|
|
|
|
জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের চ্যালেঞ্জ মমতার
সুমন ঘোষ • গোপীবল্লভপুর
কিংশুক গুপ্ত • জামবনি |
তিনি অকুতোভয়। মাওবাদীদেরও ডরান না। বন্দুকের মোকাবিলা করতে পারেন মাইক হাতেই।
মাওবাদীদের ধাত্রীভূমি জঙ্গলমহলে দাঁড়িয়েই এই হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুরে দিনের দ্বিতীয় সভা চলছে। তৃণমূল নেত্রী হাতে মাইক নিয়ে বলে উঠলেন, “মাওবাদীরা বলছে আমি এলে আমাকেও খুন করা হবে। আমি বলছি, একবার নয়, হাজার বার আসব। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলছি, তেমন হলে এই মাঠেই আসুক। আমি বন্দুক, মানে মাইক হাতে দাঁড়িয়ে আছি। আমি বন্দুকে চমকাই না।” জামবনির নুনিয়ায় প্রথম সভাতেও তিনি মাওবাদীদের ‘চ্যালেঞ্জ’ করে বলেন, “তোমরা বন্দুক নিয়ে দাঁড়াও। তোমাদের বন্দুককে স্তব্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা আমরা রাখি।”
ভয় যে তিনি সত্যি পান না, সে কথা এ দিন বুঝিয়েও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গোপীবল্লভপুরে সভা শেষে মঞ্চে গান হচ্ছে বাংলার মাটি, বাংলার জল...। |
|
গোপীবল্লভপুরের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
হঠাৎই মঞ্চ থেকে তরতর করে নেমে গেলেন মমতা। সবাই ভাবলেন, বুঝি গাড়ির দিকে যাবেন। কোথায় কী! মমতা তো মাঠের ফাঁকা অংশে নেমে পড়েছেন! গোপীবল্লভপুরের ছাতিনাশোলে তরুণ সঙ্ঘের মাঠে তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে। হতচকিত পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা ঠাওর করতে পারছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী কোন দিকে যাচ্ছেন। আইজি সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) লক্ষ্মীনারায়ণ মীনা, ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষ সকলেই শশব্যস্ত। মমতার সে দিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। হাসিমুখে ব্যারিকেডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বাঁশের ঘেরাটোপের ওপারে উৎসুক জনতার ভিড়। সব মিলিয়ে মিনিট আটেক জনতার কাছাকাছি ছিলেন মমতা। তারপর গাড়িতে উঠে সোজা মেদিনীপুর সার্কিট হাউস। তবে ওইটুকু সময়েই পুলিশকর্তাদের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটোছুটি করছিলেন। দেখা দেল পুলিশের আধিকারিকেরা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলছেন। জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলের মতো জায়গায় এ ভাবে ফাঁকা মাঠে নেমে পড়াটা যে ঠিক নয়, মুকুল মারফত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সেই বার্তা পৌঁছনোরই চেষ্টা হচ্ছিল। |
আসব বারবার...
|
জামবনির নুনিয়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
আমজনতার ভিড়ে অবশ্য বারবারই দেখা গিয়েছে মমতাকে। তবে এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তো প্রচুর নিরাপত্তা ছিল। মাওবাদী ভীতি যদি নাই থাকবে, তাহলে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের প্রত্যেক নেতা-মন্ত্রীর জন্য জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা কেন?” তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ অবশ্য বলছিলেন, “দিদি প্রচণ্ড সাহসী। আর ওঁর সঙ্গে মানুষের সমর্থন রয়েছে। তাই অবলীলায় মাঠে নেমে পড়তে পারেন।”
এ দিন জামবনির নুনিয়া এবং গোপীবল্লভপুরের ছাতিনাশোল, দু’টি সভাতেই মাওবাদীদের কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মাওবাদীদের সঙ্গে বিরোধীদের ‘আঁতাঁত’ নিয়েও সরব হন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার কাছে গভর্মেন্টের রিপোর্ট আছে, সিপিএম-কংগ্রেসের সঙ্গে মাওবাদীরা হাত মিলিয়ে হঠাৎ করে জঙ্গলমহলে ‘ইনসিডেন্ট’ ঘটানোর চেষ্টা করবে। আপনারা ভয় পাবেন না। আমরা এ সব করতে দেব না। মনে রাখবেন, আমি আপনাদের ইডিওলজির বিপক্ষে কথা বলছি না। কিন্তু গুন্ডামির বিপক্ষে কথা বলছি। আসুন রাজনৈতিক কথাবার্তা যদি বলতেই হয়, রাজনীতির মাধ্যমে আলোচনা হোক।”
তাঁর সরকার বহু মাওবাদীকে জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে
এনেছে, সেকথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যাঁরা ভাল, তাঁরা ফিরে এসেছে, সংসার করছে। যেমন, জাগরী বাস্কে, সুচিত্রা মাহাতো।”
জঙ্গলমহলের মানুষকেও নিশ্চিন্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পরামর্শ, “কেউ ধমকালে, চমকালে ভয় পাবেন না। আমি আছি। আমি আপনাদের পাহারাদার।” আগামী দিনেও তাঁর সরকার জঙ্গলমহলে উন্নয়ন ও শান্তির ধারা বজায় রেখে মাওবাদীদের মোকাবিলা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। |
আজ সূর্যকান্তের তালুকে মমতার সভা
|
জঙ্গলমহলের দু’টি জায়গায় সভা করে বুধবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছিলেন
সার্কিট হাউসে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা
সূর্যকান্ত মিশ্রের নির্বাচনী
এলাকা নারায়ণগড়ের খাকুড়দায় সভা করবেন তিনি। বেলা
একটায় সভা শুরু হবে।
আগের দিন তারই প্রস্তুতির ছবি তুলেছেন কৌশিক মিশ্র। |
পুরনো খবর:
• জেলায় পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী, দু’দিনে মোট তিনটি জনসভা
• হুমকির মধ্যেই আজ জঙ্গলমহলে মমতা |
|
|
|
|
|