চলছে শাসক-বিরোধী তরজা
পঞ্চায়েতের ভবিষ্যৎ কী, আশা-আশঙ্কায় সব পক্ষ
ঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মামলা সুপ্রিম কোর্টে গড়ানোয়, নির্বাচন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হল। আগামী মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে নির্বাচন। ওই দিন নির্বাচন করা সম্ভব হবে তো? জেলায় সব মিলিয়ে বুথের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৪৭। পুলিশের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। কবে প্রয়োজনীয় বাড়তি পুলিশ আসবে? কবে সেই পুলিশ এলাকায় এলাকায় পৌঁছবে? কবেই বা পুলিশি নজরদারি শুরু হবে? এমন একগুচ্ছ প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে জেলা জুড়ে।
তৈরি হয়েছে আশঙ্কা-সংশয়-উদ্বেগ। সঙ্গে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। এই পরিস্থিতির জন্য শাসক দল দুষছে বিরোধীদের। আর বিরোধীরা দুষছে শাসক দলকে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের টিপ্পনি, “কাদা ঘাঁটা হয়ে গেছে। এ জন্য দায়ী রাজ্য সরকারই। শুরু থেকে সরকারের মনোভাবটাই এমন যে, এলোমেলো করে দে মা, লুঠেপুটে খাই! পর্যাপ্ত বাহিনী ছাড়া ভোট হলে যে কী হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।” সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণার মন্তব্য, “রাজ্য সরকার ভোট বানচাল করারই চেষ্টা করছে। ষোলোআনা দখল করতে যা যা করতে হয়, তৃণমূল তাই করছে।” নির্বাচনে তৃণমূলের গোপন অনিচ্ছা আছে বলে দাবি করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবেও। তাঁর কথায়, “নির্বাচন না-হলে ওদের গোপন অনিচ্ছাই সামনে আসবে। সরকার প্রহসন করছে।” তবে, এ সব অভিযোগ উড়িয়ে বিরোধীদেরই বিঁধছে তৃণমূল। দলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতির বক্তব্য, “আমরা শুরু থেকেই ভোট চেয়েছি। কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি একযোগে ভোট বানচাল করার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছে। ওরা চেয়েছিল নির্বাচন যেন না-হয়। কারণ, ওরা তৈরি হতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন, শীতকালে নির্বাচন করতে। তাও ওরা করতে দিল না!”
পশ্চিম মেদিনীপুরে ত্রি-স্তর গ্রাম পঞ্চায়েতে সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৭১১টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৯টি আসনে কোনও প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। এই সব আসনে একজনই প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে আবার ৯৪৬টি আসন গ্রাম পঞ্চায়েতের। বাকি ১৩৩টি পঞ্চায়েত সমিতির। হাতে গোনা কিছু বাদে এই ১ হাজার ৭৯টি আসনের মধ্যে অধিকাংশই তৃণমূলের। বিরোধীদের বক্তব্য, এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, জেলায় কী ধরনের সন্ত্রাস চলছে। গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী দিতে পেরেছে ২ হাজার ৪৯৩টি আসনে। সিপিআই ২৬৮টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএম প্রার্থী দিতে পেরেছে ৬০২টি আসনে। সিপিআই ৬৩টি আসনে।
গড়বেতার মতো জায়গায় সিপিএমকে দূরবীন দিয়ে খোঁজার মতো অবস্থা। গড়বেতা ১ এ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬২টি আসনের মধ্যে একটিতেও সিপিএমের প্রার্থী নেই। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৫টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩টিতে তাদের প্রার্থী রয়েছে। গড়বেতা ৩ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১৫টি আসনের মধ্যে সিপিএমের প্রার্থী রয়েছে মাত্র ৫টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে তাদের প্রার্থী রয়েছে। কেশপুরে গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৩০টি আসনের মধ্যে সিপিএমের প্রার্থী রয়েছে মাত্র ২টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতির ৪৫টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩ টি আসনে তাদের প্রার্থী রয়েছে। জেলার ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত ইতিমধ্যে দখলে এসেছে শাসক তৃণমূলের। এর মধ্যে ১৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিরোধী দলের একজন প্রার্থীও নেই।
এই অবস্থায় নির্বাচন পিছোলে কী হবে, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা। সিপিএমের আশা, নির্বাচন পিছোলে তারা আরও বেশি সংখ্যক আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবে। দলের জেলা সম্পাদক দীপকবাবুর কথায়, “সর্বাত্মক আক্রমণ চলছে। আমাদের বহু কর্মীকে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। জোর করে প্রত্যাহারও করানো হয়েছে। নতুন করে মনোনয়ন পর্ব শুরু হলে প্রার্থীর সংখ্যা তো বাড়বেই। কারণ, প্রতি দিন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে!” অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেনবাবুর প্রশ্ন, “সন্ত্রাসই যদি হবে, তা হলে এতগুলো আসনে ওরা প্রার্থী দিল কী করে? মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই অপপ্রচার।”
সংশয়-উদ্বেগের দোলাচলে রয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী প্রার্থীরাও। মেদিনীপুর সদরের পাঁচখুরী ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন মহম্মদ আকবর খান। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থী ছিল না। ফলে, তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। ইতিমধ্যে বিডিও অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেটও সংগ্রহ করেছেন। নির্বাচন না হলে কী হবে? আকবরের মন্তব্য, “দেখা যাক, কী হয়!” অনিশ্চয়তার কালো মেঘটা যেন কাটছেই না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.