উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) ফের প্রভাব বিস্তার করছে বলে সন্দেহ কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দাদেরা। তাঁদের সন্দেহ, মালখান সিংহ, তরুণ থাপা এবং নীলাম্বর রাজবংশীর নেতৃত্বে নাশকতার ছকও কষছে কেএলও। গোয়েন্দাদের দাবি, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে টাকা তোলার চেষ্টাও হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। ওই দলের জঙ্গিদের হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল রয়েছে।
বুধবারই কোচবিহার লাগোয়া অসমের বঙ্গাইগাঁও জেলার ফকিরগ্রাম থেকে কেএলও-র এক জঙ্গি সঞ্জিত রায় ধরা পড়েছে। একে-৫৬ রাইফেল, তিনটি ম্যাগাজিন ও ৬০ রাউন্ড কার্তুজ-সহ। অসম পুলিশ জানায়, সঞ্জিত এই অস্ত্রগুলি লুকিয়ে রেখেছিল লেবু ওরফে কেল্টো নামে কেএলও-র এক লিঙ্কম্যানের বাড়িতে। ধরা পড়েছে সে-ও। তার পরেই রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা আরও সতর্ক হয়েছেন। মঙ্গলবার গাজলের বিস্ফোরণেও কেএলও জড়িত বলে সন্দেহ। তাতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, মালখান, তরুণ ও নীলাম্বর যে সক্রিয় হয়েছে, ১৮ জুন উত্তরবঙ্গের পুলিশকর্তাদের তা জানায় কলকাতার রাজ্য গোয়েন্দা দফতর। মার্চেই নেপালের ঝাঁপায় কেএলও-র নতুন সেন্ট্রাল কমিটি তৈরি হয়েছে। কেএলও-র কয়েক জন লিঙ্কম্যানের মোবাইলে কথোপকথনের সূত্র ধরে এই তথ্য সামনে এসেছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে উত্তরবঙ্গের পুলিশ কর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। ওই কেএলও জঙ্গিদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকার খবর এসেছে। জঙ্গিদের ধরতে সবরকম চেষ্টার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
গোয়েন্দারা জানান, কেএলও-র সাংগঠনিক সচিব মালখানকে মালদহ-সহ দুই দিনাজপুর, ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ তরুণকে ডুয়ার্স-সহ জলপাইগুড়ি জেলা এবং অর্থ সচিব নীলাম্বরকে শিলিগুড়ির দায়িত্ব দিয়েছে কেএলও। এর মধ্যে সশস্ত্র অভিযানে নেতৃত্বের দায়িত্বে রয়েছে মালখান ও তরুণ। নীলাম্বর মূলত দেখছে টাকা তোলার বিষয়টি। তবে মালখানই সব থেকে সক্রিয়। বাংলাদেশ সীমান্ত ধরে তার গতিবিধির খবর পৌঁছেছে মালদহ পুলিশের কাছেও। মালদহ জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একটি দল মালদহে যৌথ অভিযানও শুরু করেছে। অভিযানে নেমেছে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশও।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মালদহের বামনগোলার পাকুয়াহাটের বাসিন্দা মালখানের আসল নাম মাধব মণ্ডল। ভুটানের চতুর্থ ব্যাচের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মালখান বরাবর সংগঠনের ‘অ্যাকশন স্কোয়াডে’র প্রথম সারিতে থেকেছে। খুন, অপহরণ, তোলাবাজির অভিযোগে ৪ দফায় তাকে গ্রেফতারও করা হয়। তবে ২০১২ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে মালখান গা ঢাকা দেয়। তরুণ থাপার আসল নাম নারায়ণ রায়। বাড়ি জলপাইগুড়ির বেলাকোবার মন্থনীতে। শিলিগুড়ির খড়িবাড়ির বাসিন্দা মঞ্চুলাল সিংহের সংগঠনে নাম নীলাম্বর রাজবংশী।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কেএলও-র ভাইস চেয়ারম্যান টম অধিকারী ওই তিন জনকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে। অসম এবং উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে কেএলও-র লিঙ্কম্যানের সংখ্যা প্রায় ৫০০। এই পুরো দলটিকে একত্রিত করার চেষ্টা করছে কেএলও। সেই সঙ্গেই গোয়েন্দাদের কাছে খবর, টাকা তুলে উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে অস্ত্র কেনারও চেষ্টা করছে তারা। |