অচল হচ্ছে পঞ্চায়েত, সামাল দিতে বিতর্কিত নির্দেশ রাজ্যের
ট্রেড লাইসেন্স নিতে পঞ্চায়েতে এসে বিফল হয়ে ফিরলেন রণজিৎ সামন্ত। কারণ, প্রধান নেই। একই কারণে ছেলের জন্মের সার্টিফিকেটও পেলেন না সানোয়ার আলি মোল্লা। হাওড়ার বাগনান ১ ব্লকের খালোড় পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান শ্রাবন্তী বসুর দাবি, কার্যকাল শেষ হয়ে গিয়েছে বলে তাঁকে জানিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর। তিনি পঞ্চায়েতে আসা বন্ধ করেছেন। প্রধানের অভাবে একাধিক কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হয়রান হচ্ছে জনতা।
খালোড় একটা উদাহরণ। পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, কাল, ২৮ জুন রাজ্যের ২,২৪৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। জুলাইয়ে পঞ্চায়েত সমিতি ও অগস্টে জেলা পরিষদগুলির মেয়াদ শেষ হবে। তাই আপাতত ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে যাবতীয় আর্থিক ক্ষমতা ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) এবং জেলাশাসকদের উপরে ন্যস্ত করতে চায় পঞ্চায়েত দফতর। পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তার দাবি, ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশ জেলায় পাঠানো হয়েছে। দু’-এক দিনের মধ্যেই আর্থিক ক্ষমতা সংক্রান্ত আদেশনামাও জারি করা হবে। তবে এই পদ্ধতিতেও সমস্যা পুরোপুরি কাটবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। কারণ, এমন করা যেতে পারে বলে আইনে নেই।
তা হলে রাজ্য এ পথে হাঁটল কেন? পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েতের কাজকর্ম বন্ধ থাকবে তা তো হতে পারে না। যা অবস্থা, তাতে পঞ্চায়েতগুলো চালাতে অফিসারদের আর্থিক ক্ষমতা দিতেই হবে।” পক্ষান্তরে রাজ্যের প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট না করে এই সরকার ইতিমধ্যেই সংবিধান ভেঙেছে। গোড়া থেকেই রাজ্য সরকার চাইছিল, পঞ্চায়েতের ক্ষমতা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাত থেকে আমলাদের মাধ্যমে নিজেদের হাতে নিতে। এখন সেই কাজটাই তারা করছে।” বাম জমানার আর এক পঞ্চায়েতমন্ত্রী আনিসুর রহমান বলেন, “এ ভাবে নির্দেশ দেওয়ার কোনও নিয়ম নেই। রাজ্য যা করছে, গায়ের জোরে করছে।”
পঞ্চায়েত বন্ধ থাকবে তা তো হতে পারে না। যা অবস্থা, তাতে পঞ্চায়েতগুলো চালাতে অফিসারদের আর্থিক ক্ষমতা দিতেই হবে।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়,
গোড়া থেকেই রাজ্য চাইছিল, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের থেকে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা আমলাদের মাধ্যমে হাতে নিতে। তাই করছে।
সূর্যকান্ত মিশ্র,
হাওড়ার অন্যতম সেরা গ্রাম পঞ্চায়েত খালোড়। গ্রাম পঞ্চায়েতের সশক্তিকরণ প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে সাফল্যের ভিত্তিতে খালোড়কে এই সার্টিফিকেট দিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। অন্য সময়ে এই গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয় গ্রামবাসীদের ভিড়ে গমগম করে। কিন্তু বুধবার থেকে কার্যত অফিসটি সুনসান। যে দু’-চার জন আসছেন, তাঁরাও পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
এ দিন থেকে খালোড়ে বন্ধ হয়েছে ১০০ দিনের কাজ। প্রকল্পের সুপারভাইজার কমলাকান্ত জানা বললেন, “শ্রমিকদের মজুরির বিলে প্রধানকে সই করতে হবে। নতুন প্রধান না আসা পর্যন্ত মজুরির বিলে সই হবে না।” বন্ধ হয়ে গিয়েছে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়াও। এই প্রকল্পে খালোড় গ্রাম পঞ্চায়েত ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের জন্য থোক অনুদান পেয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। মে মাসে টাকা আসার কথা ছিল। এই টাকার ৬০ শতাংশ ডিসেম্বরের মধ্যে খরচ করা না গেলে পরের বছরের অনুদান আটকে যাবে। কিন্তু নির্বাচনের দামামা বেজে যাওয়ায় মে মাসে টাকা আসেনি। টাকা শেষ পর্যন্ত এলেও তা কী ভাবে খরচ করা যাবে তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে বলে জানালেন পঞ্চায়েতের সহায়ক তরুণ মাইতি।
পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে খবর, ইন্দিরা আবাস, বার্ধক্যভাতা, পরিবার সহায়তা প্রকল্পের মতো যেখানেই নতুন করে উপভোক্তা ভোট করতে হয়, পঞ্চায়েত অচল হলে সেগুলির সব নিয়েই সমস্যা হতে পারে। কারণ, উপভোক্তা ভোট করে পঞ্চায়েতগুলিই। খালোড় পঞ্চায়েত কর্মীদের বক্তব্য, “পরিষেবা না পেয়ে মানুষ খেপে গিয়ে ঝামেলা পাকালে আমাদেরই ভুগতে হবে। আশঙ্কায় আছি।” কেন্দ্র ও রাজ্য অর্থ কমিশনের প্রায় হাজার কোটি টাকা এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহায়তায় পঞ্চায়েত সদস্যদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের টাকা পাওয়া নিয়েও সমস্যা হতে পারে। বিডিও মণীশ দাস জানান, কী করণীয় তা জানতে চাইবেন জেলাশাসকের কাছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এমন সমস্যার কথা মাথায় রেখেই সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে ১০০ দিনের কাজ চাইতে হবে বিডিও-র কাছে। ইন্দিরা আবাস, বার্ধক্য ভাতা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিধান কর্মসূচি-সহ যাবতীয় প্রকল্পের ভারও অফিসারদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর, এখানেই আসছে আইনি বিতর্ক। পঞ্চায়েত-কর্তারাই জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েত আইন মোতাবেক মেয়াদ ফুরনোর আগেই নতুন পঞ্চায়েতের সদস্যদের নির্বাচন করে রাখাটা বাধ্যতামূলক। এ বারের মতো পরিস্থিতি হলে কী হবে, তা আইনে বলা নেই। পঞ্চায়েত-কর্তাদের বক্তব্য, সরকার যদি অর্ডিন্যান্স জারি করে পঞ্চায়েত-পরিচালনার ক্ষমতা অফিসারদের দিত, তা হলে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকত না। কিন্তু স্রেফ সরকারি নির্দেশ বলেই মামলার আশঙ্কা রয়েছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.