মালদহের গাজলে বোমা বিস্ফোরণে জখম এক রিকশাচালককের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে নিহত ব্যক্তির নাম শ্যামল পাল (৩৩)। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে জখম অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়ার পথে বুধবার সকালে রায়গঞ্জের কাছে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে গাজলে বোমা বিস্ফোরণ হয়।
বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত ১ জনের মৃত্যু এবং ১১ জন জখম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে পুলিশ এখনও বিস্ফোরণের কোনও কিনারা করতে পারে নি বলে অভিযোগ। এদিকে বোমা বিস্ফোরনের ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে, গাজলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বুধবার সকালে সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রেস পৃথক পৃথকভাবে বিস্ফোরণের ঘটনার ধিক্কার জানিয়ে মিছিল বের করে। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিও জানানো হয়েছে। |
নিহত শ্যামল পালের শোকার্ত স্ত্রী। |
সিপিএমের পক্ষ থেকে বোমা বিস্ফোরণে মৃত রিকশাচালকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক জন মহিলা প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিস্ফোরণের সময় ওই মহিলা ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন। জনবহুল গাজলের বিদ্রোহী মোড়ে বোমা বিস্ফোরনের ঘটনায় কি ধরণের বোমা দুষ্কৃতীরা ব্যবহার করেছে তা দেখতে কলকাতা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল মালদহে আসছে। বিস্ফোরণস্থলটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।”
প্রতক্ষ্যদর্শী পুলিশকে জানিয়েছে, একটি বাইকে চেপে তিনজন যুবক এসে রাস্তায় বোমা ছোড়ে। তিন যুবকের মধ্যে যে বসেছিল সেই বোমাটি ছোঁড়ে বলে জানা গিয়েছে। তাকে চিহ্নিত করা সম্ভব বলে প্রতক্ষ্যদর্শী মহিলা পুলিশকে জানিয়েছে। সেই যুবকের বিবরণ শুনে ছবি আঁকার জন্য কলকাতা থেকে শিল্পীকে আনা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর তিন যুবকের মধ্যে এক জনের বাড়ি গাজল এলাকাতেই। |
গাজলে বোমা বিস্ফোরণের জায়গা বুধবার ভিড় করে দেখছে স্কুলপড়ুয়ারা। |
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে এলাকার কাউকে লক্ষ্য করেই দুষ্কৃতীরা বোমা ছোড়ে। যাকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছিল তার খোঁজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “বোমা বিস্ফোরণের পেছনে কোনও ব্যবসার কারণ রয়েছে নাকি রাজনৈতিক কারণ সেটি দেখা হচ্ছে। তবে যে বোমাটি ফেটেছে তার তীব্রতা এতটাই ছিল যে ওই বোমার তিনটি স্প্লিন্টার পেটে ঢুকে রিকশাচালক শ্যামল পালের মৃত্যু হয়েছে। এর পেছনে কেএলওর জঙ্গি গোষ্ঠীর হাত রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বোমা বিস্ফোরণের সময় বিদ্রোহী মোড়ে যাত্রী ধরার অপেক্ষায় বসে ছিলেন রিকশাচালক শ্যামলবাবু। তিনি সহ আরও ১১ জন জখন হন। সকলকেই প্রথম গাজলে তারপর সেখান থেকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতলে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে শ্যামল পালকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সেই মতো এদিন সকালে শ্যামল পালকে শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যদিও রায়দঞ্জের কাছাকাছি এলাকায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এ দিকে বোমা বিস্ফোরণে মৃত শ্যামলবাবুর একটি দেড় বছরের শিশুপুত্র রয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আশন্তিদেবী।
জেলা পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গাজলের বিদ্রোহী মোড় রাত ৮ টা ১০ নিমিট নাগাদ বাজার ও রাস্তায় অন্তত শতাধিক বাসিন্দা ছিলেন। ভিড়ে ঠাসা বাজার এলাকায় বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জখম উত্তম বর্মন বলন, “অনান্য দিনের মতো আমি বিদ্রোহী মোড়ে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে উঠল। হাতে কিছু একটা উড়ে এসে লাগায় আমি লুটিয়ে পড়ি। এর পর আমার কিছু মনে নেই।”
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বামনগোলা ও হবিবপুর ব্লকে কেএলও জঙ্গি মালখান সিংহ লুকিয়ে ঘোরাফেরা করছেন। মালখান সিংহকে ধরতে বেশ কিছুদিন ধরে জেলা পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগে মালখান সিংহকে গ্রেফতার করতে পুলিশ খুব কাছাকাছি গেলেও সে পালিয়ে যায়। বামনগোলা ও হবিবপুর থেকে পুলিশের দৃষ্টি এড়াতে গাজল থানায় কেএলও জঙ্গিরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটাবে বলে পুলিশের কাছে আগাম খবর ছিল। গাজল থানার পরিবর্তে বাজার এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ। |