‘নকল সোনা’ বিক্রি, বিপাকে কেন্দ্রীয় সংস্থা |
একটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা থেকে সোনার বাট কিনেছিলেন এক মহিলা। কিন্তু তা থেকে গয়না গড়ানোর জন্য স্যাঁকরার কাছে গিয়ে জানতে পারলেন সেটি নকল। ওই মহিলার অভিযোগ, সংস্থাটির কাছে সে কথা বলতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাঁর বক্তব্যকে আমল দেননি। প্রতিকার চেয়ে তিনি হাওড়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। মামলার রায়ে ওই মহিলাকে ৯ লক্ষ ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাটিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে আদালত তার রায়ে আরও জানিয়েছে, ওই মহিলাকে আসল সোনার বাট দিতে হবে। গত ২৫ জুন রায় দিয়ে এক মাসের মধ্যে তা কার্যকর করতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য এবং আদালতের দুই সদস্য ঝুমকি সাহা ও প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।
হাওড়ার কদমতলার বাসিন্দা ওই গৃহবধূর নাম মানসী নন্দী। মামলার আর্জিতে মানসীদেবী জানান, ২০১১ সালের ৭ জুলাই তিনি এমএমটিসি (মেটাল অ্যান্ড মিনারেল ট্রেডিং কর্পোরেশন)-র কলকাতা শাখা থেকে ৪৮ হাজার ২৩৫ টাকা দিয়ে ২০ গ্রাম ওজনের সোনার বাট কেনেন। একটি প্যাকেটে সিল করে সেটি তাঁকে দেওয়া হয়। কেনার পর দিন থেকেই তিনি সেটি ব্যাঙ্কের লকারে রেখে দেন। এর পরে ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লকার থেকে বাটটি বার করে তিনি হাওড়ার পঞ্চাননতলায় এক স্যাঁকরার কাছে নিয়ে যান গয়না তৈরির জন্য। কিন্তু সোনার বাট পরীক্ষা করে স্যাকরা তাঁকে জানিয়ে দেন, সেটি নকল। আরও সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য মানসীদেবী বাটটি নিয়ে কলকাতার বৌবাজারে একটি নামী সোনার দোকানে যান। ওই দোকান কর্তৃপক্ষও পরীক্ষা করে জানান, বাটটি নকল। এর পরে মানসীদেবী যোগাযোগ করেন এমএমটিসিতে।
মামলার আর্জিতে মানসীদেবী জানিয়েছেন, এমএমটিসি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে তিনি ওই নকল বাটের বদলে আসল সোনার বাট দাবি করেন। কিন্তু এমএমটিসি পাল্টা মানসীদেবীকে জানায়, তাঁকে আসল সোনার বাটই বিক্রি করা হয়েছিল। যে স্যাঁকরার কাছে তিনি গয়না গড়াতে দিয়েছিলেন, তিনিই তা বদলে দিয়েছেন। ফলে এর দায় তাঁরা নেবেন না। মানসীদেবী একাধিক বার এমএমটিসি কর্তৃপক্ষের কাছে যান। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়ে দেন, মানসীদেবী চাইলে দিল্লিতে সংস্থার সদর দফতরে নালিশ জানাতে পারেন। এ কথা শোনার পরেই মানসীদেবী সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যাঁটরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সঙ্গে ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ তিনি হাওড়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন।
এমএমটিসি কেন্দ্রীয় বাণিজ্য দফতরের অধীন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন নিয়ে এই সংস্থা সোনা ও রুপোর বাট ও রুপোর গয়না বিক্রি করে। সদর দফতর দিল্লিতে। সংস্থাটির দাবি, তাদের বিক্রি করা সোনা ৯৯.৯৯ শতাংশ খাঁটি। গত ২০ বছর ধরে তারা সোনা-রুপো বিক্রি করছে বলে সংস্থা সূত্রে খবর। তবে মানসীদেবীর অভিযোগ নিয়ে কলকাতা অফিসের কর্তারা মন্তব্য করতে চাননি।
তবে মামলার মোট পাঁচটি শুনানির প্রতিটিতে হাজির ছিলেন এমএমটিসির প্রতিনিধি। শুনানিতে তাঁদের বক্তব্য ছিল, মানসীদেবীকে আসল সোনার বাটই বিক্রি করা হয়েছিল। মানসীদেবী যখন তা স্যাঁকরার কাছে নিয়ে যান, সিল খোলার সময়ে স্যাঁকরাই সেটি বদলে দিয়েছেন। কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণ দেখে এমএমটিসির এই বক্তব্য উড়িয়ে দেয় আদালত। রায়ে আদালত সাফ জানায়, মানসীদেবীকে নকল সোনার বাটই বিক্রি করা হয়। রায়ে আদালত আরও জানিয়েছে, এমএমটিসি হল কেন্দ্রীয় সংস্থা। ক্রেতাদের কাছে সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা অসীম। তাই এক ক্রেতার থেকে নকল সোনা বিষয়ে অভিযোগ আসার পরে কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা। তা না করে কর্তৃপক্ষ সব দায় চাপিয়েছে ক্রেতার উপরেই। এটা ক্রেতা সুরক্ষা আইনের বিপরীত আচরণ। এর পরেই ক্ষতিপূরণের রায় দেয় আদালত।
|
এই সংক্রান্ত অন্য খবর: বেশি দামে গাড়ি বেচে
ক্ষতিপূরণের সাজা |