পুলিশ মিলবে কোথায়, থানা ভাগ ঘিরে প্রশ্ন প্রকট
বারাসত ভেঙে দু’টো আলাদা থানা তৈরির প্রস্তাব আট মাস আগে ফিরিয়ে দিয়েছিল রাজ্যের অর্থ দফতর। এখন সেই বারাসত ভেঙেই চারটে থানা করতে তারা তাগাদা দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র দফতরকে, যার পিছনে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য ঘোষণার ভূমিকা দেখছে প্রশাসনের একাংশ। কিন্তু রাজ্যে থানা বিভাজন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ-পরিকাঠামো-অর্থের সংস্থান কী ভাবে হতে পারে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে স্বরাষ্ট্র মহলেই।
উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থানাকে টুকরো করার পরিকল্পনার সূত্রপাত দু’বছর আগে, রাজীব-দাস হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “অপরাধ-মানচিত্রে বারাসত পুরনো নাম। ২০১১-র ফেব্রুয়ারিতে দিদিকে বাঁচাতে গিয়ে রাজীব দাস খুন হওয়ার পরে সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কার্যত নগ্ন হয়ে পড়ে। সে বছরই বারাসত ভেঙে মধ্যমগ্রামে আর একটা থানা গড়ার জন্য রাজ্য পুলিশের তরফে প্রস্তাব যায় স্বরাষ্ট্র দফতরে।”
তবে স্বরাষ্ট্র দফতরের হাত ঘুরে প্রস্তাবটি অর্থ দফতরে পৌঁছানোর পরে উদ্যোগ থমকে যায়। কারণ, প্রকল্প-রিপোর্টে ‘ঘাটতি’র যুক্তি দেখিয়ে ফাইল ফেরত পাঠিয়ে দেয় অর্থ দফতর। নতুন থানা তৈরির প্রক্রিয়া কার্যত চলে যায় হিমঘরে। কিন্তু এ বার কামদুনি-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং ঘোষণা করেছেন, বারাসত ভেঙে আর একটা শুধু নয়, তৈরি হবে আরও তিন-তিনটে থানা মধ্যমগ্রাম, শাসন ও দত্তপুকুর। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে তাই হুড়োহুড়ি পড়েছে মহাকরণে।
প্রক্রিয়া কত দূর এগোল?
প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, “জমির মৌজা ধরে থানার সীমানা নির্দিষ্ট হয়। সে কাজ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত যে হেতু বিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে না, তাই উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসককে দ্রুত সীমানা চূড়ান্ত করার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।” তত দিন ফাঁড়িতেই বসবে নতুন থানা। প্রশাসনের খবর: শাসন-মধ্যমগ্রাম-দত্তপুকুরে এখন পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। আপাতত সেগুলোর বাড়িতে থানা চালু হবে। পরে জমি নির্দিষ্ট হলে সেখানে থানা সরানো হবে।

সুরক্ষা-হার
রাজ্য থানা পিছু মানুষ
অন্ধ্রপ্রদেশ সাড়ে ৫০ হাজার
মহারাষ্ট্র ১ লক্ষ ৬ হাজার
বিহার ১ লক্ষ ৮ হাজার
পশ্চিমবঙ্গ ১ লক্ষ ৮০ হাজার
বস্তুত ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার আবশ্যিকতা মাথায় রেখে গোটা রাজ্যেই বহু থানা ভেঙে নতুন থানা গঠনের প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়েছে মহাকরণের পুলিশ-প্রশাসন। এক পুলিশকর্তা বলেন, “অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কোন কোন থানা ভাঙা জরুরি, তা জানতে সব জেলার এসপি’র কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছিল।” এবং সেই হিসেব অনুযায়ী, ফি বছর ২৪-২৬টি থানা ভাঙার প্রস্তাব এসেছে। আগামী চার বছর এই হারে থানা বিভাজনের প্রক্রিয়া জারি থাকলে তবেই আইন-শৃঙ্খলারক্ষা তুলনায় সহজ হবে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তাদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য: জনসংখ্যা ও অপরাধের সংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বিহার, মহারাষ্ট্র বা অন্ধ্রের তুলনা টানা হয়। কিন্তু ওই সব রাজ্যে এক-একটা থানার উপরে গড়ে যত মানুষের সুরক্ষার ভার (জনতা-থানা অনুপাত), পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় তা কম। প্রয়োজনীয় থানার পাশাপাশি এ রাজ্যে পুলিশের সংখ্যাও যথেষ্ট কম বলে দাবি ওই পুলিশকর্তাদের।
এই পরিস্থিতিতে বারাসতে থানা বিভাজনের প্রক্রিয়ার সূচনা পুলিশমহলে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছে। অন্য দিকে নতুন নতুন থানা খোলার জন্য টাকার জোগাড় হবে কী করে, তা ভেবে চিন্তায় পড়েছেন স্বরাষ্ট্র-কর্তারা। পুলিশের হিসেবে, বেতন, গাড়ি, জ্বালানি-সহ বিভিন্ন খাতে থানাপিছু মাসে তিন-চার কোটি টাকা খরচ। নতুন ভবন বানাতে হলে অঙ্কটা আরও বাড়বে। কোষাগারের টানাটানিতে আদৌ তা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নটা প্রকট হয়ে উঠছে। নতুন নতুন থানায় পর্যাপ্ত পুলিশ জোগানো যাবে কী ভাবে, সংশয় রয়েছে তা নিয়েও। কী রকম?
স্বরাষ্ট্র দফতরের তথ্য বলছে, গত দু’বছরে পুলিশে হাজার চারেক কনস্টেবল নিয়োগ হলেও থানায় থানায় ইন্সপেক্টর, সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টরের (এএসআই) সংখ্যা দিন দিন কমছে। রাজ্য পুলিশে বর্তমানে অনুমোদিত পদের চেয়ে ইন্সপেক্টর কম ২৩৫ জন। এসআই এবং এএসআইয়ের ঘাটতি যথাক্রমে প্রায় ১৬০০ ও ২২০০। অথচ মামলার তদন্ত থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা কিংবা থানার প্রশাসনিক কাজকর্ম সামলানোর ভার মূলত ওঁদেরই। যেখানে চালু থানাতেই অফিসার বাড়ন্ত, সেখানে নতুন থানার জন্য অফিসার কোথা থেকে মিলবে, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র-সূত্রে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। এর সুরাহা কী?
এক পুলিশ-কর্তা বলছেন, “চারশো এসআই নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। প্রশিক্ষণ শেষ হলেই তাঁদের বিভিন্ন থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আপাতত জেলার অধিকাংশ পুলিশ নিয়ে নতুন থানা চালু হবে।”
যদিও পরিকল্পনাটি কতটা কার্যকর হবে, পুলিশেরই একাংশ সে নিয়ে সন্দিহান। “এসআই নিয়োগের প্রক্রিয়া সবে শুরু হয়েছে। লিখিত পরীক্ষা ও শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের পরে ন’মাসের প্রশিক্ষণের পালা। সে সব সেরে যখন চারশো নতুন এসআই মোতায়েন হবেন, তত দিনে কম করে দেড়শো এসআই অবসর নিয়ে নেবেন।” মন্তব্য এক অফিসারের।
অর্থাৎ অফিসারের ঘাটতি থেকেই যাবে মনে করছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। মহাকরণের এক কর্তা বলেন, “জনসংখ্যা ও কাজের পরিধির ভিত্তিতে ২০০৮-এ রাজ্যের থানাগুলোকে শহুরে, আধা শহুরে ও গ্রামীণ তিন ভাগে ভাগ করেছিল সরকার। বলা হয়েছিল, শহুরে থানায় ১১০, আধা-শহুরেতে ৭৫ ও গ্রামীণ থানায় অন্তত ৪৫ জন পুলিশ থাকতে হবে।” ঘটনা হল, ভাঁড়ারে পর্যাপ্ত বাহিনী না-থাকায় হাওড়ার নিশ্চিন্দা, বেলুড়, দাশনগরে নতুন থানা চালু হলেও ৩০ জনের বেশি পুলিশ দেওয়া যায়নি। দিঘা-বালুরঘাটে বিজ্ঞপ্তি জারি করেও চালু করা যায়নি রেল পুলিশের নয়া থানা। বারাসতের থানা ভাগ ঘিরেও প্রশ্ন তাই থেকেই যাচ্ছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.