শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুললেন খোদ চেয়ারম্যান নান্টু পাল। বুধবার কলকাতা থেকে ফিরে পুরসভায় নিজের দফতরে যান নান্টুবাবু। সেখানে বসে ওই শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তোলেন। শীঘ্রই মেয়রের কাছে তিনি ওই দাবি জানাবেন। নান্টুবাবুর প্রশ্ন, ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত যতদিন কংগ্রেস একা বোর্ড চালিয়েছিল সে সময় রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে তারা কত টাকা পেয়েছে? জোটের বোর্ড আসার পর কত টাকা এসেছে? সে সব টাকা দিয়ে কোথায় কী কাজ হয়েছে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তা জানানোর দাবি জানাবেন তিনি। তবে চেয়ারম্যান এভাবে শ্বেতপত্র চাইতে পারেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মেয়র। গঙ্গোত্রী দেবী বলেন, “চেয়ারম্যান এভাবে শ্বেতপত্র দাবি করতে পারেন না।”
দলত্যাগ বিরোধী আইনে নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মেয়র এবং কংগ্রেসের কাউন্সিলররা। আদালতের নির্দেশ মেনে মেয়র এবং নান্টুবাবুর বক্তব্য শোনেন জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিংহ। এর পরেই ১৯ জুন তিনি নান্টুবাবুর কাউন্সিলর পদ খারিজের নির্দেশ দিয়ে মেয়র, পুর কমিশনার এবং নান্টুবাবুকে চিঠি পাঠান। তার বিরুদ্ধে নান্টুবাবু রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হলে অ্যাপিলেট অথরিটি নিযুক্ত করেন। মঙ্গলবার নান্টুবাবুর সঙ্গে কথা বলার পর ‘অ্যাপিলেট অথরিটি’-র তরফে তাঁর কাউন্সিলর পদ খারিজের নির্দেশ স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এর পর এ দিনই নান্টুবাবু শহরে ফেরেন। ২০১১-র জুলাই থেকে ২০১৩ এর মার্চ পর্যন্ত কত টাকা পেয়েছে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি করেন নান্টুবাবু।
মেয়রের কাছে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে দাবি জানাবেন বলে নান্টুবাবুর জানানোয় তা নিয়ে বির্তক তৈরি হয়েছে। কারণ তৃণমূল কাউন্সিলররা মেয়রকে মানতে নারাজ। কিন্তু নান্টুবাবু গঙ্গোত্রী দত্তের কাছে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানাবেন। তিনি বলেন, “মেয়রের চেয়ারে যিনি বসে আছেন তাকেই তো জিজ্ঞেস করব। দল কী করবে সেটা অন্য বিষয়।” মেয়রের বিষয়টি নিয়ে কৃষ্ণ পাল বলেন, “সরকারকে জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।”
অন্যদিকে বাজেট নিয়ে কী হবে তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে পুরভবনে। নান্টুবাবু জানান, কোনও বাজেট বৈঠক হবে না এই মুহূর্তে। নান্টুবাবু বলেন, “মাসিক অধিবেশনের জন্য সাত দিন আগে নোটিশ করতে হয়। কিন্তু এখন আর সময় নেই।” তবে পুরসভায় আর কোন মাসিক অধিবেশন করতে দেবে না বলে জানান দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের মহাসচিব কৃষ্ণ পাল বলেন, “পুরসভায় কোন মেয়র নেই তাই মাসিক অধিবেশন হবে না।” তবে যে বৈঠকে মেয়রের অপসারণ প্রস্তাব আসে তা আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে নান্টু পাল বলেন, “মেয়রের অপসারণের জন্য যদিও বিশেষ বৈঠক ডাকা উচিত। তবে মুলতুবি সভায় গৃহীত প্রস্তাব ভোটাভুটিতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
সমস্ত পরিস্থিতি দেখে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান মেয়র। বাজেট নিয়ে কি করবেন তা নিয়ে গঙ্গোত্রী দেবী বলেন, “আইন অনুযায়ী কাজ করব।” পাশাপাশি মেয়রের দাবি, নান্টু পালের স্থগিতাদেশের কোন চিঠি পুরসভায় আসেনি। বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম বলেন, “পুরসভায় অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। আর এই পরিস্থিতি কাটাতে নির্বাচন ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। যদি কোন বিকল্প থাকে তা ওই দুই দল বলে দিক।”
|