সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে দেখতে ভিড়ে উপচে পড়ল বালুরঘাট আদালত চত্বর। দুই অভিযুক্তকে দেখতে গিয়ে সেই ভিড়ে পুলিশের ধাক্কা খেয়ে আন্দোলনে নামলেন আইনজীবীরাও। অবশেষে অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হলেও হঠাৎ খেয়াল পড়ে, তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়নি। ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারক দীপালি সিংহ শ্রীবাস্তব। শেষ পর্যন্ত শুনানির পরে ওই দু’জনকে ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। |
বালুরঘাট আদালতে তোলা হচ্ছে সুদীপ্ত-দেবযানীকে।—নিজস্ব চিত্র। |
সরকারি আইনজীবী দেবাশিস মজুমদার জানান, বালুরঘাটের বিজয়শ্রী এলাকার সঞ্জিত হাঁসদার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই দুই সারদা কর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের মামলা করে। তার শুনানির জন্য আলিপুর জেল থেকে তাঁদের সড়কপথে নিয়ে আসা হয় বালুরঘাট আদালতে।
ভিড় হবে বুঝেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আদালতের আশেপাশে জনতাকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। বেলা ১১টা নাগাদ দুই সারদা কর্তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালত চত্বরে। সরকারি আইনজীবীর ঘরের পাশের ঘরে বসানো হয় তাঁদের। কিন্তু এ সবের পরেও সেখানে উপচে পড়ে ভিড়। অনেকে ঠেলাঠেলি করে ঘরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। |
সুদীপ্ত, দেবযানীকে দেখতে বালুরঘাটে আদালত চত্বরে ভিড়। বুধবার ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত। |
সেই সময়ে ওই আদালতের এক আইনজীবী সারদা-কর্তাদের দেখতে যান। তাঁকে পুলিশ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আদালত চত্বর। বালুরঘাট বার অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতির ডাক দেয়। ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ সৈয়দ নুরুল হোসেন আইনজীবীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। দুঃখপ্রকাশ করেন এএসপি জ্যাকলিন দর্জি। এর পরেও অবশ্য বৈঠকে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়, কোনও আইনজীবী অভিযুক্তদের হয়ে দাঁড়াবেন না। তবে বিকেল ৩টা নাগাদ মামলার শুনানি শুরু হলে আইনজীবীরা শেষ পর্যন্ত কাজে যোগ দেন। এর পরেই অভিযুক্ত ওই দুই সারদা কর্তাকে ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াই আদালতে হাজির করানো হয়েছে জানতে পেরে বিচারক পুলিশকে ভর্ৎসনা করে বলেন, “এ সব কী হচ্ছে? আসামিদের মেডিক্যাল-টেস্ট না করিয়ে কেন এনেছেন? সকাল থেকে অনেক ‘নাটক’ হয়েছে।”
বিচারকের নির্দেশ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে দু’জনের ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। তাঁদের দুপুরের খাবারও দেওয়া হয়। সুদীপ্ত খেয়েছেন চা-বিস্কুট, দেবযানী মাছের ঝোল-ভাত।
এর পরে বিচারকের সামনে হাজির করানোর পরে কাঠগড়ায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন সুদীপ্ত। পরনে সাদা ফতুয়া ও পাজামা। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দেবযানী। তাঁর পরনে ছিল খয়েরি রঙের চুড়িদার। দু’জনকে অবশ্য কোনও কথা বলতে দেখা যায়নি। |