মার্কিন সেনা সরার অপেক্ষা
অস্ত্র কিনতে মাদকের ভাণ্ডার
গড়ছে তালিবান, উদ্বিগ্ন দিল্লি
তঙ্ক ছড়াচ্ছে আফিম উপত্যকা!
আগামী বছরের গ্রীষ্মে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর সেই আতঙ্ক আরও কয়েক গুণ বাড়বে বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। ওই সময় থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। এই দুশ্চিন্তার মূলে রয়েছে কাবুলে তালিবান তথা আল কায়দার মদতপুষ্ট আন্তর্জাতিক মাদকচক্র। খবর বলছে, বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার এক গুদামে গোপনে জমা হচ্ছে আফগানিস্তান থেকে আনা মাদক-ভাণ্ডার। সেনা প্রত্যাহারের পর বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র কিনতে এই মাদকের ভাঁড়ারকে কাজে লাগানোর কৌশল নিয়েছে তালিবানের একটা অংশ।
ইন্টারপোল এবং বিদেশ মন্ত্রকের গোয়েন্দা বিভাগ-সূত্রে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট আসায় রক্তচাপ বেড়েছে সাউথ ব্লকের। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমান মাদক উৎপাদন এবং পাকিস্তানের সহায়তায় তা মজুত ও চোরাচালান গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরির সঙ্গে আলোচনা করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন।
গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, উত্তর কোয়েটার কাছে কিলা সঈফুল্লাহ এলাকায় তৈরি করা হয়েছে একটি বিশাল গুদাম। বাইরে থেকে তা খেজুর-আখরোটের গুদাম। কিন্তু আসলে সেখানে জমা হচ্ছে আফগানিস্তান থেকে আনা মাদকের পাহাড়। স্থানীয় অফিসারদেরই এতে মদত রয়েছে বলে সূত্রের দাবি। ওই গুদামে বিশেষ ভাবে পরিশ্রুত করে রাখা হচ্ছে চরস, গাঁজা, আফিম এবং অন্যান্য মাদক, যাতে তা সহজেই ছোট ছোট প্যাকেটে ভরে ভারতে চালান করে দেওয়া যায়।
এমনিতে এখন আফগানিস্তান থেকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রুট দিয়ে মাদক পাচার হয়ে থাকে। বিশেষত ভারতে মাদক পাচারের জন্য কাবুল থেকে জালালাবাদ, খাইবার পাস, পেশোয়ার, ইসলামাবাদ হয়ে লাহৌর পর্যন্ত একটি রুটকে সক্রিয় করে তোলা হয়েছে। লাহৌরে আসার পর সেই মাদক চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়ে অমৃতসরে। সেখান থেকে ছড়িয়ে যায় ভারতের নানা প্রান্তে। এ ছাড়া, অন্যান্য রুটের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তানের উত্তরে তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান (এমনকী রাশিয়াও) এবং পশ্চিমে ইরান। বস্তুত, আফগানিস্তানের দক্ষিণের রাজ্যগুলির মোট উৎপাদনের দুই-তৃতীয়াংশই এখন দাঁড়িয়েছে মাদক চাষ। ২০০৯ সালে আফগানিস্তানে মাদক উৎপাদন হত ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন ২৪ হাজার হেক্টরে মাদক চাষ হচ্ছে। এবং এই পরিধিটাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদক-বাণিজ্যের ঘাঁটির সংখ্যাও।

কিন্তু বালুচিস্তানের ওই ভাণ্ডার সম্পূর্ণ অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টের দাবি। সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে সতর্ক করে তাতে বলা হয়েছে ‘খুব সম্ভবত ২০১৪-য় বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর আন্তর্জাতিক বাজারে ওই মজুত করা মাদক বিক্রি করে ব্যাপক হারে অস্ত্র কেনা এবং নাশকতার ছক নিয়ে এগোচ্ছে তালিবানের একটি গোষ্ঠী।’ আইএসআই-এর একটি অংশও গোটা পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত বলে সূত্রের দাবি। কাজেই পরবর্তী কালে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি কাশ্মীর প্রশ্নে ছায়াযুদ্ধ বাড়াতে সক্রিয় হবে বলেও আশঙ্কা থাকছে দিল্লির।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় এসে ভারতের উদ্দেশে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছেন, এটা নিঃসন্দেহে সুখবর। কিন্তু সে দেশের সেনা, আইএসআই এবং বিশেষত উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার মাথারা যে নওয়াজের অঙ্গুলিহেলনে চলবে, এমন আদৌ আশা করা হচ্ছে না। কারণ, মাদকের ভাঁড়ার তো তৈরি হচ্ছে পাকিস্তানেই। গোয়েন্দা রিপোর্টে জনৈক ফারহাত আসাদুল্লা খানকে বলা হয়েছে চোরাচালানের অবিসংবাদী ‘ডন’। কোয়েটায় তার সাম্রাজ্য। সরকারি ভাবে আসাদুল্লা পাক নিরাপত্তাবাহিনীর সন্দেহ-তালিকায় রয়েছে ঠিকই, কিন্তু রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘এই ব্যক্তি সারা দেশে নির্বিবাদে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের সাম্প্রতিক সমীক্ষাও বলছে, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান হয়ে ভারতে মাদক পাচার বেড়েছে ২০১২ থেকেই। হামিদ কারজাই সরকারের মাদক বিরোধী দফতরের উপমন্ত্রী মহম্মদ ইব্রাহিম আজহার সম্প্রতি বলেন, “ইরান এবং তুরস্ক সীমান্তে বাধার কারণে এখন পাকিস্তানের মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশে মাদক পাচার করা হচ্ছে।” এমনকী খোদ কারজাইয়েরও অভিযোগ, কাতারে নতুন খোলা অফিসটি থেকে একাধারে পাক সেনা, হক্কানি গোষ্ঠী এবং আইএসআই-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলছে তালিবান। অফিসটি খোলার সময়ে তালিবান মুখপাত্র শান্তি আলোচনার কথা বলেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ক্রমশ তা নিয়েও যথেষ্ট জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় সেনা প্রত্যাহারের পর তালিবানের সক্রিয়তা কোন পর্যায়ে পৌঁছবে, তা নিয়ে এখন থেকেই উদ্বেগ বাড়ছে বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা কর্তাদের।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.