পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা
সরকারকে দুষে আন্দোলনের ডাক বিরোধীদের
নিরাপত্তার বন্দোবস্ত কী ভাবে হবে, তার কোনও সুদত্তর নেই। তবু সব জেনেও এক দফায় ৯টি জেলায় ভোট করতে চেয়ে রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ভোটের প্রক্রিয়াকেই অনিশ্চয়তার মুখে নিয়ে গিয়েছে বলে সম্মিলিত ভাবে সরব হল বিরোধীরা। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তুলে ভোট না-হলে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের ডাকও দিয়ে রাখল প্রধান বিরোধী দল সিপিএম।
মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পুরনো অবস্থানই ধরে রেখেছেন। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার আগেই ভোট চেয়েছিল। কিন্তু হারের ভয়ে কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি মিলে ষড়যন্ত্র করে ভোট বানচাল করতে চাইছে! পশ্চিম মেদিনীপুরে পঞ্চায়েতের প্রচারে গিয়ে বুধবার জামবনি ও গোপীবল্লভপুরের জোড়া সভাতেই তৃণমূল নেত্রী এ দিন ফের বলেছেন, “আমরা দু’বছর ধরে চেষ্টা করছি পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক। ওরা (বিরোধী) চায় না ভোটটা হোক। কেন ভয়? ভোট হলে যে ওরা হারবে!” মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, “হারব বলে ভোটে যাব না! এ আবার কী? কই লোকসভা বা বিধানসভা ভোট কি হতে হতে বন্ধ হয়? তা হলে যে পঞ্চায়েত ভোট বন্ধ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছো?”
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের জনসভায় বিমান বসু। বুধবার।—নিজস্ব চিত্র
বিরোধীদের প্রশ্ন, ভোট করার মূল প্রাক-শর্তই হচ্ছে পর্যান্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা। সেই দায়িত্ব রাজ্যের। তা হলে ভোট আটকাতে যাওয়ার দায় কী ভাবে বিরোধীদের হয়? বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছেন, শাসক দল চাইছে, হয় ভোট হবে তাদের শর্তে। অর্থাৎ যত বেশি সম্ভব আসনে বিরোধীদের লড়তে না দিয়ে জোর করে তৃণমূলকে জিততে দিতে হবে! নয়তো ভোটটাই করতে দেওয়া যাবে না! নইলে এক দফায় ৯টি জেলায় ভোট করার সিদ্ধান্ত কেন নিতে গেল রাজ্য? যা থেকে তৈরি হওয়া জট কলকাতা হাইকোর্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াচ্ছে! বুদ্ধবাবুর এই যুক্তির বিপরীতে বিশেষ গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এখনও শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের কাছে পাওয়া যায়নি। স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী থেকে শুরু করে সব নেতাই শুধু বিরোধীদের চক্রান্তের কথাই বলছেন।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেছেন, “নির্বাচন ভণ্ডুল হলে দায়ী থাকবে রাজ্য। এক বছর ধরেই যা ঘটছে, তাতে এটা প্রমাণিত। এখন তারা যে বিরোধীদের চক্রান্তের কথা বলছে, তাতে বুঝতে হবে এটা আসলে সরকারেরই চক্রান্ত! কত বাহিনী চাই, কত তারা দিতে পারবে, এর জবাব রাজ্য কিছুতেই পরিষ্কার করে জানায়নি।” ভোট না-হলে তাঁরা যে রাস্তায় নামবেন, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই সূর্যবাবুর বক্তব্য, “সরকার ভয় পেয়েছে বলেই ভোট ভণ্ডুল করতে চাইছে। রাজ্যে এর প্রতিবাদ হবে।”
একই ভাবে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে এ দিন কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের সভায় ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রী মিলিত ভাবে পঞ্চায়েত ভোট বানচাল করার চেষ্টা করছেন। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৪০ বছর আগে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভাতেও পঞ্চায়েতমন্ত্রী ছিলেন সেই তথ্য উল্লেখ করে বিমানবাবুর মন্তব্য, “১৯৭৩ সালে পঞ্চায়েত আইন অনুমোদিত হলেও ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ভোট হয়নি। যদি ভোট না করার জন্য কাউকে বিশেষ মেডেল দিতে হয়, তিনি সুব্রত মুখোপাধ্যায়! আর নিজের ব্যক্তিগত খুশিমতো কিছু না হলে মুখ্যমন্ত্রী তা বানচাল করেন! ওঁর খুশিমতো পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে না বলে উনি তা বানচাল করার চেষ্টা করছেন।” তবে বিমানবাবুর আশা, এত সব সত্ত্বেও জটিলতা কেটে শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোট হবে। তাঁর আশঙ্কা, “তখন নির্বাচকমণ্ডলী যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে না পারে, তার জন্য তাদের উপরে হামলা হবে!”
ভোট নিয়ে অচলাবস্থার জন্য রাজ্য সরকারের ‘একগুঁয়েমি’কেই দায়ী করছে আরও দুই বিরোধী দল কংগ্রেস এবং বিজেপি-ও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, “৯টা জেলায় এক দিনে ভোট হলে প্রতি বুথে দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ দিতে হবে। সে ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই। তা সত্ত্বেও অনেকগুলি বুথ খালি রেখে ফ্যাসিস্ট পদ্ধতিতে সেখানে ছাপ্পা ভোট দিতেই এমন একগুঁয়েমি করছে রাজ্য সরকার!” ভোট বন্ধ করার জন্য কংগ্রেস-সিপিএম ষড়যন্ত্র করছে বলে মুখ্যমন্ত্রী ও পঞ্চায়েতমন্ত্রীর অভিযোগের জবাবে প্রদীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, “সম্পূর্ণ ভুল! বরং, নির্বাচনের দিনঘোষণা থেকে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে মহাকরণে! প্রথম থেকেই নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে রাজ্য সরকার! কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।”
একই সুরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, “সময়ে ভোট চায় না বলেই রাজ্য সরকার প্রথম দফায় ৯ জেলায় ভোট করবে বলে জেদ ধরে বসে থাকল! দফা বাড়ালে যে পরিমাণ সশস্ত্র বাহিনী রাজ্যের হাতে আছে, তাতেই ভোট হতে পারত। রাহুলবাবুর আরও দাবি, “সময়ে ভোট চায় না বলেই রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক চেষ্টা করেনি। নাম কা ওয়াস্তে একটা চিঠি লিখে দায় সেরেছে!” বিজেপি-র মতে, সারদা-কাণ্ড, নারী নিগ্রহের বেড়ে চলা ঘটনা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি-জনিত পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চাইছে না শাসক দল। তবে কংগ্রেস এবং বিজেপি নেতৃত্ব এ-ও মনে করছেন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য সরকারের দিক থেকে আশ্বস্ত হয়ে তবে কমিশন ভোট প্রক্রিয়ায় এগোলে এমন সঙ্কট তৈরি হত না।
স্বভাবতই বিরোধীদের অভিযোগ মানতে নারাজ শাসক দল। প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বক্তব্য, “আমাদের দলনেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিতে যা বলার বলেছেন। ওটাই দলের বক্তব্য।” মুখ্যমন্ত্রী এ দিনও জঙ্গলমহলের সভায় বিরোধীদের নির্দিষ্ট অভিযোগগুলির জবাব দেননি। বদলে বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “কমিশন যে চতুরতায় সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে, মানুষ তা ভাল চোখে দেখেনি। কমিশন যে রাস্তায় হাঁটল, তা এক কথায় গণতন্ত্রের পরিপন্থী! মানুষ ভোট চান। ভোটের মাধ্যমেই রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে। উন্নয়ন শুরু হয়েছে। আমরা আশাবাদী, সুপ্রিম কোর্ট মানুষের ইচ্ছার সঙ্গে সহমত হবে।” আউশগ্রামে এ দিন প্রচারে গিয়ে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি-র ষড়যন্ত্রের দিকেও সভায় আঙুল তুলেছেন পার্থবাবু। যা বারবারই বলছেন মুখ্যমন্ত্রী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.