মাওবাদী জাগরী বাস্কে ও রাজারাম সোরেনের পর এ বার কেএলও নেতা জীবন সিংহও মূলস্রোতে ফিরতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চান। বাংলাদেশে আত্মগোপনকারী এই নেতা অনুগামীদের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন।
শুক্রবার কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধীর মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে আলোচনায় বসার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন কেএলও-র কেন্দ্রীয় কমিটির ৮ সদস্য। রাজ্য তো বটেই, কেন্দ্রের সঙ্গেও তাঁরা দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে চান বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। কোচবিহারের জেলাশাসক বলেছেন, “কেএলও-র বেশ কয়েক জন এখনও আত্মসমর্পণ করেননি। তবে তাঁরা মূলস্রোতে ফিরতে আগ্রহী। এই তথ্য জানিয়ে কেএলও-র কয়েক জন সদস্য একটি চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠি মুখ্যসচিবকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে কেএলও কোনও পূর্ব শর্ত ছাড়াই আলোচনায় বসতে চেয়েছে।”
 |
জীবন সিংহ |
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই ৮ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন কেএলও-র সহ-সভাপতি হর্ষবর্ধন বর্মন, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সিংহ, পুলস্ত্য বর্মন, মিল্টন বর্মা, টম অধিকারী, নীলাম্বর রাজবংশী, কালিয়া বর্মা ও মালখান সিংহ। সকলেই জামিন পেয়েছেন। কেএলও-র তরফে টম অধিকারী বলেন, “দাবি আদায়ের জন্য কোনও সশস্ত্র লড়াইয়ের রাস্তায় আমরা আর হাঁটব না। আমরা আলোচনাপন্থী। মুখ্যমন্ত্রী মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরাতে আলোচনার উপরে জোর দিয়েছেন। অনেকে সাড়া দিয়েছেন। আমরাও আলোচনা চাই। আমাদের সংগঠনের চেয়ারম্যান জীবন সিংহও আলোচনা চাইছেন। রাজ্য সরকার আলোচনা শুরু করলে চেয়ারম্যানকে সামিল করা হবে। তাঁকে আনার দায়িত্বও আমরাই নেব।”
পাশাপাশি, আজ, রবিবার জলপাইগুড়ির বেলাকোবায় কেএলও-র তরফে প্রথম জনসভা করা হবে বলে জানান । তিনি জানান, ওই সভায় উত্তরবঙ্গের নানা প্রান্তের বিদ্বজ্জনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাঁদের পরামর্শ নিয়েই আগামী দিনে দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে চাইছেন আলোচনাপন্থী কেএলও-রা।
কেএলও-র আলোচনাপন্থী সদস্যেরা জানান, আপাতত কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবি নিয়ে রাজ্য বা কেন্দ্রকে চাপ দেওয়া হবে না। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেএলও-র ওই নেতারা জানান, বিদর্ভ বা তেলেঙ্গানা ও গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনে সাড়া দেয়নি কেন্দ্র ও রাজ্য। তাই নতুন করে আলাদা কামতাপুর রাজ্যের দাবি তাঁরা সামনে রাখবেন না বলে জানিয়েছেন। কেএলও-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাহাড়ে জিটিএ গঠন নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না। কিন্তু, জিটিএ-তে উত্তরবঙ্গের আদিবাসী-সহ নানা সম্প্রদায়কে সামিল করার চেষ্টা হলে কেএলও-র তরফে প্রতিবাদ জানানো হবে।
এই মুহূর্তে কেএলও-র প্রধান দাবি কী? কেএলও নেতারা জানান, কামতাপুরিদের নিজস্ব ভাষার স্বীকৃতি আদায় হল প্রথম ও প্রধান দাবি। সেই সঙ্গে জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় বেকারত্ব ঘোচাতে করবিহীন শিল্পতালুক গড়া, কোচবিহারে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, দূরদর্শন কেন্দ্র-সহ হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ চালু করার দাবি রয়েছে। |