাওয়ের দেশ কোন পথে হাঁটে, সে দিকে এখন তাই তাকিয়ে গোটা বিশ্বই।
ছবি: এএফপি

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.